চোখ ভ্রু ও ত্বকের কতগুলো রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি

চোখের পাপড়িতে খুশকি

অনেকের চোখের পাপড়ির গােড়াতে সাদা খুশকির মতাে হয়, চোখ চুলকায় ও পাপড়িগুলাে ঝরে যায়। এর চিকিৎসা ব্যবস্থা কী?

এ জাতীয় সমস্যাকে সেবােরিক ব্লেফারাইটিস (Seborrhic Blepharitis) বলে। এজন্যে সপ্তাহে ২/৩ বার যে কোন বেবি শ্যাম্পু দিয়ে আক্রান্ত স্থানটি ধুয়ে দিতে হবে। এছাড়া নিজোরাল ক্রিম (Nizoral cream) নামের ওষুধটি দিনে ১ বার একাধারে দুই মাস মাখলে উপকার পাওয়া যায়।

ভ্রু ওঠা

কারাে কারাে চোখের ভ্র ওঠে যেতে থাকে। কোনাে খুশকি নেই তারপরও ওঠে। এর প্রতিকার কী?

এ অসুখটির নাম এ্যালােপেসিয়া এরিয়েটা। এ জাতীয় সমস্যা শুধু ভ্রুঁ নয়, শরীরের যেকোন জায়গাতেই হতে পারে। সাধারণত মাথায় বেশি হয়ে থাকে। অনেকের ধারণা তেলাপােকা চুল খেয়ে ফেলেছে। কিন্তু ধারণাটি ভুল। এ জাতীয় সমস্যায় চিকিৎসাক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানে ত্বকের নিচে Triamcinolone Acetonide নামক স্টেরয়েড ইনজেকশন দিতে হয়। তবে এক্ষেত্রে চর্মরােগ বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।

চুল লালচে

কারাে কারাে মাথার চুল লালচে আকার ধারণ করে। কয়েকটি পাকা চুলও দেখা যায়। চুলকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কী করণীয়? কোনাে তেল ব্যবহার উপকার পাওয়া যায় কি?

বয়স ৩০ বছর পেরিয়ে গেলে একটি দুটি করে চুল পাকা শুরু হতে পারে। এছাড়া যেকোনাে বয়সে দু-একটি চুল পাকা থাকতেও পারে। এনিয়ে দুঃশ্চিন্তা করার কিছু নেই। চুলের লালচে ভাব দূর করতে তেলের কোনাে ভূমিকা নেই, বরং তেল ব্যবহারে কখনাে কখনাে চুল লাল হয়ে যায়। তেলের এসিড চুলের চচকে স্তরকে ক্ষয় করে ফেলে। তবে যতদিন তেল মাখা চলতে থাকে ততদিন এই ক্ষয়ভাব বােঝা যায় না, তেল মাখা বন্ধ করলেই সেই ক্ষয়ভাব ভেসে ওঠে এবং চুল লাল দেখায়, কখনাে কখনাে জট বাঁধতে শুরু করে তাড়াহুড়া করে আবার তেল মাখতে হয় এবং মনে হবে যেন তেলছাড়া একদিনও টেকা সম্ভব নয়। তবে তেল মাখাবন্ধ করে কয়েকমাস যদি ধৈর্য ধরে থাকা যায় তাহলে দেখা যাবে তেল ছাড়াই চুল আবার সুন্দর ও কালাে হয়ে যাচ্ছে। তবে সাময়িক রুক্ষতা দূর করার জন্যে হেয়ার ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।

দাড়ি গোঁফের লালচে ভাব

অনেকের মুখের দাড়ি ও গোঁফে লালচে ভাব ধরেছে, এ অবস্থায় করণীয় কী?

যদি বংশগত কারণে এটি হয় সেক্ষেত্রে তেমন কিছু করার নেই। তবে কখনাে কখনাে বিভিন্ন ধরনের মিনারেল যেমন-জিংক, প্রােটিন ইত্যাদির অভাবেও এমনটি হতে পারে। এক্ষেত্রে মাল্টিভিটামিন' মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি খেয়ে উপকার পাওয়া যেতে পারে। সামুদ্রিক মাছে প্রচুর জিংক থাকে। বেশি করে সামুদ্রিক মাছ খেতে হবে।

হেয়ার রিমুভিং ক্রীম

অনেকে শরীরের অবাঞ্ছিত লােম দূর করার জন্যে হেয়ার রিমুভিং ক্রিম ব্যবহার করেন। ইলেকট্রো ইপিলিয়েশন কি একই রকম পদ্ধতি?

