বিভিন্ন প্রকার ঘা বা ক্ষতের চিকিৎসা পদ্ধতি

ঘা বা ক্ষত নানারকম হ'তে পারে। সাধারণতঃ যে সব ঘা অন্য কোন রােগ বা উপসর্গের সঙ্গে যুক্ত নয়, এরূপ ঘা আরােগ্যের জন্য নিম্নোক্ত ব্যবস্থা অবলম্বিত হয়।

অশ্বত্থের ছাই: অশ্বত্থ বা পাকুড় গাছের ছাল পুড়িয়ে, ছাই বানিয়ে, সেই ছাই ঘা-এর উপর নিয়মিত দু-তিন বার ছড়িয়ে দিলে ঘা আরােগ্য হয়।

আকন্দি পাতার চাপ: দুরারােগ্য ও বিষাক্ত লালবর্ণ ক্ষতে আকন্দি লতার পাতার যে পাশ তৈলাক্ত ও সবুজ, সেইদিক ঘা-এর ওপর নিয়মিত কয়েকদিন লাগালে ঘা আরােগ্য হয়। কিন্তু ঐ পাতার সাদা পাশ লাগালে ঘা বৃদ্ধি লাভ করে। (পরীক্ষিত ও ফলপ্রদ)

ক) কাটা ঘা: কেটে গিয়ে রক্তপাত হলে উক্ত রক্তপাত নিবারণ ও ঘা আরােগ্যের জন্য নিম্নোক্ত ঔষধ ব্যবহৃত হয়: অ্যালাচির পাতার জাব+চূণ অ্যালাচির কাঁচা পাতা হাতের তালুতে চুণের সঙ্গে পিষে মলম তৈরী করে সেই মলম সদ্য কাটা ঘায়ে লাগালে রক্ত বন্ধ হয় ও ক্ষত শীঘ্র নিরাময় হয়। (পরীক্ষিত ও ফলপ্রদ)

কাইয়ােঝাঙার গাছ+চূণের জল: কাইয়ােঝঙার গাছের কচি পাতা ও ফুণের জল মিশিয়ে হাতে ডলে মলম তৈরী করে — সেই মলম সদ্য কাটা ঘায়ে লাগালে রক্তপড়া বন্ধ হয় ও ঘা শীঘ্র নিরাময় হয়। (পরীক্ষিত ও ফলপ্রদ)।

কুকশিমার পাতার জাব: কুকশিমা বা কুকুর শোকা গাছের পাতা বেঁটে কাটা স্থানে লাগিয়ে দিলে সঙ্গে সঙ্গে রক্তপড়া বন্ধ হয় ও ঘা সৃষ্টি হয় না। ক্ষতস্থানও জোড়া লেগে যায়। (পরীক্ষিত ও ফলপ্রদ)।

গাঁদা পাতার জাব: গাদা ফুল গাছের পাতা ও ডগা বেঁটে জাব তৈরী করে সেই জাব বেঁধে দিলে অতি সাধাতিক রকম কাটা স্থানও জোড়া লেগে যায় এবং রক্তপাত বন্ধ হয়, ঘা হয় না (পরীক্ষিত ও ফলপ্রদ)।

চূণ+নারিকেল তেলের মলম: শামুকের চূণ ও খাটি নারিকেলের তেল একত্রে মেড়ে কাদাটে করে সেই মলম কাটা ঘায়ে লাগালে রক্ত পড়া বন্ধ হয়, ব্যথা থাকে না এবং ঘা শীঘ্র নিরাময় হয়। (পরীক্ষিত ও ফলপ্রদ)।

দূর্বাঘাসের আগা: কোন স্থান আকস্মিকভাবে কেটে গেলে ঐ স্থানে দূর্বাঘাসের কচি সাত-আটটি আগা জল দিয়ে ধুইয়ে ফেলে, চিবিয়ে, লালাসহ চর্বিত দ্রব্য লাগিয়ে দিলে সঙ্গে সঙ্গে রক্ত পড়া বন্ধ হয় এবং ঘা সৃষ্টি হয় না। (পরীক্ষিত ও ফলপ্রদ)।

গাবের ক্বাথ: কাচা গাব সিদ্ধ করে ক্কাথ বানিয়ে, সেই ক্কাথ ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে পুরাতন কাটা ঘায়ে প্রলেপ দিলে-উক্ত ঘা দ্রুত নিরাময় হয়।

খ) গালে ঘা: সাধারণতঃ শিশুদের গালে ও জিহ্বায় ঘা হলে সােহাগা খােলায় ভেজে খৈ করে উক্ত খৈ গুঁড়া করতে হয়। তারপর সেই খৈ মধু দ্বারা মিশিয়ে গালে ও জিভেয় প্রতিদিন দু'তিনবার করে কয়েকদিন লাগালে ঐ রােগ নিরাময় হয়। (পরীক্ষিত ও ফলপ্রদ)।

