মেষ লগ্নের ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য কেমন হয়

যার মেষ লগ্নে জন্ম, তাঁর নিম্নোক্ত ফল হয়ে থাকে:

মেষ লগ্নের বৈশিষ্ট্য

মেষ লগ্নের জাতক সরল, উদার এবং স্পষ্টবক্তা— তার চেহারায় এবং কথাবার্তার মধ্যে একটা তেজস্বিতা ও শক্তির ভাব লক্ষিত হওয়া সম্ভব। সাধারণতঃ, স্পষ্ট এবং নির্ভীকভাবে কাজ করিতে তিনি ভালবাসেন। যে কোন কর্তৃত্বের কাজ বেশ যােগ্যতার সঙ্গে করবার ক্ষমতা তার আছে; কিন্তু কোন নূতন মতলব বের করে কাজ করতে তিনি বিশেষ পটু হবেন না। মেষের জাতকের প্রকৃতি প্রায়ই একটু বেশী মাত্রায় উদার হয়। উদারতার জন্য অনেক সময় তিনি অপব্যয়ও করে থাকেন— ঝোঁকের মাথায় অপাত্রে দান করা তার পক্ষে মােটেই অসম্ভব নয়। মেষের জাতক সাহসী এবং উৎসাহী প্রকৃতির লােক কিন্তু প্রকৃতির মধ্যে একটা উদ্দামতা আছে বলে তার মেজাজ একটু; অসহিষ্ণু বা খিটখিটে হয়ে উঠতে পারে। তার মনে যদি ধর্মভাব আসে তাহলে অনেক ক্ষেত্রে ধর্ম্মোন্মত্ততার আকার ধারণ করে। ধর্মমতকে তিনি সত্য বলে মনে করেন সেই ধর্মের ব্যাপারে তাঁর অত্যধিক গোঁড়ামি এবং অতিরিক্ত মাত্রায় উৎসাহ প্রকাশ পাওয়া সম্ভব। পূর্বাপর প্রচলিত ধর্মের চেয়ে নব প্রবর্তিত অভিনব ধর্মের দিকে তার টান থাকা সম্ভব; ধর্ম, সমাজ, রাজনীতি প্রভৃতি সর্ববিষয়েই তিনি সংস্কারের পক্ষপাতী— কাজেই, প্রচলিত রীতিনীতি, সমাজ, অথবা ধর্মের প্রকাশ্যভাবে বিপক্ষতাচরণ করা তার পক্ষে মােটেই অসম্ভব নয়। তিনি কুলধর্ম্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্মে দীক্ষিত হতে পারেন; কুল-দেবতা বা কুল-গুরু ত্যাগ করে অন্য দেবতার অর্চনা এবং নিজের নির্বাচিত গুরু গ্রহণ তাঁর পক্ষে মােটেই অসম্ভব ব্যাপার নয়। নানা বিষয়ে তার অল্পবিস্তর জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও এবং কাজকর্মের ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট তৎপর হওয়া সত্বেও মানব-চরিত্র সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান তার খুব বেশী হবে না এবং কি করে লােককে স্বমতানুবর্তী করা যায়, সে সম্বন্ধে তার সঠিক ধারণা না থাকাই সম্ভব। মেষের জাতক নিজের স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করতে কখনই পিছ-পাও নন। বিশেষতঃ, রাজনীতিঘটিত অথবা ধর্ম্মঘটিত ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত বিচলিত হয়ে ওঠেন এবং যুক্তিসঙ্গত হেতূ আর না-ই হােক, তিনি নিজের মতামত অন্যলােকের উপর জোর করে চাপাতে চান। মেষের জাতক আদর্শ-বাদী। সব বিষয়েই তিনি