বীর্য্যবৃদ্ধি ও শারীরিক দুর্বলতা দূর করার ওষুধ — আয়ুর্বেদীয় মোদক
যারা শারীরিকভাবে এবং যৌন দূর্বলতায় ভুগছেন, তাদের জন্য এই পোস্টটি। এখানে আমরা আয়ুর্বেদ থেকে কিছু যৌন শক্তি বৃদ্ধি এবং শারীরিক দুর্বলতা দূর করার মোদক (ঔষধ) তৈরি নিয়ে আলোচনা করব। এই ঔষধ তৈরির ফর্মুলা গুলো আপনি কবিরাজি দোকান থেকে কিনে নিতে পারেন অথবা অভিজ্ঞ কবিরাজ মশাইয়ের কাছ থেকে এই ওষুধগুলো তৈরি করে নিতে পারেন। যেকোনো একটি ঔষধ সেবন করলেই আপনি কাঙ্ক্ষিত ফল পাবেন। এর আগেও আমরা এই বিষয়ে কয়েকটি পোস্ট দিয়েছি আপনি সেগুলোও দেখতে পারেন।
বিঃদ্রঃ ঔষধ তৈরির আগে পারদ শোধন করে নিতে হবে। অশোধিত পারদ কঠিন ব্যাধির কারণ হতে পারে।
কামেশ্বর মােদক— কুড়, গুলঞ্চ, মেথী, মােচরস, ভূমিকুম্মাণ্ড, তালমূলী, গােক্ষুর, কুলেখাড়ার বীজ, শতমূলী, কের, যমানী, তালাঙ্কুর, ধনে, যষ্টিমধু, গাের-চাকুলে, তিলতণ্ডুল, মৌরী, জায়ফল, সৈন্ধব, বামুনহাটী, কাকড়া-শৃঙ্গী, ত্রিকটু, জীরা, কৃষ্ণজীরা, চিতামূল, দারুচিনি, তেজপত্র, এলাইচ, নাগেশ্বর, পুনর্নবা, গজপিপ্পলী, দ্রাক্ষা, শঠী, কটফল, শিমূলমূল, ত্রিফলা ও আলকুশী-বীজ, প্রত্যেকের সমভাগ চূর্ণ, ইহাদের সর্বসমষ্টির ও চারি ভাগের এক ভাগ অভ্র ভষ্ম, দুইভাগের একভাগ সিদ্ধিচূর্ণ, আটভাগের একভাগ গন্ধক এবং দ্বিগুণ চিনি, –এই সমস্ত দ্রব্য উপযুক্ত পরিমিত ঘৃত ও মধুর সহিত মিশ্রিত করিয়া মোদক করিবে। অর্ধতোলা হইতে দুইতােলা পর্যন্ত মাত্রায় এই মোদক উষ্ণদুগ্ধের সহিত সেবন করিলে, বীর্য্যবৃদ্ধি ও বীর্য্যস্তম্ভ হইয়া থাকে। ইহা যৌন ও শারীরিক দুর্বলতা দূর করার ওষুধ।
কামাগ্নি সন্দীপন মােদক— পারদ, গন্ধক, অভ্র, যবক্ষার, সাচী-ক্ষার, চিতামূল, পঞ্চলবণ, শঠী, যমানী, বনযমানী, বিড়ঙ্গ ও তালীশপত্র, প্রত্যেক দ্রব্য দুইতােলা; দারুচিনি, তেজপত্র, এলাইচ, নাগেশ্বর, লবঙ্গ ও জায়ফল, “প্রত্যেক দ্রব্য চারিতােলা; বিদ্ধড়কবীজ ও ত্রিকটু প্রত্যেক ছয়তােলা; ধ’নে, আকন্দ, যষ্টিমধু, মৌরী ও কেশুর, —প্রত্যেক আটতােলা; শতমূলী, ভূমিকুষ্মাণ্ড, ত্রিফলা, হস্তিকর্ণ-পলাশের ছাল, গােরক্ষচাকুলে, আলকুশী বীজ ও গােঙ্কুরবীজ প্রত্যেক দশতোলা; সর্বসমষ্টির সমান সবীজ-সিদ্ধি চুর্ণ ও সর্বসমান চিনি, উপযুক্ত পরিমাণে ঘৃত ও মধুর সহিত মিশ্রিত করিয়া, দুই তোলা কপূর তাহার সহিত মিশ্রিত করিবে। চারি আনা হইতে এক তােলা পর্যন্ত মাত্রায়, উষ্ণদুগ্ধসহ ইহা সেবন করিলে, শুক্র ও মৈথুনশক্তি অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়; এবং মেহ, গ্রহণী, কাস, অম্লপিত্ত, শূল, পাল, অগ্নিমান্দ্য ও পীনস প্রভৃতি রােগ নিবারিত হইয়া থাকে।
