কুম্ভ লগ্নে জন্মানো ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য কেমন হয়

কুম্ভলগ্নের জাতক একটু খামখেয়ালি ধরণের লােক; তার চালচলন বা ভাবভঙ্গীর মধ্যে প্রায়ই কোন-না-কোন রকম অসাধারণত্ব থাকে। বিজ্ঞানের দিকে এবং গুপ্তবিদ্যা, যােগ, সম্মোহন, জ্যোতিষ প্রভৃতির দিকে তার কিছু ঝোঁক থাকে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং সাহিত্য ও শিল্পের দিকেও তার অনুরাগ থাকতে পারে। নিজে কার্যতঃ কিছু করুন আর নাই করুন, অন্ততঃ এই সব ব্যাপারে উৎসাহ দিতে তিনি পরানুপ নন্। তিনি নির্জনতা ভালবাসেন— সমাজে মেশার চেয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্যের সৌন্দর্য্য উপভােগ করা তার বেশী প্রিয়। সময় সময় একান্তে থেকে নিজের চিন্তা নিয়ে ভাবতে তিনি খুব বেশী পছন্দ করেন। তার অনুভূতিগুলি বেশ গভীরতার একাগ্রতা খুব দীর্ঘকাল স্থায়ী। স্নেহ বা প্রীতির ব্যাপারে তার মধ্যে বেশ একনিষ্ঠার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি যাকে ভালবাসেন তার কাছে নিজেকে একান্ত ভাবে দান করেন— সেক্ষেত্রে জাতিকুল, ধর্মাধর্ম, নিন্দা-প্রশংসার কথা তার মনেই আসে না। তিনি হয়ত নিজের স্ত্রীর একান্ত অনুরক্ত ও আদর্শ স্বামী হতে পারেন। আবার, যদি অন্য স্ত্রীলোকের উপর তার মোহ বা প্রীতি অর্পিত হয়, তাহলে সব কলঙ্ক তুচ্ছ করে, সমাজের ও পরিবারের সকল গঞ্জনা মাথায় করে নিতে পারেন।

কুম্ভ লগ্ন

সাধারণতঃ, তার ইচ্ছাশক্তি অদম্য-সহস্র বাধাবিঘ্নের বিরুদ্ধে দাড়িয়েও তিনি অটলভাবে নিজের কাজ সিদ্ধ করেন। জাতক নির্জনতা প্রিয় বটে, কিন্তু তিনি মনুষদ্বেষী নন। তিনি সাধারণতঃ প্রফুল্লচিত্ত ও সদানন্দ ধরণের লােক; তার সামাজিক ব্যবহার মাধুর্যপূর্ণ এবং কথাবার্তা বেশ মােলায়েম। বন্ধু-হিসেবে তার কাছ থেকে অকৃত্রিমতা ও প্রগাঢ়তা দুই-ই পাওয়া যায় এবং তিনি যদিও একরােকা লােক, তাহ'লেও তার মনের মধ্যে বিদ্বেষ বেশীদিন স্থান পায় না। সঙ্গীত, নাট্যকলা, প্রভৃতির দিকেও তার কিছু অনুরাগ থাকা অসম্ভব নয়। উচ্চপদ, প্রতিষ্ঠা ও সম্পদ জাতকের অকাম্য নয়; কিন্তু পদ, প্রতিষ্ঠা বা অর্থ-প্রাপ্তির পক্ষে নানারকম বাধাবিঘ্ন উপস্থিত হয়। অধিকাংশ স্থলেই কাম্যবস্তু তঁার করায়ত্ব হয় না; কিম্বা, বাধাবিঘ্ন ও বিলম্বে নিরুৎসাহ হয়ে জাতক যখন সব আশা ত্যাগ করেন, তখন অকস্মাৎ ও অযাচিতভাবে প্রার্থিত সম্মান বা অর্থ তার হাতে এসে পড়ে। প্রতিষ্ঠা অর্জন করেন নিজের নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও কৃতিত্বের ফলে। কিন্তু জাতক যথেষ্ট পরিশ্রম করলেও, অপরের উপর তার ভাগ্য খুব বেশী নির্ভর করে। তার অর্থাগমের ব্যাপারে নানারকম বাধাবিঘ্ন উপস্থিত হয়— আর্থিক উন্নতি সহজে হয় না; কর্মক্ষেত্রে গুপ্তশত্রুর শত্রুতা, গুপ্তষড়যন্ত্র অথবা তার মুরুব্বী মহলে মৃত্যু তার উন্নতির অন্তরায় হয়ে দাড়ায়। অনেক সময়, ন্যায়ত প্রাপ্য অর্থের এক ভগ্নাংশ মাত্র পেয়ে থাকেন। ধর্ম্মযাজক, আইনজ্ঞ, অধ্যাপক, বিদ্বান ব্যক্তি ও সাধুব্যক্তিদের কাছ থেকে তিনি অনেক সময় যথেষ্ট সাহায্য পেয়ে থাকেন। এবং প্রত্যক্ষভাবেই হােক আর পরােক্ষভাবেই হােক, তারা তার উন্নতির পক্ষে সাহায্য করতে পারেন। 

