গরম লাগা রোগের লোক চিকিৎসা পদ্ধতি সমূহ
মাথায় গরম অনুভব লাগলে নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয়। এটাকে অনেকে এক ধরনের জ্বর বলে। এবং এতে শরীরে গরম লাগে।
দূর্বার ভারা: সন্ধ্যাকালে দূর্বার উপর পরিষ্কার ন্যাকড়া ফেলে রেখে, ভাের বেলা সেই ন্যাকড়া তুলে নিয়ে চিপে, জল সংগ্রহ করতে হবে। পরপর ঐ জল দিয়ে আধ মুঠো দূর্বার আগা পিষে ছােট ভারা তৈরি করে মাথায় দিলে-গরম লেগে থাকলে তা উঠে যায় এবং মাথা ঠাণ্ডা হয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভারা রাখতে হয় এবং মাঝে মাঝে শিশিরের সংগৃহীত জল দিয়ে ভারা ভিজিয়ে দিতে হয়। এরকম তিনচার দিন ভারা ব্যবহার করলে পুরানাে ‘মাথার গরম’ উঠে যায়।
আকান্দির ভারা: আকান্দি লতার (আকান্দি, আকনাদি লতা, আকন্দি লতা, মুষশনী লতা, একলেজা, দই পাতা, নিমুকা, মাকান্দি, বেম্মকপাট, টাকামনির পাতা) পাতা জলপূর্ণ বাটিতে চটকালে স্পঞ্জের মত ঘন গাঢ় সবুজ ‘দলা’ তৈরি হয়। ঐ বস্তু মাথায় পটি রূপে ব্যবহার করলে গরম লেগে থাকলে তা উঠে যায় এবং মাথা ঠাণ্ডা হয়। গরম লাগা জ্বরেও এতে উপকার হয়ে থাকে।
খেজুরের রস: খেজুরের পুরানাে পচা ওলা রস দিয়ে মাথা ধুইয়ে ফেললে, মাথায় গরম লেগে থাকলে তা উঠে যায় এবং গরম লাগা জ্বর আরােগ্য হয়। এতে মাথার অত্যন্ত যন্ত্রণাও নিবারণ হয়। (পরীক্ষিত ও ফলপ্রদ)।
খেজুরের তাড়ি পান: দু'এক দিনের পুরানাে খেজুরের টক তাড়ি-রস খেলেও ‘গরম লাগা কেটে যায় এবং শরীর সুস্থ হয়।
গরম জল: গরম লাগা রােগীর মাথায়, গরম জল ঢাললেও ‘গরম লাগা’ উঠে যায় এবং মাথা ঠাণ্ডা হয়। জ্বরও কমে। (পরীক্ষিত ও ফলপ্রদ)।
সরিষার তেল + জল: সরিষার তেল ও জল কাঁসার বাটিতে মিশিয়ে সেই তেল মাথায় ও হাতে পায়ের তালুতে লাগাতে হয়। তারপর ঐ কাসার বাটি দিয়ে হাতের তালু ও পায়ের তালু ভালভাবে জোরে জোরে ঘষলে ময়লা উঠতে থাকে। যদি ময়লা উঠে, তাহলে গরম লেগেছে বলে নিশ্চিত হওয়া চলে। তারপর যতক্ষণ ময়লা উঠতে থাকে ততক্ষণ ঐ বাটি দিয়ে দুই হাতের ও দুই পায়ের তালু ডলতে হয়। এরকম দু'তিন বার ডললে ‘গরম লাগা’ উঠে যায় এবং শরীরও সুস্থ হয়। (পরীক্ষিত ও ফলপ্রদ)।
জামপাতার ক্বাথ: জাম গাছের কচি পাতা রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে আলাে চালের জলতে চটকে সেই জল খাওয়ালে ‘গরম’ উঠে যায় এবং রােগী সুস্থ হয়।