মদন-মােদক— ত্রিকটু, ত্রিফলা, কাকড়াশৃঙ্গী, কুড়, সৈন্ধব, ধনে, শঠী, তালীশপত্র, কটফল, নাগেশ্বর, মেথী এবং ঈষৎভর্জ্জিত জীরা ও কৃষ্ণজীরা -প্রত্যেক দ্রব্য সমভাগ; সর্বসমান ঘৃত-ভর্জ্জিত সবীজসিদ্ধিচুর্ণ এবং সর্বসমষ্টির সমান চিনি, উপযুক্ত ঘৃত ও মধুর সহিত মিশ্রিত করিয়া মোদক করিবে; পরে তাহার সহিত কিঞ্চিৎ দারুচিনি, তেজপত্র, এলাইচ ও কপূর মিশাইয়া, সুগন্ধি করিয়া লইবে। এই মোদক চারি আনা হইতে একতােলা পর্যন্ত মাত্রায় উষ্ণজলসহ সেবন করিলে, শুক্র ও রতিশক্তির বৃদ্ধি, এবং কাস, শূল, সংগ্রহ গ্রহণী ও বাতশ্লেষ্মজ পীড়ার শান্তি হইয়া থাকে।
প্রমদনানন্দ মোদক— পারদ, গন্ধক ও লৌহ, প্রত্যেক এক ভাগ, অভ্র তিনভাগ এবং কপূর, সৈন্ধব, জটামাংসী, আমলকী, এলাইচ, শুঠ, পিপুল, মরিচ, জয়িত্রী, জায়ফল, তেজপত্র, লবঙ্গ, জীরা, কৃষ্ণজীরা, যষ্টিমধু, বচ, কুড়, হরিদ্রা, দেবদারু, হিজলবীজ, সােহাগা, বামুনহাটী, নাগেশ্বর, কঁকড়া শৃঙ্গী, তালীশপত্র, দ্রাক্ষা, চিতাশূল, দন্তীবীজ, বেড়েলা, গােরক্ষচাকুলে, দারুচিনি, ধ’নে, গজপিপ্পলী, শঠী, বালা, মুতা, গন্ধভাদুলে, ভূমিকুষ্মাণ্ড, শতমূলী, আকন্দ মূল, আলকুশীবীজ, গােক্ষুরবীজ, বিদ্ধড়কবীজ ও সিদ্ধিবীজ, ইহাদের প্রত্যেকের একভাগ চূর্ণ, শতমূলীর রসের সহিত একত্র মর্দন করিয়া, পুনর্ব্বার শুষ্ক ও চূর্ণ করিয়া লইবে; পরে ঐ চূর্ণসমষ্টির এক চতুর্থাংশ শিমূলমূল-চূর্ণ, শিমূলমূলের চূর্ণ সহ সমুদায় চুর্ণের অর্ধাংশ সিদ্ধিচূর্ণ এবং সমুদায় চূর্ণের দ্বিগুণ চিনি লইয়া, প্রথমতঃ ঐ চিনি উপযুক্ত ছাগদুগ্ধে গুলিয়া পাক করিবে এবং আসন্নপাকে ঐ সমস্ত চূর্ণ প্রক্ষেপ দিবে। পাকশেষে তাহাতে কিঞ্চিৎ দারুচিনি, তেজপত্র, নাগেশ্বর, কপূর, সৈন্ধব, ত্রিকটু-চূর্ণ ও ঘৃত মিশ্রিত করিবে এবং শীতল হইলে কিঞ্চিৎ মধু তাহার সহিত মিশ্রিত করিয়া রাখিবে। চারি আনা হইতে অর্ধতােলা পর্যন্ত মাত্রায় ইহা দুগ্ধসহ সেব্য। ইহাদ্বারা শুক্র ও রতিশক্তির বৃদ্ধি হয়; এবং সূতিকা, গ্রহণী, বহুমূত্র, প্রমেহ, অগ্নিমান্দ্য ও কাস প্রভৃতি বহুবিধ রােগ নিবারিত হয়।
