মীন লগ্নে জন্মানো ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য কেমন হয়

যার মীন লগ্নে জন্ম, তাঁর এই রকম ফল হয়ে থাকে। 
মীন লগ্ন

মীন লগ্নের জাতক নিজের গুণপণার জোরে যথেষ্ট সম্মান ও প্রতিষ্ঠালাভ করেন। তার প্রকৃতি বােঝা শক্ত। তার প্রকৃতিতে বহুমুখীনতা এবং যে-কোন অবস্থার সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেবার শক্তি যথেষ্ট আছে— কাজেই, অন্যের সাহচর্য্য তার প্রকৃতির উপর খুব বেশী প্রভাব বিস্তার করে। জাতকের মন মানসিকতা খুব প্রবল; দয়া, সহানুভূতি, উদারতা প্রভৃতি তার স্বভাবসিদ্ধ গুণ। জাতক ভাবপ্রবণ, কল্পনাকুশল এবং অদ্ভুত খেয়ালী। রােমান্সের দিকে এবং আজগুবি কল্পনার দিকে তার ঝোক থাকা সম্ভব। জাতকের মধ্যে কবিত্বের অনুভূতি আছে এবং তার মধ্যে অধ্যয়নশীলতা ও চিন্তাশীলতার পরিচয় পাওয়া যেতে পারে। পৃথিবীর ভাল জিনিষগুলির দিকে এবং সৌন্দর্যের দিকে তার প্রবল আকর্ষণ দেখা যায়। তার উপভােগের ক্ষমতাও অসীম; সব জিনিস থেকে তিনি নিংড়ে রস বার করে নিতে পারেন। তিনি ভােগী প্রকৃতির লােক হলেও একান্ত আত্মপরায়ণ নন— তার মধ্যে উদারতা ও বদান্যতারও অভাব নেই, এবং তিনি এ চান না যে, তার ভােগ অন্য কাউকে পীড়া দিক। তিনি মােটের উপর চান আনন্দ এবং সেইজন্য তার মধ্যে কতকটা চঞ্চলতা দেখা যেতে পারে। তার কামনা পরিবর্তনশীল হলেও তার মধ্যে ইচ্ছাশক্তির দৃঢ়তা আছে, এবং অন্যের উপর প্রভুত্ব করবার ক্ষমতা থাকলেও তা কখনও রূঢ়ভাবে প্রযুক্ত হয় না— তার হুকুমের সঙ্গে মাধুর্য মেশান থাকে। তার মধ্যে সৃষ্টি-ক্ষমতা আছে এবং তার মন নিত্য নূতন ভাবের সন্ধানে ফেরে। 

সাহিত্য, বিজ্ঞান, কলা প্রভৃতির দিকে জাতকের একটা অন্তরের টান দেখা যায়, এবং সময়ে সময়ে ঐ সব ব্যাপারই তার জীবনের মুখ্য অবলম্বন হয়ে দাড়ায়। জাতকের মধ্যে নানাবিষয় শেখবার ইচ্ছা ও শক্তি দুইই আছে এবং যদিও জাতক বিবাদ-বিসম্বাদ ভালবাসেন না ও অনেক সময় খাতিরে অন্যের কথায় সায় দিয়ে যান, তাহলেও তার মধ্যে সমালােচনার শক্তির অভাব নেই। প্রয়ােজন মত তিনি অপক্ষপাত সমালােচনা করতে বেশ পটু এবং সে সমালােচনার মধ্যে বিদ্বেষপ্রসূত ঝাঝ পাওয়া যায় না। জাতক সহজে রাগেন না, তেমনি আবার একবার রেগে উঠলে সহজে শান্ত হন না; কিন্তু তাহলেও হীনভাবে প্রতিশােধ নেবার আকাঙ্ক্ষা প্রায় তার মনে আসে না— তিনি যদিই প্রতিশােধ নেন তা মহৎভাবেই নিয়ে থাকেন। জাতকের মধ্যে লেখবার অথবা বক্তৃতা দেবার শক্তি প্রকাশ পাওয়া সম্ভব; এবং সমাজে তার ব্যবহার শিষ্টতাপূর্ণ ও কথাবার্তা মধুর অথচ সুন্দর বলে বিবেচিত হয়। প্রত্যেক বিষয়ে জাতকের ঔদার্য্য একটা লক্ষ্য করবার জিনিষ। কোন বিষয়ে তার গোঁড়ামির বিশেষ চিহ্ন পাওয়া যায় না, এবং নিজের বিরুদ্ধ-মতও শান্তভাবে শােনবার ও বিচার করবার শক্তি তার মধ্যে বেশ আছে। তিনি প্রায়ই কোন না কোন কাজে ব্যাপৃত থাকেন এবং নানারকমের কাজ করলেও অধিকাংশ স্থলেই তার চেষ্টা সাফল্যমণ্ডিত য়ে ওঠে। জাতকের নানাবিষয়িণী যােগ্যতা আছে, এবং তিনি প্রায়ই একসঙ্গে দু-তিন রকমের কাজ করে থাকেন। 