গ) জিভেয় ঘা: জিহ্বায় ঘা’ হ'লে তা নিরাময়ের জন্য নিম্নোক্ত ‘মাজন ব্যবহার্য। মানি সােহাগা, ফিটকিরি, জোয়ান, কুঁতে, গুটি খয়ের ও হিরার কষ আলাদা আলাদাভাবে ভেজে গুড়া করে, সেই গুড়া প্রত্যহ দু-তিন বার গালে ও জিহ্বায়-ক্ষত স্থানে মাখালে উক্ত ক্ষত নিরাময় হয়। (পরীক্ষিত ও ফলপ্রদ)। (উক্ত দ্রব্যসমূহের মধ্যে উঁত, হিরার কষ ও ফিটকিরি পরিমাণে একটু কম দিতে হয়। অন্যগুলাে চারি আনা পরিমাণে ব্যবহার করলে চলে)।

ঘ) নালি ঘা: নালি ঘা চিকিৎসার জন্য নিম্নোক্ত উপায় অবলম্বনীয়।

নিমপাতা+ঘি: ঘি দ্বারা নিম পাতা ভেজে সেই নিম পাতা পুরানাে ক্ষত বা নালি ঘা-এ লাগালে তা আরােগ্য হয়। মহাসমুদ্রের মূল পুরানাে নালি ক্ষত মহাসমুদ্রের মূল ঘষে লাগলে, ঘা ধীরে ধীরে পুরে ওঠে এবং শীঘ্র নিরাময় লাভ করে।

হুঁকোর জল+আপাং পাতা: হুঁকোর জলর সঙ্গে আপাং-এর পাতা বেঁটে পুরানাে ক্ষতে প্রলেপ দিলে, ক্ষত দ্রুত আরােগ্য হয়। প্রলেপ প্রত্যহ দুবার করে নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত লাগানাে আবশ্যক।

ঙ) পায়ের অঙ্গুলির মধ্যস্থ ঘা: সাধারণত আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে কাদার মধ্যে অতিরিক্ত চলাফেরা ও কাজ করার জন্য পায়ের আঙ্গুলি-সন্ধিতে যে ঘা হয়-তা নিরাময়ের জন্য নিম্নোক্ত ঔষধ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আঁচ পোড়া শুকানাে নারকেলের আঁচা বা মালা পুড়িয়ে কাঁসার থালায় একটু কাত ক'রে ঢেকে রাখলে এক প্রকার লাল তৈল নির্গত হয়। ঐ তেল প্রত্যহ রাতে শােবার আগে অঙ্গুলিসন্ধির ঘায়ে উপর্যুপরি কয়েকদিন মাখলে ঘা আরােগ্য হয় এবং নতুন ঘা হয় না। (পরীক্ষিত ও ফলপ্রদ)।

তুষ-তেল: তুষ পুড়িয়ে তেল বানিয়ে সেই তেল পায়ের অঙ্গুলিসন্ধির ঘায়ে প্রয়ােগ করলে, ঘা আরােগ্য হয়। পর পর কয়েকদিন রাতে উক্ত তেল ব্যবহার করা আবশ্যক। (পরীক্ষিত ও ফলপ্রদ) (তেল তৈরীর নিয়ম: হাঁড়িতে তুষ দিয়ে জ্বাল দিলে, যখন তুষ পুড়ে, ধোয়া বের হওয়া শুরু হয় তখন হাঁড়ির মধ্যে একটি কাঁসার বাটি বসিয়ে দিয়ে, হাড়ির উপর আর একটি জল পূর্ণ মেটে পাত্র বসিয়ে, কাদা দিয়ে এমনভাবে মুখবন্ধ করা দরকার, যাতে হাড়ির ধোয়া বাইরে বেরােয়। তারপর জ্বাল বন্ধ করে কিছুক্ষণ রাখলে, বাটিতে যে লাল তরল পদার্থ জমে তাকেই ‘তুষ-তেল’ বলে। 

চ) পােড়া ঘা: পুড়ে বা কেটে গেলে উক্ত নিম্নোক্ত প্রকার তেল তৈরী করে মাখলে ঘা নিরাময় হয়। তৈল পাক খাটি সরিষার তেল আধসের জ্বাল দিয়ে টগবগ করে ফুটিয়ে উক্ত তেলের মধ্যে দশ পনেরােটা কেঁচো ছেড়ে দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। এরূপ জ্বালাতে জ্বালাতে তৈল এক পােয়া থাকতে নামিয়ে সেঁকে পরিষ্কার শিশিতে ভরে রেখে সেই তেল প্রত্যহ দু'তিনবার ঘায়ে লাগাতে হবে। এই তেল লাগালে ‘নালি ঘা'ও আরােগ্য হয়।

Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url