স্বজনের কাছ থেকে সময় সময় তিনি সাহায্য পেতে পারেন এবং উত্তরাধিকারসূত্রে বা অন্য উপায়ে, ভূমিসম্পত্তিলাভ অসম্ভব নয়। কিন্তু অনেক সময় তা বিশেষ ঝঞ্চাটু ও অশান্তির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। অর্থপ্রাপ্তির জন্য বা কর্মোপলক্ষে তাকে প্রায়ই ছােট বড় ভ্রমণ করতে হয়। কোন ভাই বা ভগ্নী অথবা কোন আত্মীয়ের দ্বারা তার কর্মস্থলে বিশেষ ঝঞ্চাটু উপস্থিত হতে পারে; এবং সাধারণতঃ আত্মীয়বর্গের জন্য জাতকের প্রতিষ্ঠা বা সম্মানের হানি হওয়া সম্ভব। কোন কাগজপত্র, লেখাপড়ার ব্যাপার, খাতাপত্র বা দলিল-দস্তাবেজের জন্য ও কর্মস্থানে ঝঞ্জাট উপস্থিত হওয়া সম্ভব— তার কাজকর্মের প্রকৃতি এরকম হওয়া সম্ভব যাতে লেখাপড়া, দলালপত্র বা রিপোর্ট ইত্যাদি নিয়ে খুব বেশী টাঘাটি করতে হয়। 

জাতকের একসঙ্গে দুইটি উপায়ে অর্থাগম হতে পারে এবং তার কাজকর্মের মধ্যে গােপনীয়তা একটা প্রধান অঙ্গ হতে পারে। পুলিশ বিভাগের কাজ, ডিটেকটিভের কাজ, সামরিক বা রাসায়নিক বিভাগের কাজ, আবগারী বিভাগের কাজ, সরকারী রাজনৈতিক বিভাগের কাজ অথবা ঐ রকম কোন দায়িত্বপূর্ণ গােপনীয় কাজ, কোন রাসায়নিক কিম্বা সন্ত্র-সংক্রান্ত গুপ্ত পেটেন্ট প্রক্রিয়া প্রভৃতির কাজ, এর যে কোন একটা জাতকের হওয়া সম্ভব। এছাড়া, যে কাজে মৃত্যু ও মৃতব্যক্তির সংশ্রব আছে এবং দেনা-পাওনা জড়িত সব কাজও জাতকের হতে পারে। মহাজনী কাজ, ইনসিওরেন্সের কাজ, চিকিৎসকের কাজ, এবং যে সব কাজে ভূমিসংক্রান্ত ব্যাপার জড়িত আছে, তাও জাতক করতে পারেন। জাতকের ভূমি-সম্পত্তি প্রায়ই হয়ে থাকে, যদিও ভূমির জন্য উদ্বেগ, অশান্তি কি দুশ্চিন্তা হওয়া অসম্ভব নয়। 

