রাশি ও লগ্ন বিচার জানার উপায় কি?

কারাে যদি জন্মতারিখ, জন্ম - সময় এবং জন্মস্থান জানা থাকে তাহলে তার জন্ম - রাশি ও জন্মলগ্ন সহজেই জানা যেতে পারে। এই তিনটির মধ্যে কোন একটি জানা না - থাকলে, রাশি কি লগ্ন জানবার উপায় নেই। অবশ্য হাতের রেখা ও চেহারা দেখে লগ্ন, রাশি, তারিখ —এগুলি ঠিক করা যেতে পারে; কিন্তু তারজন্য বিশেষ শিক্ষা ও সাধনা দরকার। জন্মতারিখ প্রভৃতির কিছু জানা না - থাকলেও, হাত দেখে, গলার আওয়াজ শুনে অথবা অন্য উপায়ে কারো জন্ম সন, মাস, তারিখ, বার প্রভৃতি নির্ণয় করাকে জ্যোতিষের ভাষায়— “ নষ্ট কোষ্টি উদ্ধার ” বলে। কেউ যদি প্রত্যেক মাসের বিশেষত্ব ভাল রকম বুঝে থাকেন, তাহলে একজন লোকের চালচলন এবং ভাবভঙ্গী দেখে তার জন্মমাস ঠিক করা তার পক্ষে অনেকটা সহজ হবে। আর এতে লােকচরিত্রের সম্যক জ্ঞান এবং অনেক অভ্যাস দরকার। কিন্তু এরকম ভাবে জন্মমাস নির্ণয় যে সম্ভব সে বিষয়ে কোন ভুল নেই — যে কোন ব্যক্তি যদি কিছুদিন ধরে পরীক্ষা করেন তাহলে এর সত্যতা বুঝতে পারবেন। কিন্তু এখানে আমি নষ্টকোষ্টি উদ্ধার সম্বন্ধে আলােচনা করব না। এই পোস্টে লগ্ন ও রাশির যে ফল দেওয়া আছে তা তারই কাজে লাগবে যার লগ্ন ও রাশি জানা আছে। অতএব কারাে যদি লগ্ন ও রাশি জানা না - থাকে তা কি উপায়ে জানা যেতে পারে এখানে আমি তাই বলতে চাই। অবশ্য যার জন্ম তারিখ প্রভৃতি কিছুই জানা নেই, তার লগ্ন ও রাশি ঠিক করবার কোন উপায় আমি এখানে নির্দেশ করতে পারব না। সব সমেত রাশি আছে বারটি- মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কট, সিংহ, কন্যা, তুলা, বৃশ্চিক, ধনু, মকর, কুম্ভ, মীন। এই বারটি রাশিকে একসঙ্গে রাশিচক্র বলে। চক্র মানে চাকা। রাশিগুলিকে ‘ চাকা ’ বলার মানে এই বারটি রাশি সমস্ত পৃথিবীটাকে পূর্ব থেকে পশ্চিমে চাকার মত বেড় দিয়ে রয়েছে।
রাশি ও লগ্ন জানার উপায় কি
যেখানে মেষ রাশি আরম্ভ হয়েছে, মীন রাশি সেইখানেই এসে শেষ হয়েছে। কতকগুলি করে নক্ষত্র একসঙ্গে মিলে এক - একটি রাশি হয়েছে। রাশিগুলি এক একটি নক্ষত্রপুঞ্জ বা নক্ষত্রের দল। রাশিগুলিকে রাশিচক্র বলবার আরাে একটা মানে এই যে — তা চাকারই মত পৃথিবীটাকে পূর্ব থেকে পশ্চিমে বেড় দিয়ে অনবরত ঘুরচে। অবশ্য আসলে ঘুরছে পৃথিবী, কিন্তু আমাদের চোখে মনে হয় রাশিচক্রই পৃথিবীকে বেড় দিয়ে ঘুরছে। প্রায় চব্বিশঘণ্টায় সমস্ত রাশিচক্রটা পৃথিবীকে বেড়ে একবার ঘুরে আসে। কাজেই, যেমন সূর্য্য ২৪ - ঘন্টায় একবার পূর্ব দিকে উদয় হন তেমনি রাশিচক্রের প্রত্যেক রাশিও ২৪ ঘন্টায় একবার করে পূব দিকে ওঠে। 