রতিবল্লভ মোদক— চিনি দুইসের, শতমূলীর রস চারিসের, সিদ্ধির ক্বাথ চারিসের, গব্যদুগ্ধ চারিসের, ছাগদুগ্ধ চারিসের, ঘৃত অর্ধসের, প্রক্ষেপার্থ—সিদ্ধিচুর্ণ পাঁচ পল এবং আমলকী, জীরা, কৃষ্ণজীরা, মুতা, দারুচিনি, এলাইচ, তেজপত্র, নাগেশ্বর, আলকুশীবীজ, গােরক্ষ-চাকুলে, তালের আঁটির অঙ্কুর, কেশুর, পানিফল, ত্রিকটু, ধনে, অভ্র, বঙ্গ, হরীতকী, দ্রাক্ষা, কাকোলী, ক্ষীরকাকোলী, পিণ্ডখেজুর, কুলেখাড়ার বীজ, কটকী, যষ্টিমধু, কুড়, লবঙ্গ, সৈন্ধব, যমানী, বনযমানী, জীবন্তী ও গজপিপ্পলী, -প্রত্যেক দ্রব্য দুইতােলা গ্রহণপূর্বক যথানিয়মে পাক করিবে। পাকশেষে শীতল হইলে, দুইপল মধু এবং কিঞ্চিৎ মৃগনাভি ও কপূর তাহার সহিত মিশ্রিত করিবে। পূর্ব্ববৎ মাত্রায় ইহা সেবন করিলে, যৌন জীবনে প্রচুর উপকার লাভ করা যায়। ইহা যৌন ও শারীরিক দুর্বলতা দূর করার ওষুধ।
ত্ৰিকণ্টকাদ্য মােদক— গোক্ষুর-বীজ, কুলেখাড়ার বীজ, অশ্বগন্ধা, শতমূলী, তালমূলী, আলকুশীবীজ, যষ্টিমধু, গােরক্ষ-চাকুলে ও বেড়েলা, ইহাদের প্রত্যেকের সমভাগ চূর্ণ একত্র করিয়া, আটগুণ দুগ্ধে সিদ্ধ করিবে এবং তাহা চূর্ণপরিমিত ঘৃতে ভাজিয়া, চূর্ণের দ্বিগুণপরিমিত চিনির সহিত মিশ্রিত করিয়া, মােদক প্রস্তুত করিবে। অগ্নিবল বিবেচনা করিয়া ইহার মাত্রা দুইমাষা হইতে চারিমা পৰ্য্যন্ত ব্যবস্থা করিবে। এই মোদক বৃষ্য এবং অন্যান্য বাজীকরণ ঔষধ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। ইহা যৌন ও শারীরিক দুর্বলতা দূর করার ওষুধ।
বৃহৎ শতাবরী মােদক— শতমূলী, গােক্ষুর, বেড়েলা, গােরক্ষ চাকুলে, আলকুশীবীজ, কুলেখাড়াবীজ ও ভূমিকুণ্ড, ইহাদের প্রত্যেকের চূর্ণ একপল, সিদ্ধিচুর্ণ আটাইশপল, মহিষদুগ্ধ সাড়ে সতের পল, শতমূলীর রস সাড়ে সতের পল, ভূমিকুষ্মাণ্ডের রস চারিসের এবং পঁচিশসের চিনি একত্র তাম্রপাত্রে পাক করিবে। ঘনীভূত হইলে, নিম্নলিখিত দ্রব্যসকল তাহাতে প্রক্ষেপ দিবে। প্রক্ষেপদ্রব্য যথা— ত্ৰিকটু, ত্রিফলা, দন্তী, দারুচিনি, তেজপত্র, এলাইচ, সৈন্ধব, শঠী, ধনে, বালা, মুতা, কস্তুরী, দ্রাক্ষা, বংশলােচন, জয়িত্রী, জায়ফল, জটামাংসী, তেজপত্র, বারেন্দ্র (পচাপাতা), গেঠৈলা (গেঠেলা), শুলফা, চই, দারুহরিদ্রা, প্রিয়ঙ্গু, লবঙ্গ, সরলকাষ্ঠ, শৈলজ, গুগগুলু, জাতীপুষ্প, যমানী, কটফল, নাগেশ্বর, মেথী, যষ্টিমধু, দেবদারু, মৌরী, তালীশপত্র, পিণ্ডখেজুর, পারদ, গন্ধক, রক্তচন্দন, তগরপাদুকা ও যবক্ষার প্রত্যেক দ্রব্য দুইতােলা। পাক সম্পন্ন হইলে, দারুচিনি, তেজপত্র, এইচ ও কপুর দ্বারা তাহার সুগন্ধ করিবে। মাত্রা অর্ধ তােলা হইতে দুইতােলা পর্যন্ত।
অনুপান— একপল দুগ্ধ। প্রাতে বা আহারের সময়ে ইহা সেব্য এবং ইহার সেবনে ক্ষয়, অষ্টাদশবিধ কুষ্ঠ, বাতরক্ত, প্রমেহ, শ্লীপদ ও শােথ প্রভৃতি সমস্ত রােগ বিনষ্ট হয়। ইহা অনপত্যা স্ত্রী এবং দুর্বল, ক্লীব, অল্পশুক্র ও ক্ষীণতেজা ব্যক্তিদের শ্রেষ্ঠ ঔষধ এবং তেজঃ, স্বর, বুদ্ধি ও আয়ুৰ্বৰ্ধক।