কুম্ভ লগ্নের ভাই-ভগ্নীর সংখ্যা বড় বেশী হয় না। ভাই-ভগ্নী থাকলেও, পরস্পরের মধ্যে সম্প্রীতি বড় দেখা যায় না এবং ভাই-ভগ্নীর বিবাদে জাতক স্বয়ং জড়িত হতে পারেন, কিম্বা তার জন্য নানারকম অশান্তি ঝঞ্চাট ভােগ করেন। ভ্রমণকালেও জাতকের কোন রকম বিপদ-আপদ হতে পারে, কিন্তু জাতক ভ্রমণ খুব ভালবাসেন এবং অনেক সময় বিনা-কাজেই ঘােরাঘুরি করে থাকেন। জাতকের সন্তান-সংখ্যা খুব বেশী হয় না— বিশেষতঃ পুত্রের সংখ্যা কখনই বেশী হয় না। তার প্রথম সন্তান প্রায়ই দীর্ঘজীবী হয় না; এবং সন্তানদের মধ্যে কারাে কারাে উৎপাত অভিঘাত (পতন, অস্ত্রাঘাত) প্রভৃতির সম্ভাবনা আছে অথবা কোন সন্তানের সহসা মৃত্যু হতে পারে। 

জাতকের যমজ সন্তান হওয়াও অসম্ভব নয়। জাতকের পিতার অবস্থা মন্দ হয় না। তার ভূসম্পত্তি থাকা সম্ভব; কিন্তু জাতকের অল্পবয়সে তার পিতার মৃত্যু হতে পারে। কিম্বা যে কোন কারণেই হােক, অভিভাবকহীন হয়ে তাকে অল্প বয়সেই নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাড়াতে হয়। তিনি প্রায়ই পৈত্রিক বাসস্থান ত্যাগ করে বিদেশে বাস করেন এবং বিদেশে তার গৃহ ও ভূসম্পত্তি হওয়া সম্ভব। শেষ জীবন প্রায় বিদেশেই অতিবাহিত হয়। জাতক প্রায় উচ্চবংশে বিবাহ করে থাকেন এবং তার বিবাহিত জীবন প্রায়ই শান্তিপূর্ণ হয়। তার স্ত্রীর চিত্র, সঙ্গীত, কাব্য প্রভৃতি ললিত কলার দিকে ঝোঁক এবং তাতে কম বেশী পারদর্শিতা দেখা যায়। বিবাহ প্রায় কম বয়সেই হয়ে থাকে। জাতক নিজের দোষে বিবাহিত জীবনের সুখ নষ্ট করতে পারেন। অনেক সময় জাতক নিজেই নিজের বড় শত্রু হয়ে দাঁড়ান এবং কোন গুহ্যব্যাপারে সংশ্লিষ্ট হয়ে নির্বাসিত অথবা কারারুদ্ধ হতে পারেন; কিম্বা তাকে কর্মোপলক্ষে এমন স্থানে বাস করতে হয়, যা লােকালয় থেকে বহুদূরে এবং যেখান থেকে সমাজের সঙ্গে সংশ্রব রাখা দুস্কর, অথবা তার এমন কোন ব্যাধি হতে পারে যাতে দীর্ঘকালের জন্য বাধ্য হয়ে গৃহে আবদ্ধ থাকতে হয়। 

