বয়ষ্ক ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা ও করণীয়

বয়স বাড়ার (৩০ অথবা ৪০-এর পর) সাথে সাথে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গে পরিবর্তন (ক্ষয়) দেখা যায়। স্বাভাবিকভাবে কিছু পরিবর্তন দেখা দেয় এবং কখনও কখনও অসুখ আকারে আবির্ভূত হয়। কখনও কখনও বা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যে সমস্ত পরিবর্তন বা অসুখ বয়স বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে তার বর্ণনা ক্রমান্বয়ে দেয়া হলাে।

প্রুরিটাস সেনাইলিস (Pruritis Senilis ): শরীরের চামড়া যেন শুকিয়ে না যায় সে জন্য যে উপাদানটির ভূমিকা বেশি তার নাম সেবাম (ফ্যাট)। এটি সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে প্রয়ােজন অনুযায়ী ত্বকে নিঃসরিত গ্রন্থি থেকে প্রয়ােজন অনুযায়ী ত্বকে নিঃসরিত হয়ে থাকে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ত্বকে সেবামের আধিক্য কমে যেতে থাকে। ফলে চামড়া শুষ্ক বা খসখসে হয়ে যায়। আর এ শুষ্কতার কারণে চুলকানির উদ্রেক হয়। যা এন্টিহিস্টিমিন বা চুলকানি কমানাের ওষুধ সেবনে খুব একটা উপকার হয় না। করণীয় তা হচ্ছে গােসলের পরপরই (শরীর শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বেই) শরীরে তেল (অলিভ অয়েল) বা (লিকুইড পেরাফিন বা গ্লিসারিন) মাখা।

জেরটিক একজিমা (Xerotic Eczema ): ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার ফলে চুলকাতে চুলকাতে যে একজিমা হয় তাকেই জেরটিক একজিমা বলে। শীতকালে এ সমস্যাটি হয়ে থাকে বেশি। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়, পাশাপাশি বয়স বৃদ্ধির কারণে ত্বক এমনিতেই শুষ্ক হয়ে যায়। এ দুটো কারণ মিলিয়ে চুলকাতে চুলকাতে একজিমার আকার ধারণ করে (হাত ও পায়ে বেশি )। এমতাবস্থায় সাবান যত কম ব্যবহার করা যায় ততই মঙ্গল। বার বার গােসল বা অতিরিক্ত সময় ধরে গােসলের কারণেও একজিমার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। গােসলের পরপরই (শরীর শুকিয়ে যাওয়ার আগেই) ময়েশ্চারাইজার বা তেল জাতীয় জিনিস মেখে নিলে উপকারে আসবে। “ ঘ ” -এর পরিমাণ যদি বেশি হয় বা পেকে যায় (ইনফেকশন) তবে একজন চর্মরােগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হবেন।

চেরী এনজিওমা (Cherry angioma ): সাধারণভাবে বুঝাতে গেলে এটাকে ভাল তিল বলা যেতে পারে, যদিও এটি তিল জাতীয় নয়। গােলাকার সামান্য উচু লাল বর্ণের তিলের মতাে দেখতে। ত্রিশাের্ধ বয়সে শরীরে লাল তিল নেই এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না। সত্তর বয়সে সবারই কিছু না কিছু লাল তিল থাকে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে লাল তিলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতে অনেকেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন। কোন ক্ষতি করে না বলে এ জাতীয় তিলের কোন চিকিৎসার প্রয়ােজন নেই। তবে ইলেক্ট্রিক মেশিনে (electrodesication) খুব সহজেই এটি নির্মূল করা যায়। প্রয়ােজনে একজন চর্মরােগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।

সেনাইল লেনটিজিন (Senile Lentigines ): সাধারণভাবে বলতে গেলে এটি এক ধরনের তিল। তিল সাধারণত বাচ্চা বয়সে বা যে কোন বয়সেই হয়ে থাকে। বার্ধক্যে এ জাতীয় তিল, সূর্যের আলাে বেশি লাগে এমন জায়গায় (হাতে এবং কপালে) হয়ে থাকে। আঁকাবাঁকাভাবে গােলাকার কালাে বর্ণের হয়ে থাকে। এ জাতীয় তিল থেকে ক্যান্সারের কোন আশংকা নেই এবং এটির কোন চিকিৎসারও প্রয়ােজন নেই।

