স্তনের বোটায় চুলকানি ও স্তন ক্যান্সারে করনীয়

স্তন চুলকানাে

অনেক মহিলার স্তন চুলকায় ও স্তনে ছােট দানার মতাে হয়। চুলকালে কষ বের হয়। তবে ব্রা না পরলে চুলকানি কমে যায়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রানের উপায় কী?

এ সমস্যাটির নাম এলার্জিক কন্ট্যাক্ট ডারমাটাইটিস এক্ষেত্রে কিছুদিন ব্রা পরা বন্ধ রাখতে হবে। সমস্যাটা চলে গেলে সুতি কাপড়ের ব্রা ব্যবহার করা যেতে পারে। ঐ সব জায়গা ঘামলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুতে হবে। এলার্জির জন্যে মেট্রোলিন ট্যাবলেট ১ টা করে রােজ তিনবার প্রয়ােজন মতাে খেতে হবে।

স্তনের বোঁটার রং পরিবর্তন

অনেক মেয়েরাই প্রশ্ন করেন, তাদের স্তনের বোটা আগের হালকা বাদামী বর্ণ থেকে কেন গাঢ় বর্ণ ধারণ করছে? এটি কি কোন রােগ?

অল্প বয়সে স্তনের বোঁটা হালকা বাদামী রংয়েরই থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তা গাঢ় হতে থাকে। তবে খুব বেশি গাঢ় হলে বা অস্বাভাবিক রংয়ের হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

স্তন একজিমা নাকি স্তন ক্যান্সার?

স্তনে বিভিন্ন ধরনের একজিমা হয়ে থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারও হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রতি বছর আনুমানিক দেড় লাখ লােক ক্যান্সার আক্রান্ত হয় যার মধ্যে ১৫% স্তন ক্যান্সার। মেয়েদের ক্যান্সারের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের স্থান দ্বিতীয়। কোন কোন ক্যান্সার দেখতে একজিমার মতাে। চিকিৎসায় বিলম্ব যেন না হয় সে জন্যে একটু ধারণা এবং সচেতন থাকা দরকার। তবে আসল কথা, ছড়িয়ে পড়ার আগেই ক্যান্সার নির্ণয় করতে পারলে শতকরা একশ ' ভাগ ক্ষেত্রে এর নিরাময় সম্ভব।

স্তনে বিভিন্ন ধরনের একজিমা

এ্যাটপিক: একজিমা এ্যাটপিক বলতে সাধারণত যা বুঝায় তা হচ্ছে বংশগতভাবে পাওয়া এলার্জি। এ জাতীয় রােগীর নিজের অথবা বাবা-মার এ্যাজমা বা সব সময় সর্দি কাশি লেগে থাকা বা একজিমা জাতীয় সমস্যা থাকে। বিভিন্ন বয়সে বিভিন্নভাবে একজিমা দেখা দিতে পারে। যেমন বাচ্চা বয়সে গালে, হাঁটু এবং কনুই-এর ভাঁজে। বড়দের ক্ষেত্রে ঘাড়ে, চোখের আশপাশে, কপালে হাতে। শুধু স্তনের বোঁটায় একজিমা আকারেও দেখা দিতে পারে। এ সময় শরীরের অন্যান্য জায়গায় একজিমা নাও থাকতে পারে।

নিউরােডার্মাটাইটিস: অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা থেকে শরীরের যেকোন জায়গাতে চুলকানির উদ্ৰক হয় এবং চুলকাতে চুলকাতে সে সমস্ত জায়গায় একজিমা হয়ে থাকে। যে সমস্ত জায়গায় এ জাতীয় একজিমা বেশি হয় সেগুলাে হচ্ছে ঘাড়, পায়ের ভজ, যৌনাঙ্গের চামড়া ইত্যাদি। মহিলাদের ক্ষেত্রে স্তনের বোটায় বা এর চার পাশের কালাে জায়গাতেও মানসিক চাপের কারণে চুলকাতে চুলকাতে একজিমা হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় হঠাৎ দৈনিক ১/২ বার চুলকানাে আরম্ভ হয়। তখন না চুলকিয়ে থাকা যায় না। চুলকাতে চুলকাতে যখন ব্যথা আরম্ভ হয় তখন চুলকানি কমে যায়।