মনে মনে একটা আদর্শ খাড়া করেন, আর যে জিনিষ বা যে ব্যাপার তাঁর মতে যে রকম হওয়া উচিত, তিনি অনেক সময় সেই জিনিষ বা ব্যাপারকে বাস্তবিক তাই বলে মনে করেন এবং সেই হিসাবে কাজও করে থাকেন। এ বিষয়ে অনেক সময় আত্ম-প্রতারণা বা মনকে চোখ ঠায়বার ভাব থাকে। মেষের জাতক চঞ্চল, কাজেই তিনি মাঝে মাঝে নিজের মত বদলান; কিন্তু, যতক্ষণ যেটাকে তিনি সত্য বলে জানেন ততক্ষণ সেটার পেছনে অথও বিশ্বাসের সঙ্গে লেগে থাকেন। হঠাৎ পরিবর্তন এবং টপ করে একটা কাজ করে বসা তার একটা স্বভাবের মধ্যে। তিনি পরিবর্তন ভালবাসেন এবং যে কাজেই প্রবৃত্ত হন তার মধ্যে যদি বৈচিত্র্য না থাকে তাহলে, তাতে নিষ্ঠার সঙ্গে লেগে থাকা তাঁর পক্ষে শক্ত। 

মেষের জাতকের মনে খ্যাতি-প্রতিপত্তি লাভের একটা উচ্চাভিলাষ আছে; কিন্তু তা লাভ করবার জন্য তাকে অনেক বাধা-বিঘ্নের সঙ্গে দস্তুর মত লড়াই করতে হয় যাতে তার সমস্ত শক্তি এবং সাহস প্রয়ােগ করা দরকার হতে পারে। ধর্ম এবং রাজনীতি সংক্রান্ত ব্যাপারে অথবা বিজ্ঞান-দর্শন সম্বন্ধীয় ব্যাপারে তার খুব বেশী উৎসাহ লক্ষিত হওয়া সম্ভব এবং সে সম্বন্ধে তিনি যথেষ্ট উদ্যোগীও হয়ে থাকেন; কিন্তু ঐ সব বিষয়ে তার এক একটা বিচিত্র মত বা অদ্ভুত খেয়াল থাকতে পারে। এসব বিষয়ে, নিজের মনােভাব প্রকাশের সময় তার মধ্যে প্রায়ই একটা তীব্রতা বা উত্তেজনা লক্ষিত হয়— যদিও সে উত্তেজনা খড়ের আগুনের মত যেমন দপ করে জ্বলে ওঠে তেমনি সঙ্গে সঙ্গে নিভে যায়, খানিক পরে উত্তেনার চিহ্নমাত্রও থাকে না। মেষের জাতকের ভাগ্য পরিবর্তনশীল। এক কর্মে লেগে থাকা তার প্রায়ই ঘটে ওঠে না; মধ্যে মধ্যে কর্ম্ম-পরিবর্তন হবার যথেষ্ট সম্ভাবনা। এক কাজে তিনি যদিই লেগে থাকতে পারেন, তাহলেও তাকে কর্মের স্থান বহুবার পরিবর্তন করতে হয়। জায়গা-জমি থেকে অথবা জায়গা-জমির কাজে কিম্বা কোন গ্রাম্যশিল্প থেকে তার কিছু কিছু অর্থাগম হতে পারে— তা ছাড়া, নিজের অথবা পুত্রকন্যার বিবাহ সূত্রেও কিছু লাভের সম্ভাবনা আছে। কোন শ্রমশিল্প ( Industry ) অথবা চাষবাসের কাজে তার সুবিধা হওয়া সম্ভব। মেষের জাতক প্রায়ই বেশ প্রতিষ্ঠাশালী হয়ে থাকেন এবং তার উচ্চপদ ও সম্মান লাভ প্রায়ই ঘটে। কিন্তু, উচ্চপদ পেয়ে আবার ফিরে পতন হতে পারে কি উচ্চপদ ও প্রতিষ্ঠা বজায় রাখবার জন্য তাকে দস্তুরমত লড়াই করতে হয়, যদিও তিনি তাতে পিছপা হন না কেন না, লড়াই করবার ক্ষমতা এবং প্রবৃত্তি দুই-ই তার বেশ আছে। আত্মীয়-স্বজন নিয়ে মেষের জাতককে ঝঞ্চাট পােহাতে হয়। তার ভাই-বােনের সংখ্যা খুব বেশী হয় না, হলেও, অনেক