টেলানজায়াকটেসিয়া (Telangiectasia ): এ ক্ষেত্রে চামড়ার রক্তনালী প্রসারিত হয়ে থাকে এবং তা খালি চোখেই দেখা যায়। অনেক বয়স্ক ব্যক্তির বেলাতেই নাকের দুই পাশে লাল লাল প্রসারিত রক্তনালী দেখা যায়। যে ব্যক্তির বয়স বেশি সে তত বেশি সূর্যের আলাের সংস্পর্শে এসে থাকে। আর এই অতিরিক্ত সূর্যের আলাের কারণে ফর্সা চামড়াতে প্রসারিত রক্তনালীর পরিমাণ বেড়ে যায়। এ বিষয়টি খুব স্বাভাবিক ব্যাপার এবং এটির কোন চিকিৎসা নেই বা প্রয়ােজনও নেই।

পারপুর (Purpura ): ১ থেকে ৫ সেঃমিঃ আকারের রক্তক্ষরণ, বৃদ্ধ বয়সে সাধারণত হাতের (Fore arm) বাইরের দিকে হয়ে থাকে। বয়ােবৃদ্ধির সাথে সাথে রক্তনালীর আশপাশের কোলাজেন ফাইবার কমে যেতে থাকে এবং স্বাভাবিকভাবেই বা সামান্য একটু আঘাতেই রক্তনালী থেকে চামড়াতে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে এবং তা লালচে আকারে দেখা যায়। এ বয়সে যে কোন আঘাত বর্জন করাই এর প্রতিকার। যদি রক্তক্ষরণ হয়েই থাকে তবে তা বিনা ওষুধে নিজ থেকেই আস্তে আস্তে কমে যেতে পারে। তবে ত্বকে রক্তক্ষরণের আরও অনেক কারণ থাকে বলে, একজন চর্মরােগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়াই মঙ্গল।

সেনাইল ইলাসটোসিস (Senile Elastosis ): বয়স্ক ব্যক্তি বেশি দিন সূর্যের আলাের সংস্পর্শে আসে। এ ক্ষেত্রে ফর্সা ত্বকবিশিষ্ট ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সূর্যের অতি বেগুনীরশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করার জন্য মেলানিন পিগমেন্ট-এর স্বল্পতার কারণে, মুখ এবং হাতের ত্বক (যেখানে যেখানে সূর্যের আলাে বেশি লাগে) হলুদ বর্ণের হয়ে যেতে থাকে। ত্বকের রেখাগুলাে স্পষ্ট হয়ে যেতে থাকে এবং ত্বক একটু মােটা হয়ে যায়। তাই সূর্যের আলাে যেন কম লাগে সে দিকে নজর রাখতে হবে। প্রয়ােজনে সান ব্লকার ব্যবহার করা যেতে পারে।

ত্বক ক্যান্সার (Carcinoma ): ত্বকে ক্যান্সার যে কোন বয়সেই হতে পারে। তবে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এর প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর মূল কারণ সূর্যের অতি বেগুণী রশ্মি। বয়স যার যত বেশি সূর্যের আলাের সংস্পর্শে আসা হয় তার তত বেশি। সারাদিন রৌদ্রে থাকতে হয় এমন পেশাদারদের ত্বকে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। যেমন- কৃষক, রিক্সা চালক, নৌকার মাঝি, খেলােয়াড় (ক্রিকেট )। তা ছাড়া গায়ের রং যাদের ফর্সা অর্থাৎ ফর্সা ত্বকে মেলানিন কম থাকাতে তা সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে অক্ষম হয় বলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বৃদ্ধ বয়সে শরীরে কোথাও (বিশেষ করে রৌদ্রে লাগে এমন জায়গাতে যেমন মুখ, হাত) যদি কোন ক্ষতের সৃষ্টি হয় বা দিন দিন বৃদ্ধি পেতেই থাকে অথবা কোন কালাে দাগ আকারে আস্তে আস্তে (আঁকা বাঁকাভাবে গােলাকার) বৃদ্ধি পেতে থাকে তবে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (চর্ম অথবা সার্জারি) -এর শরণাপন্ন হওয়া উচিত। ছােট বেলা থেকেই ছিল এমন বড় আকারের কালাে তিন (Nevus) থেকেও ক্যান্সার দেখা দিতে পরে। যদি হঠাৎ তিলের আকার বড় হতে থাকে, রং-এর পরিবর্তন হতে থাকে, চুলকায় অথবা চুলকালে সামান্য রক্তক্ষরণ হয় (যে কোন একটি উসর্গ) তবে সাথে সাথেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url