দিন - রাতে সব সময়ই কোন কোন রাশি পূর্ব দিকে উঠবে। প্রথমে যদি মেষ রাশি পূর্ব দিকে ওঠে, তাহলে তার পর উঠবে বৃষ, তার পর মিথুন, তার পর কর্কট — এই রকম ক'রে মীনরাশি পর্যন্ত উঠতে প্রায় চব্বিশঘণ্টা লাগবে — তারপর, আবার মেষ রাশি উঠবে। যে কোন জায়গায় যখন যে - রাশি পূবদিকে উদয় হয় তখন সেইটেই সেখানকার লগ্ন। এইজন্যই লগ্ন ঠিক করতে হ'লে জন্ম স্থানের একান্ত প্রয়ােজন। সুর্য যেমন সব জায়গায় একই সময় উদয় হন না, এক - জায়গায় যখন উদয় হচ্ছেন আর - এক জায়গায় হয়ত ঠিক সেই সময়ই অস্ত যাচ্ছেন — রাশিগুলিও ঠিক তেমনি। যে রাশি কোন সময় এক জায়গায় উদয় হচ্ছে ঠিক সেই সময়ই তা অন্য জায়গায় অস্ত যাচ্ছে। সে যাই হােক, মােট কথা এই - কারো জন্মসময় তাঁর জন্মস্থানে যে রাশি পুবদিকে উদয় হয়েছিল, সেইটেই তাঁর জন্মলগ্ন। রাশিগুলি যেমন পূবদিক থেকে পশ্চিমে পৃথিবীকে বেড় দিয়ে ঘুরে আসে সূর্য - চন্দ্রও তেমনি প্রায় চব্বিশঘণ্টায় একবার পৃথিবীকে বেড় দিয়ে ঘােরেন — কিন্তু সূর্য্যচন্দ্রের এই দৈনিক গতি ছাড়াও আর একটা গতি আছে ; তারা রাশিচক্রের তলা দিয়ে একটু করে এগিয়ে - এগিয়ে, একরাশি থেকে আর - এক রাশিতে সরে যান। সুর্যের একরাশি থেকে আর - এক রাশিতে যেতে এক মাস লাগে ; চন্দ্রের লাগে প্রায় সওয়া দু’দিন। আজ যদি সূর্য মেষরাশিতে থাকেন — একমাস পরে তিনি থাকবেন বৃষে — দু - মাস পরে মিথুনে। তেমনি, আজ যদি চন্দ্র মেষরাশিতে থাকেন, প্রায় সওয়া - দু’দিন পরে তিনি থাকবেন বৃষে, সাড়ে - চারদিন পরে মিথুনে — এই রকম করে প্রায় সাতাশ দিন পরে তিনি আবার মেষে ফিরে আসবেন। কারো জন্মসময় চন্দ্র যে - রাশিতে থাকেন সেইটেই তার জন্মরাশি। যার কোষ্টি বা ঠিকুজী তৈরী আছে — তার লগ্ন ও রাশি জানা খুব সােজা। কোষ্টি খুললেই তার মধ্যে এই রকম একটি কুণ্ডলী ’ বা ছক দেখা যাবে।
রাশি ও লগ্ন বিচার জানার উপায়
ছকটি চৌকোও হতে পারে গােলও হতে পারে। ঐ ছকটির ঘর গুলির মধ্যে কোন কোনটি ফাঁকা — কিছুই লেখা নেই। কোন কোনটিতে র চ ম বু বৃ প্রভৃতি লেখা আছে। র চ ম বু — এ - গুলি রবি, চন্দ্র, মল, বুধ, প্রভৃতি গ্রহের নামের আদ্যক্ষর। ছকটিতে বােঝানাে হয়েছে কোন গ্রহ কোন রাশিতে আছে। ছকের ঘরগুলি এক একটি রাশি। উপরের ঠিক মাঝখানের চৌকো ঘরটি মেষ, তার বাঁ - পাশের তেকোণা ঘরটি বৃষ, তার পরের ঘরটি মিথুন ইত্যাদি। ছকে মেষ, বৃষ, মিথুন প্রভৃতি রাশির নামগুলি সাধারণতঃ লেখা থাকে না। ঐ রকম একটি ছক পেলে ধরে নেবে উপরের চৌকো ঘরটি মেষ এবং তার পর থেকে বায়ে — অর্থাৎ ঘড়ির কাটা যে দিকে চলে তার উল্টো দিক দিয়ে — পর পর বৃষ, মিথুন, কর্কট প্রভৃতি গুণে যেতে হবে। সুবিধার জন্য ছকের কোন ঘরটি কি রাশির তা লেখা হল কোষ্টির ছকের মধ্যে যে ঘরে ‘ চ ’ বা ‘ চা ’ লেখা থাকে সেইটেই জাতকের জন্মরাশি। ঐ ছকের মধ্যে র, চ, ম প্রভৃতি গ্রহের নামের আদ্যক্ষর ছাড়াও একটা ঘরে ‘ লং ' লেখা থাকে। যে ঘরে ‘ লং ' লেখা থাকে সেইটেই জাতকের জন্মলগ্ন।

যার কোষ্টি বা ঠিকুজী নেই — তার জন্ম তারিখ, সময়, ও জন্মস্থান থেকে লগ্ন ও রাশি কষে নিতে হবে। কোন জ্যোতির্বিদকে দিয়ে তার রাশি ও লগ্ন ঠিক করিয়ে নেওয়াই ভাল।
Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url