ভাই-বােন মারা যায় কিম্বা ভাই-বােনের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়। ছােটবেলায় বাপ-মা, ভাই বােনের জন্য অনেক দুঃখকষ্ট আসে এবং অনেক ঝাট পােহাতে হয়। তা ছাড়া, বরাবরই আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ভাল বনে না— পারিবারিক সম্বন্ধ অনেক ক্ষেত্রেই মন কষাকষিতে পরিণত হয়। মেষের জাতককে অনেকবার বাসস্থান পরিবর্তন করতে হয় কেন না, তিনি একজায়গায় বেশী দিন থাকতে ভালবাসেন না। পারিবারিক অবস্থার জন্য কিম্বা শারীরিক অস্বাস্থ্যের জন্য কি কোন আকস্মিক বিপদের জন্যও তার ভ্রমণের সম্ভাবনা আছে। তার সমুদ্রমণেরও সুযােগ উপস্থিত হতে পারে এবং কর্মোপলক্ষে অথবা তীর্থভ্রমণ কি শিক্ষার জন্য, দূর বিদেশযাত্রাও অসম্ভব নয়। জন্মস্থান ছেড়ে বিদেশে বাস করা তার পক্ষে খুবই সম্ভব— বাধ্য হয়ে কোন বিদেশে নির্জন-বাস করা অথবা বিদেশে নির্বাসিত হবার আশঙ্কাও আছে। অনেক সময় শত্রুর ভয়ে অথবা গুপ্ত শত্রুর দ্বারা পীড়িত হয়ে তিনি স্থানান্তরিত হতে পারেন; ধর্মের জন্য বা সংসার-বৈরাগ্যের জন্য সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর জীবন যাপন করাও তার পক্ষে মােটেই অসম্ভব নয়। কিন্তু তিনি যা-ই করুন, কোন ভাবই তার মধ্যে স্থায়িত্ব লাভ করতে পারে না। বিবাহ নিয়ে অথবা বিবাহিত জীবন নিয়ে জাতকের অনেক ঝাট উপস্থিত হতে পারে। অনেক সময় বিবাহে বাধা হয়। আবার অনেক সময়ে তিনি ঝোঁকের মাথায় টপ করে বিবাহ করে বসেন। তার পরে এই তাড়াতাড়ি বিবাহের জন্য অনুতাপ করতে হয়। বিবাহ নিয়ে কাট, গােযােগ, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে বিবাদ-বিসম্বাদ প্রভৃতি, এমন কি স্ত্রীর সঙ্গে স্থায়ী বিচ্ছেদ পর্যন্ত হতে পারে। হয়ত স্ত্রী চিররুগ্না বা বিকলাঙ্গী হতে পারেন। মেষের জাতকের সন্তান-সংখ্যা খুব বেশী হয় না; এমন কি, তিনি একেবারে অপুত্রক হতে পারেন। সন্তান যদি হয়, তাহলে প্রথম সন্তান প্রায়ই দীর্ঘজীবী হয় না। মেষের জাতক চান সব বিষয়েই অগ্রণী ও পথপ্রদর্শক হতে— তা সে সাংসারিক ব্যাপারেই হােক, বৈষয়িক ব্যাপারেই হােক, বিজ্ঞানের ব্যাপারেই হােক, কি রাজনৈতিক ব্যাপারেই হােক। সাহসিক কাজের জন্য এবং দূরদেশযাত্রা অথবা জলযাত্রার জন্য তার কিছু খ্যাতিলাভ হতে পারে এবং সামরিক বা পুলিশ বিভাগের চাকরিতে কিম্বা আইনের ব্যবসায়ে তার উন্নতি হতে পারে। খনির কাজে অথবা খনি বা খনিজ পদার্থের সংশ্রবে কিম্বা রসায়নসংক্রান্ত কোন কাজেও তার উন্নতি হতে পারে। বন্ধুর কাছ থেকে তিনি অনেক সময় সাহায্য পেয়ে থাকেন এবং কোন বন্ধু বা মুরুব্বীর সাহায্যে উচ্চপদ এবং বিশেষ প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারেন। মধ্যবয়সে অথবা জীবনের শেষের দিকে সহসা তার কর্ম-বিপর্যয় হতে পারে। 

