মোজা পড়ে পায়ের দুর্গন্ধ হলে করণীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা

পা ও জুতাের গন্ধ

শীতের সময় অনেকের ক্ষেত্রে, জুতাে খােলার সাথে সাথে দমবন্ধ হওয়া দুৰ্গন্ধ বের হয়। অথচ বছরের অন্যান্য সময়ে এমনটি হয়না। এমনটি কেন হয়?

শীতকালে সব সময় জুতাে পরে থাকার কারণে পায়ের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। যেহেতু এ সময় শরীরের অন্যান্য অংশ ঠাণ্ডা থাকে তাই সেখান থেকে ঘাম বের হয় না। আর জুতামােজা পরা অবস্থায় পা গরম থাকে বলে সেদিক দিয়েই ঘাম বেরােনাের ধু লেগে যায়। এই অতিরিক্ত ঘাম ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে দুর্গন্ধ তৈরি জুতার দুর্গন্ধ প্রতিরােধে করণীয় জুতা খােলার সাথে সাথে পা থেকে এমন দুর্গন্ধ বের হতে থাকল যে, একেবারে দম বন্ধ হয়ে যাবার মতাে অবস্থা। ভদ্রতার কারণে বলাও যায় না যে, আপনার পা থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে; সুতরাং পা ধুয়ে আসুন। তার মাথা খেয়ে যদিও বলা যায় যে— পা ধুয়ে আসুন, তাতেও লাভ নেই। কিছুক্ষণ পর আবার পা থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। বুদ্ধিমানরা হয়ত বুদ্ধি করে জুতাই খােলেন না। কিন্তু এটা তাে আর সমাধান হলাে না। চাই এর সমাধান। আবার অনেকে এর সমাধানের প্রয়ােজন বােধ করেন না। কারণ তাঁদের ধারণা যে, শীতকালে তাে পায়ে গন্ধ হবেই। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কি আছে! না, এ জাতীয় ধারণা মােটেও ঠিক নয়। প্রথমে আসা যাক শীতকালে পা অতিরিক্ত ঘামে কেন?

শীতকালে সব সময় জুতা এবং মােজা পরে থাকাতে পায়ের তাপমাত্রা বেড়ে যায় শরীরের অন্যান্য অংশ থেকে। যেহেতু শরীর ঠাণ্ডা, তাই শরীরে ঘাম হয় না। কোথাও না কোথাও দিয়ে ঘাম বের হবেই, যেহেতু পায়ের তাপমাত্রা বেশি, তাই পা দিয়েই ঘাম বেশি বের হয়। এই অতিরিক্ত ঘামে ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে দুর্গন্ধ তৈরি হতে থাকে। এই দুর্গন্ধ কিন্তু প্রথমে মােজাতে লাগে এবং আস্তে আস্তে সমস্ত জুতাতে গন্ধ লেগে যায়। তাই জুতাতে গন্ধ লাগার আগেই মােজা বদলাতে হবে। অর্থাৎ একই মােজা পর পর ২ দিন পরা যাবে না। যদি একবার জুতাতে গন্ধ লেগে যায়, তখন আর মােজা বদলে কোন লাভ হয় না। কারণ তখন জুতাই গন্ধের আঁধার হয়ে যায়। সুতরাং শীত আসার পূর্বেই প্রথম থেকে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত (প্রতিদিন মােজা বদলে পরা)। এছাড়াও দুর্গন্ধ যেন না হয়, তার কিছু চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে যেমন— পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট-এর কয়েকটি দানা হালকা কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে পা প্রতিদিন ২০ মিনিট ভেজাতে হবে-একাধারে ২ সপ্তাহ। পরবর্তীতে সপ্তাহে ১ বার ভেজালেই চলবে। তবে এখানে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে-পটাশের দানা এমন পরিমাণ মেশাতে হবে (কুসুম গরম পানিতে) যেন পানির রং হালকা বেগুনি হয়। বেশি গাঢ় রং হলে পায়ে পটাশের দাগ পড়বে এবং পা বেশি শুষ্ক হয়ে চুলকানির সৃষ্টি হতে পারে। যদি পটাশের দানা মেশাতে গিয়ে পানির রং গাঢ় হয়ে যায়, তবে আরও পানি মিশিয়ে রং হাল্কা বেগুনি করে নিতে হবে। এই পটাশের প্রভাবে পায়ে একটু কম ঘাম অনুভূত হবে এবং ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমে যাবে (যে ব্যাকটেরিয়া ঘাম থেকে দুর্গন্ধ তৈরি করে)। এইভাবে দুর্গন্ধের পরিমাণ সহনীয় অবস্থায় নিয়ে আসা যাবে।