জাতকের বন্ধুর সংখ্যা খুব বেশী হয় এবং উচ্চপদস্থ ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের সমাজে তার অবাধ গতিবিধি থাকা সম্ভব। আইন-ব্যবসায়ী ও ধর্ম্মপ্রাণ ব্যক্তিদের মধ্যে এবং বিদেশীয় ধনশালী ব্যক্তিদের মধ্যেও তঁার প্রকৃত হিতকামী বন্ধু দেখতে পাওয়া যায়, এবং তাদের দ্বারা তিনি আর্থিক হিসাবেও উপকৃত হতে পারেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠাশালী ও উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীর মধ্যে তার দু'চারজন শত্রু থাকতে পারে, যারা তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবার চেষ্টা করতে পারেন। সে যাই হােক্, জাতকের বন্ধুর সংখ্যা খুব বেশী হয় এবং বন্ধুমহলে তার বেশ খাতির থাকে। জাতকের সম্মান ও প্রতিষ্ঠার উপর জাতকের আত্মীয়-স্বজনের একটা প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়; কিন্তু তার আত্মীয়-স্বজন উচ্চপদস্থ হ'লেও, প্রায়ই গতি প্রকৃতির লােক হয়ে থাকেন। কোন মুরুব্বী অথবা আত্মীয়ের মৃত্যুর জন্য তার কর্ম্ম বা প্রতিষ্ঠার, কোনরকম হানি হওয়া অসম্ভব নয়— এবং কোনরকম শােক অথবা ঘনিষ্ট আত্মীয়ের মৃত্যুর জন্য তার মানসিক বৈকল্য ও সেই কারণে কর্ম্মহানির আশঙ্কা আছে। জাতক উত্তরাধিকারসূত্রে কোন সম্পত্তি পেতে পাবেন এবং তার সন্তানদেরও কোন আত্মীয়ের কাছ থেকে অর্থ বা সম্পত্তি পাবার সম্ভাবনা আছে। পিতামাতার জন্য, পারিবারিক কারণে অথবা ভূসম্পত্তির জন্য জাতককে বিদেশ-ভ্রমণ অথবা তীর্থযাত্রা করতে হয়। 

জাতকের বিদেশে ভূমিলাত অথবা গৃহাদি নির্মাণ অসম্ভব নয়, এবং পৈত্রিক সম্পত্তির জন্য বিবাদ-বিসম্বাদ, মামলা-মােকদ্দমা এমন কি প্রকাশ্য শত্রুতাও হতে পারে। বিবাহ-উপলক্ষেও তার বিদেশযাত্রা ঘটতে পারে। স্ত্রীর অথবা কোন আত্মীয়ার সম্পত্তি নিয়েও বিবাদ-বিসম্বাদ অসম্ভব নয়; কিন্তু তাতে বিশেষ কিছু লাভ হয় না। জাতকের মধ্যে বাত ও বায়ুরােগের প্রবণতা থাকা সম্ভব। নাড়ীশূল, অজীর্ণ, পাকস্থলীর ও অন্ত্রের-বৈকল্য, রক্তবিকৃতি— কাউর, গরল প্রভৃতি, শিরঃশূল, আঙুলে বাত, প্রভৃতি পীড়া জাতকের হতে পারে। জাতকের প্রকাশ্যভাবে বা প্রকাশ্যস্থলে মৃত্যু হওয়া অসম্ভব নয়— কর্মোপলক্ষে ভ্রমণের সময় অথবা কর্ম্ম করতে করতে জাতকের মৃত্যু হতে পারে। শারীরিক পরিশ্রম, মানসিক প্রফুল্লতা এবং ঔষধসেবন জাতকের নষ্টস্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। 

যে সকল খ্যাতনামা নরনারীর জন্মসময়ে কুন্তের উদয় হয়েছিল, তাদের জনকয়েকের নাম : কবি ঈশ্বর গুপ্ত, অক্ষয়কুমার দত্ত, বিখ্যাত অভিনেতা জন্ গিলবার্ট ও কে ফ্রান্সি।

প্রিয় পাঠক, শব্দের বানানে ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। এই বিষয় আরো পোস্ট পড়তে সূচিপত্র দেখুন। — গণক্কার।
Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url