মেষের জাতকের বৈষয়িক বা সামাজিক ব্যাপারে খুব বেশী প্রতিষ্ঠা প্রায়ই হয় না, কিম্বা প্রতিষ্ঠা যদিই হয় ফিরে অবনতির আশঙ্কা থাকে। কোষ্ঠীতে যদি অসম্ভব ভাল যােগ থাকে তাহলেই মেষের জাতক পূর্ণ উন্নতি করতে পারেন, নতুবা তার যােগ্যতার অনুপাতে উন্নতি হবার আশা একান্ত কম। তার অনেক বিশ্বস্ত বন্ধু হওয়া সম্ভব এবং বন্ধুগুলি প্রায়ই উদার, বদান্ত এবং দয়ালু প্রকৃতির লােক হন। ধর্মযাজক, আইন-ব্যবসায়ী, শিক্ষক, গ্রন্থকার, পুস্তক প্রকাশক ইত্যাদির ভিতর কেউ কেউ তার শত্রু হতে পারে— তবে তার শত্রু যতই হােতূ কেউই খুব প্রবল হতে পারে না এবং শক্রদ্বারা খুব গুরুতর কোন ক্ষতিও হয় না। কেবল বৈদেশিক বা বিদেশবাসী জনকতক শক্তদ্বারা বিশেষ উৎপীড়িত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পরিবারের মধ্যেও দু’চার জন গুপ্ত-শত্রু থাকতে পারে। জাতকের অর্থ বা সম্পত্তি নিয়ে কোন রকম বিবাহবিসম্বাদ অথবা মামলা-মােকদ্দমা হতে পারে এবং সেই বিবাদ-মামলায় নিজের স্ত্রী কি অন্য কোন স্ত্রীলােক জড়িত থাকা সম্ভব। মেষের জাতকের পেটফাপা, অম্লশূল, পেটব্যথা, কিম্বা অভ্যন্তরিক যন্ত্রের কোন রকম অসুখ হতে পারে। অসুখ হলে তা প্রায়ই প্রদাহের আকার ধারণ করে থাকে। তা ছাড়া, চোখে, হাতে কিম্বা পায়ে কোন রকম আঘাতও লাগতে পারে। তিনি নিজেই নিজের মৃত্যুর কারণ হতে পারেন— তার মনে আত্মহত্যার ইচ্ছা মধ্যে মধ্যে আসতে পারে অথবা কোন বড় ব্যাপারে শহীদ ( martyr ) হবার আকাঙ্ক্ষাও তার মধ্যে থাকতে পারে। আত্মবিসর্জন করে বিখ্যাত হব ’ – এই রকম একটা কল্পনাও তার মনে থাকা অসম্ভব নয়। স্বাস্থ্য ভাল রাখতে হলে কাজে লেগে থাকা তার পক্ষে একান্ত আবশ্যক। সব বিষয়ে সংযম ও মিতাচার তার স্বাস্থ্যের পক্ষে অনুকুল। লঘু আহার ও উপবাসাদির দ্বারা তার দৈহিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হওয়া সম্ভব। যে সকল খ্যাতনামা ব্যক্তি মেষ লগ্নে জন্মেছেন তাদের কয়েক জনের নাম : শ্রীশ্রী যীশুখৃষ্ট; শ্রীযুক্ত সুভাষচন্দ্র বসু; ডাক্তার শ্রীযুক্ত কেদারনাথ দাস প্রভৃতি।
বিঃদ্রঃ লেখায় শব্দ-অক্ষরে ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।

প্রিয় পাঠক, এই বিষয় আরো পোস্ট পড়তে সূচিপত্র দেখুন। — গণক্কার। 
Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url