মােজা ও জুতাের গন্ধ প্রতিরােধে

শীতে জুতাে ও মােজার এই দুর্গন্ধ থেকে রেহাই পেতে আগাম কী ব্যবস্থা নিতে হবে?

একই মােজা পরপর ২ দিন পরা যাবে না। মােজা বদলে নিতে হবে। প্রতিদিন মােজা বদলে নেয়া ভাল। মােজা খােলার পর মােজা মেলে রাখতে হবে, জুতাের মধ্যে রাখা যাবে না। এছাড়া জুতাে খােলার পর পা সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

পায়ের দুর্গন্ধ থেকে জুতার দুর্গন্ধ কারাে কারাে ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রতিদিন মােজা বদল করেও পায়ের দুর্গন্ধ যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে করণীয় কী?

পায়ের ঘাম ও ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে সৃষ্ট দুর্গন্ধ পা থেকে মােজায় যায় এবং মােজা থেকে জুতােয় যায়। জুতােতে এই দুর্গন্ধ লাগতে কিছুটা সময় নেয়। কাজেই জুতােতে গন্ধ লাগার আগেই মােজা বদলাতে হবে, পা পরিষ্কার রাখতে হবে। যদি একবার এই গন্ধ জুতােতে লেগে যায় তখন আর মােজা বদলে লাভ হয় না। কারণ জুতােই হল তখন দুর্গন্ধের আধার।

পায়ের দুর্গন্ধের চিকিৎসা

আবার নিয়মিত মােজা বদলানাের পরও কারাে কারাে পা থেকে গন্ধ যায় না। যদিও জুতােতে গন্ধ নেই। পায়ের দুর্গন্ধ দূর করার উপায় কী?

সাধারণভাবে সাবান দিয়ে পা ধােয়ার পরও কারাে কারাে ক্ষেত্রে পায়ের দুর্গন্ধ রয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের কয়েকটি দানা হালকা কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে পা প্রতিদিন ২০ মিনিট ভেজাতে হবে-একাধারে ২ সপ্তাহ। পরবর্তীতে সপ্তাহ ১ বার করে প্রতিরােধক হিসেবে ভিজালে গন্ধ হবে না, কম হবে। তবে পটাশের দানা এমন পরিমাণ মেশাতে হবে যে পানির রং হালকা বেগুনি হয়। বেশি গাঢ় হলে পায়ে পটাশের দাগ পড়বে এবং পা শুষ্ক হয়ে চুলকানির সৃষ্টি হতে রে।

পায়ের ঘাম প্রতিরােধ

জুতা-মােজা পরার পর কারাে কারাে পা খুব বেশি ঘামে, বেশি ঘামলে দুর্গন্ধ বেশি হয়। তাই পা যাতে কম ঘামে সেরকম কোনাে ব্যবস্থা আছে কিনা?

কুসুম গরম পানিতে হালকা রঙ সৃষ্টিকারী পরিমাণের পটাশ দিয়ে তাতে পা ২০ মিনিট ভেজালে পটাশের প্রভাবে পায়ে একটু কম ঘাম অনুভূত হবে এবং ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমে যাবে। এই ব্যাকটেরিয়াই ঘামের দুর্গন্ধের জন্য দায়ী। এভাবে ২ সপ্তাহ করার পর পরে প্রতি সপ্তাহে ১ বার করে যে কেউ (যাদের পায়ে দুর্গন্ধ নেই তারাও দুর্গন্ধ প্রতিরােধ করতে ও ঘাম কমাতে) এটি করতে পারেন।

Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url