কনট্যাক্ট একজিমা: পাশ থেকেই বােঝা যায় যে, কোন কিছুর সংস্পর্শ থেকে এ জাতীয় একজিমার সৃষ্টি হয়, যেমন- রঙিন কাপড়, খসখসে বা উলেন কাপড় বা সিনথেটিক কাপড়। এমতাবস্থায় নিপল বা সমস্ত স্তনেই একজিমা হতে পারে। ব্রেসিয়ারের রাবার থেকেও অনেক সময় একজিমা হতে পারে।

নিপল বা স্তন একজিমা: দেখতে কেমন স্তন একজিমায় সাধারণত ভিজে ভিজে ভাব হয়ে থাকে। কষ ঝরতে থাকে। আস্তরণ পড়ে এবং কখনাে কখনাে চির বা ফাটা ফাটা ভাব হয়ে থাকে। একজিমার ক্ষেত্রে একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ (রােগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে) যে, দু'পাশের স্তন সাধারণত একই সময়ে আক্রান্ত হয়ে থাকে। শুধু একটি স্তন আক্রান্ত এমন ঘটনাও হয়ে থাকে তবে খুবই কম হয়ে থাকে।

স্তন ক্যান্সার: স্তনে ক্যান্সার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তন্মধ্যে পেজেটস ডিজিজ নামক ক্যান্সারটি গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য যে, এটি প্রায় প্রথম থেকেই চামড়াতে (নিপল বা নিপলের আশ পাশের কালাে চামড়াতে) দেখা যায় এবং সাধারণ চোখে দেখতে একজিমার মতাে। অনেকেই একজিমা মনে করে গুরুত্ব দেয় না এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা সঠিক সময়ে না নেয়াতে ক্যান্সার সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং তখন আর চিকিৎসা নেয়ার অবস্থা থাকে। এ জাতীয় ক্যান্সারটিও একজিমার মত চুলকাতে থাকে। একজিমার মত আস্তরণ পড়ে। কয়েক মাস বা বছর যাওয়ার পর এটিতে পরিবর্তন আসবে বা দেখে মনে হবে যে এটি একজিমা নয়, এটি ক্যান্সার। যেমন-একটু চাকা চাকা বা শক্ত শক্ত ভাব, ক্ষত বা ঘা সৃষ্টি হওয়া, নিপল একটু ভিতরে বসে বা ঢুকে যাওয়া এবং নিপলে চাপ দিলে রক্ত বা রক্তের মত পানি বের হওয়া। একটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে মনে রাখতে হবে যে, এ জাতীয় ক্যান্সার শুধু একটি নিপলকে আক্রান্ত করে থাকে। দু'পাশের স্তনকে এক সাথে আক্রান্ত করে না। কিন্তু একজিমা দু'পাশের স্তনকে এক সাথে আক্রমন করে। তবে একজিমা শুধু এক পাশের স্তনেও হয়। সুতরাং প্রথমেই এক পাশের কোন একজিমাকে ক্যান্সার মনে করে ঘাবড়িয়ে না গিয়ে একজন চর্মরােগ বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে নেয়া মঙ্গলজনক। যদি একজিমা হয়ে থাকে তবে সাধারণ চিকিৎসাতেই ভাল হয়ে যাবে। যদি ৩ মাসেও একজিমার কোন পবিরর্তন বা ভাল না হয় (চিকিৎসা নেয়ার পর) তখনই কেবল একজিমা নাও হতে পারে ভেবে Biopsy করে নিশ্চিত হতে হয় যে এ সমস্যাটি একজিমা না ক্যান্সার। 

Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url