অধিকাংশ স্থলেই, তিনি নিজের চেষ্টা দ্বারাই অর্থোপার্জন ও উন্নতি করেন। তার স্ব-রচিত গ্রন্থাদি থেকে অথবা কোন রকম কলা বা শিল্পের দ্বারা তার অর্থোপার্জন হওয়া সম্ভব; বিদেশে অথবা ভ্রমণের দ্বারাও তার সম্মান ও খ্যাতি লাভ হতে পারে। নিজের বিস্তার জন্য অথবা আইনের ব্যবসায়ে, কিম্বা কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অথবা ধাম্মিক ব্যক্তি বলে তার খ্যাতি ও প্রতিপত্তি লাভ হওয়া অসম্ভব নয়। বিদ্যাসংক্রান্ত কোন প্রতিষ্ঠানের সংশ্রবে অথবা কোন হিতকর কাজে দানের দ্বারাও তিনি বিখ্যাত হতে পারেন। মােট কথা, মনি লগ্নের জাতক প্রায়ই স্বনামধন্য পুরুষ হয়ে থাকেন। তার পিতা বিখ্যাত লােক হন পারেন; কিন্তু তার দ্বারা জাতকের বিশেষ সাহায্য হয় না। তার ভাই-বােনের সংখ্যা প্রায়ই বেশী হয়; কিন্তু ভাই-বােনের মধ্যে কারো কারাে অকালমৃত্যুর আশঙ্কা আছে এবং তার সব ভাই-ভগ্নী প্রায় তার আগেই মারা যান। আত্মীয় স্বজনের সংশ্রবে তার অর্থাগমের সাহায্য হওয়া সম্ভব এবং সব বিষয়ে তার আত্মীয়-স্বজন প্রায়ই তার গুণের পক্ষপাতী হন— কিন্তু কোন নিকট আত্মীয়ের মৃত্যুর জন্যে এবং বিদেশ-ভ্রমণে বহু অর্থব্যয় বা ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। তার সন্তানও অনেক গুলি হয়ে থাকে— সাধারণতঃ কন্যার সংখ্যা বেশী হয়। সন্তানরা প্রায়ই সৌভাগ্যশালী হয়ে থাকে। সন্তানদের অনেক ভ্রমণ করতে হয় এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ সমুদ্রযাত্রা বা দূর তীর্থযাত্রাও করে থাকেন— সন্তানদের বহু বাস পরিবর্তন এবং কারাে কারো কর্মপরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে। কিন্তু সন্তানদের জন্য জাতকের কিছু দুশ্চিন্তা অবশ্যম্ভাবী; বিশেষতঃ কোন কন্যার জন্য বিশেষ চিন্তা ও অর্থব্যয়ের সম্ভাবনা আছে। 

পিতা-মাতার পক্ষ থেকে জাতকের বিশেষ সাহায্য হয় না— পৈত্রিক সম্পত্তি পেলেও তা নিয়ে অনেক ঝঞ্চাট, অশান্তি ও বিবাদ-বিসম্বাদের আশঙ্কা আছে। পৈত্রিক সম্পত্তি ও পৈত্রিক বাসস্থান বিবাদাদিতে বিভক্ত হতে পারে। তার দুই স্বতন্ত্র বাসগৃহ থাকা সম্ভব এবং দুই গৃহেই তার গৃহস্থালী পাতা থাকতে পারে। জাতকের বিবাহিত জীবন খুব সুখের হয় না; তার স্ত্রী চির-রুগ্ন হতে পারেন অথবা তার সঙ্গে জাতকের ভাল রকম বনিবনাও না হতে পারে; কিম্বা সাংসারিক কি বৈষয়িক ব্যাপার নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে মতভেদ হতে পারে। এমন কি তার স্ত্রী কোন রকম মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত হতে পারেন। আত্মীয়স্বজনের জন্য এবং গৃহস্থালীর ব্যাপারের জন্য এবং জাতকের মাতা বা মাতৃস্থানীয় কোন আত্মীয়ার জন্য বিবাহিত জীবনে অনেক ঝঞ্চাট উপস্থিত হয়। জাতকের স্ত্রী উত্তরাধিকারসূত্রে কিছু অর্থ বা সম্পত্তি পেতে পারেন। 