নিম পাতার ভারা: নিম গাছের কাঁচা পাতা, কাচা পেঁয়াজ ও কার জল একত্রে বেঁটে মাথায় পটি বা ভারা লাগালে ‘গরম লাগা জ্বর ' বা ম্যালেরিয়া আরােগ্য হয়। ঐ ভারা পর পর দু'তিন দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাথায় রাখা আবশ্যক। (পরীক্ষিত ও ফলপ্রদ)।
পেপলশীর পাতা: ‘গরম লাগলে’ পেপলশীর বা পিপুলের একমুঠো কাঁচা পাতা এক বদনা ঠাণ্ডা জলতে কিছুক্ষণ সজোরে চটকালে লালচে রঙের লালার মত যে জল তৈরি হয়, সেই জল দিয়ে ঘষে ঘষে মাথা ধুয়ে ফেললে ‘গরম’ উঠে যায় ও জ্বর নিরাময় হয়। এরূপ দু-তিন দিন বােয়া আবশ্যক (শরীক্ষিত ও ফলপ্রদ)
বন স’লতের পটি: বন স’লতে লতার পাতা ও কাঁচা পেঁয়াজ জল দিয়ে বেঁটে মাথায় পটি দিলে ‘গরম লাগা রােগীর গরম উঠে যায় এবং উপকার হয়। (পরীক্ষিত ও ফলপ্রদ)।
বন্যে পাতার পটি: বন্যে গাছের পাতা জল দিয়ে বেটে মাথায় পটি দিলে গরম লাগা’ রােগীর গরম যায় এবং জ্বর দূর হয়। (পরীক্ষিত ও ফলপ্রদ)। (এই পটি অতিশয় তীব্র ক্রিয়াত্মক। এজন্য মাথা থেকে পটি ফেলে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে নারকেলের ঠাণ্ডা তেল, মাথার তালুতে ঐ পটি লাগানাে স্থানে না মাখলে, তালু প্ৰদাহিত হয়ে ফোস্কা পড়ে এবং খুব ব্যথা হয়।)
বাইডলনের পাতার রস: বাইডলন নামক গাছের পাতা জলতে চটকিয়ে দধির মত যে ফেনা হয় সেই ফেনা মাথার তালুতে মাখলে-গরম লাগা জ্বর নিরাময় হয় এবং গরম উঠে যায়। এতে মাথা ঘোরাও সারে।
বােরােইকুসির পটি: বােয়রাই গাছের কুসি (ছােট কচি বােরােই) জল দিয়ে বেঁটে ‘পটি তৈরি করে মাথায় লাগালে মাথার গরম হ্রাস পায় ও মাথা ঠাণ্ডা হয়। রােগীরও উপকার হয়।
মােল্লার দাঁড়ি: ‘মােল্লার দাড়ি ' লতার পাতা হাতে পিষে রস বের করে, সেই রস মাথার তালুতে দু'তিন ফোটা দিলে-গরম লেগে থাকলে তা উঠে যায় এবং রােগী নিরােগ হয়। (পরীক্ষিত ও ফলপ্রদ)। (এই রস দু'এক বারের বেশী ব্যবহার্য নয়। বেশী বার ব্যবহার করলে মাথার তালু প্রদাহিত হয় ও ফোস্কা পড়ে মন্ত্রণা হয়।)
তিল গাছের পাতা: তিল গাছের কাঁচা পাতা জলতে চটকে, সেই লালাময় জল দিয়ে মাথা ধুলে-গরম’ উঠে যায়। মাথার জ্বালা-যন্ত্রণাও নিবারণ হয়।
শিম গাছের পাতার ভার: গােবর ন্যাদা শিম গাছের পাতা বেটে মাথায় ভারা দিলে গরম’ উঠে যায় এবং মাথার জ্বালা যন্ত্রণা থাকে না।
হাতিশুড়ার পাতার পটি: হাতিশুডাের/হাতিশুঁড়া পাতা, পেঁয়াজ ও জল একত্রে বেঁটে মাথায় পটি দিলে গরম লাগা রােগীর ‘গরম’ উঠে যায় এবং জ্বর আরােগ্য হয়।