হেয়ার রিমুভিং ক্রিম ব্যবহার একটি অস্থায়ী পদ্ধতি। যখন ব্যবহার করা হয় তখন লােম ঝরে যাবে। ব্যবহার বন্ধ করলে আবার গজাবে। এভাবে ব্যবহার করতে করতে কখনাে কখনাে ব্যক্তি বিশেষে এলার্জি দেখা দিতে পারে। তখন আর হেয়ার রিমুভার ব্যবহার করা সম্ভব নয়। ইলেকট্রো ইপিলিয়েশন একটি স্থায়ী পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে লােমের গােড়াকে ধ্বংস করে দেয়া হয় এবং সেখান থেকে আর লােম গজায় না।

এসিডে পােড় ত্বক

হাত বা শরীরের অন্যস্থানে এসিডে পুড়ে গেলে যে দাগ হয় তা দূর করা সম্ভব কি?

কতােটুকু স্থান পুড়েছে তার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা ব্যবস্থা। তবে প্লাষ্টিক সার্জারির মাধ্যমে এ ধরনের দাগ দূর করা সম্ভব।

হাঁটুর নিচে লােমের গােড়া পেকে যাওয়া

অনেকের দু'পায়ের বিশেষ করে হাঁটুর নিচের প্রায় প্রতিটি লােমের গােড়া পাকে ও পুঁজ হয়। এর সমাধান কি?

এ জাতীয় সমস্যাকে chronic folliculitis বলে। এজন্য একজন চর্মরােগ বিশেষজ্ঞের অধীনেই চিকিৎসা নেয়া উচিত। তবে Betadine ointment প্রতিদিন গােসলের আধাঘণ্টা আগে মেখে গােসল করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে। ভালাে হয়ে যাবার পরও এই ওষুধটি সপ্তাহে এক দু’বার ব্যবহার করতে হবে। পায়ের তলায় কর্ন কারাে কারাে পায়ের তালুতে শক্ত গুটির মতাে হয়, হাঁটলে ব্যথা করে। এর চিকিৎসা কী? মেডিকেল পরিভাষায় এটাকে Corn (কর্ন) বলে। ইলেকট্রিক মেশিন দিয়ে বিনা রক্তপাতে অতি সহজেই এটি নির্মূল করা যায়। তবে অসুবিধা হলাে ক্ষত ভরে আসতে ১০-১৫ দিন সময় লাগতে পারে এবং সে সময়ে কয়েকবার ড্রেসিং পরিবর্তন করতে হয়।

পায়ের পাতায় ছােট গর্ত

অনেকের পায়ের পাতায় ছােট ছােট গর্ত দেখা যায়। কেউ কেউ বলে কাদায় পা খেয়েছে। এর চিকিৎসা কী?

এ রােগটির নাম ‘ প্লন্টার কেরাটোডার্মা '। এ জন্যে ২% আংগুয়েন্টাম এসিড স্যালিসাইলিক মলম রােজ রাতে ২ মাস নাগাতে হবে।

ত্বকে উকুন

অনেকের শরীরে, বিশেষ করে শরীরের নিম্নাংশে উকুন দেখা দেয়। এর চিকিৎসা কী?

প্রথমত যে সব জায়গায় এ জাতীয় উকুন দেখা দেয় সে সমস্ত জায়গার লােম চেছে ফেলতে হবে। নােম চেছে ফেললে ভালাে হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। অন্যথায় Lotrix নামক ক্রিমটি রাতে মেখে সকালে গােসল করে নিতে হবে। প্রথম দিন ক্রিমটি ব্যবহার করার পর ৭ দিন পরে ক্রিমটি আরেকবার ব্যবহার করতে হবে।

চোখের নিচে কালি

কারাে কারাে চোখের নিচে কালাে ভাব দেখা দেয়। এর প্রতিকার কি?

চোখের নিচে কালােভাব হওয়াটা কখনাে কখনাে জেনেটিক বা জন্মগত ব্যাপার। সেক্ষেত্রে কিছু করার থাকেনা। অনেক সময় চোখে কোনাে সমস্যা থাকলে (দৃষ্টিগত) কালােভাব দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে চক্ষু বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে চশমা নিলে ঠিক হয়ে যায়। অতিরিক্ত দুঃশ্চিন্তা ও অদ্রিা থাকলে কালােভাব আসতে পারে। তখন মনােরােগ রােগ বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে ভিটামিন ই ক্রিম ব্যবহার করে ভালাে ফল পাওয়া যায়। 

Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url