তার প্রথম স্ত্রীর প্রায়ই অল্পবয়সে মৃত্যু হয় এবং তার পর তিনি দ্বিতীয়বার বিবাহ করতে পারেন, কিম্বা এমনও হতে পারে যে, যে কোন কারণেই হােক্ তিনি একসঙ্গে দুই বিবাহ করতে পারেন; কিম্বা স্ত্রী সত্বেও অপর একটি প্রেমের ব্যাপার দীর্ঘকাল ধরে চলতে পারে। জাতকের অনেক সম্ভ্রান্ত ও উচ্চ বংশীয় বন্ধু থাকতে পারে এবং তাদের দ্বারা তার কর্ম্ম, যশ ও প্রতিপত্তি বাড়াবার পক্ষে সাহায্য হয়। কিন্তু এই বন্ধুদের মধ্যে কোন বিশ্বাসঘাতক তার ঘােরতর শত্রু হয়ে দাড়াতে পারে এবং তাকে অপদস্থ করতে যথেষ্ট চেষ্টা-চরিত্র করতে কসুর করে না। 

তার বন্ধুবর্গ সাধারণতঃ শক্তিশালী ও প্রতিষ্ঠাসম্পন্ন ব্যক্তি হলেও, তার বন্ধু অনেক পরিবর্তিত হয়ে থাকে। তার শত্রুদের মধ্যেও কেউ কেউ তার বন্ধু হয়ে দাড়ায়, আবার অনুগত বন্ধুদের মধ্যে কোন ধর্মের গোড়া, নীতিবাগীশ অথবা বিষয়ীলােক তার ঘােরতর শত্রু হয়ে দাড়াতে পারে। বন্ধু ও অনুগত ব্যক্তির জন্য জাতকের অনেক খরচপত্র হওয়া সম্ভব এবং ভৃত্যাদির জন্য তার পারিবারিক অথবা বৈষয়িক বিশৃঙ্খলা উপস্থিত হওয়া বিচিত্র নয়। জাহক অসাধারণ খ্যাতি, প্রতিপত্তি ও প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারেন, যদি কোষ্ঠীতে বৃহস্পতি ও সূর্য্য বিশেষ দুর্বল না হয়। অবশ্য সেই খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠালাভের যােগ্যতা তার মধ্যে আছে। তিনি এক সঙ্গে দু'তিন রকমের কর্ম্ম করতে পারেন, এবং কর্মের অনুরোধে অথবা খ্যাতি প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁকে অনেক বার বিদেশে যেতে হয়। তার বহু ভ্রমণের সম্ভাবনা আছে এবং সমুদ্র ভ্রমণকালে অথবা নদীবক্ষে তার কোন রকম বিপদ-আপদেও আশঙ্কা আছে। কোন প্রকাশ্য শত্রু জাতকের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। হৃদরোগের অথবা ফুসফুসের রােগের, কিম্বা মস্তিষ্ক কি মূত্র গ্রন্থির রােগের প্রবণতা তার মধ্যে থাকা সম্ভব। পায়ের পাতায় বা গোড়ালিতে কোন রকম আঘাত লাগা, চোখের কোন রকম অসুখ এবং আগুন থেকে কোন রকম উৎপাত অভিঘাতের আশঙ্কাও আছে। বায়ু পরিবর্তন, সমুদ্রের উপকূল অথবা পার্বত্য প্রদেশে বাস জাতকের স্বাস্থ্যের পক্ষে অনুকূল। 

যে সকল খ্যাতনামা নর-নারীর জন্ম সময়ে মীন উদিত হয়েছিল তাদের কয়েকজনের নাম: সম্রাট পঞ্চম জর্জ, কবিসম্রাট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, এ্যাণি বেশান্ত, গিরীশচন্দ্র ঘোষ, মহামহােপাধ্যায় মহেশচন্দ্র ন্যায়রত্ন স্বামী সারদানন্দ, জষ্টিস রমেশ মিত্র, জষ্টিস চন্দ্রমাধব ঘােষ, ছায়াচিত্রের উইলিয়াম্ পাওয়েল প্রভৃতি।

প্রিয় পাঠক, শব্দের বানানে ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। এই বিষয় আরো পোস্ট পড়তে সূচিপত্র দেখুন। — গণক্কার।
Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url