শীতে ঠোঁট, পা ও ত্বকের যত্নে করনীয় গুরুত্বপূর্ণ টিপস

শীত থেকে সুরক্ষা। শীতে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যায়। তাই ত্বকে শুষ্কতার সমস্যা হবে অনেকের। সেই সুযােগে কসমেটিক্সের দোকানে বিভিন্ন ধরনের অয়েল, ময়েশ্চারাইজের এবং ইমােলিয়েন্টের বিক্রি বাড়বে। শুষ্কতার প্রকারভেদের ওপর ভিত্তি করে এর ব্যবহার নির্ভর করে। তবে প্রথমেই যে বিষয়টি জানা দরকার তা হচ্ছে অতিরিক্ত সাবান ব্যবহারে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব (সেবাম) কমে যায় এবং ত্বকের শুষ্কতা বেড়ে যায় বিশেষ করে শীত কালে। তাই শুষ্কতার সমস্যা যাদের আছে তারা সাবান একটু কমই ব্যবহার করবেন। আর যদি করতেই হয় তবে বিভিন্ন ধরনের গ্লিসারিন সােপ বা ক্ষারের পরিমাণ নেই বা খুব কম যেমন Dove Soap বা Oilatum Bar ইত্যাদি ধরনের সাবান ব্যবহার করাই মঙ্গলজনক। ত্বকে যদি সামান্য শুষ্কভাব হয় তবে যে কোন অয়েল ব্যবহারই যথেষ্ট, যেমন অলিভঅয়েল বা বেবি অয়েল। শুষ্কতার পরিমাণ যদি একটু বেশি হয় তবে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারই উত্তম। 

কসমেটিক্সের দোকানে বিভিন্ন নামে ময়েশ্চারাইজার পাওয়া যায়, তবে গ্লিসারিনই হচ্ছে সবচেয়ে ভাল ময়েশ্চারাইজার। ময়েশ্চারাইজার অবশ্য ত্বকে অর্থাৎ গােসলের পর শরীর মুছে ত্বকে ভেজাভাব থাকা অবস্থাতেই মেখে দিতে হবে। গ্লিসারিন মাখার ফলে সৃষ্ট অতিরিক্ত আঠাভাব অনেকের পছন্দ নয়। সেক্ষেত্রে ভেজা তােয়ালে বা গামছা কিংবা যে কোন ভেজা কাপড় চিপে নিয়ে আস্তে এবং আলতাে ভাবে চেপে চেপে অতিরিক্ত আঠাভাব উঠিয়ে নেয়া সম্ভব। তবে ঘষা বা ডলা দেবেন না, তাতে পুরাে গ্লিসারিনই মুছে যেতে পারে। শুষ্কতার কারণে যদি ত্বক ফেটে চৌচির হয়ে যায়, বিশেষ করে পায়ের গােড়ালি এবং ঠোট, তবে ইমােলিয়েন্ট ব্যবহার করতে হবে। কসমেটিক্সের দোকানে বিভিন্ন ধরনের দামী ইমােলিয়েন্ট পাওয়া যায় -Oilatum emollient (এটি অবশ্য ওষুধের দোকানেও পাওয়া যায়)। শিশুদের ত্বকে এটি খুবই উপকারী। তবে সাধারণের জন্য সবচেয়ে ভাল ইমােলিয়েন্ট হচ্ছে ভেসিলিন। ভেসিলিন যে কোন অবস্থাতেই (শুষ্ক অথবা ভেজা ত্বক) মাখা যায়, তবে ভেজা অবস্থায় মাখলে উপকার বেশি। ঠোটের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ৩ বেলা আহারের পরপরই আহারের সময় ঠোট অনেকক্ষণ যাবত ভিজতে থাকে এবং আহার শেষে সাথে সাথেই ভেসিলিন ঠোটে মেখে দিলে ভেজা ভাবটা থেকে যায় এবং ফাটা থেকে ঠোট রক্ষা পায়। তবে সাবধান, জিহ্বা দিয়ে ঠোট ভিজানাের চেষ্টা করবেন। এতে ঠোট ফাটা তাে কমবেই না, উপরন্ত এলার্জি ভাব দেখা দেবে এবং এই এলার্জি ঠোটের আশপাশের ত্বক পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। 

পায়ের গােড়ালি ফাটাকে ঝামা দিয়ে ঘষে দূর করা অনেক সময় ক্ষতিকারক হতে পারে, সােরিয়াসিস-এর প্রবণতার কারণে যদি গােড়ালি ফাটে তবে অতিরিক্ত ঘষাতে সােরিয়াসিস বেড়ে যেতে পারে। তবে গােসলের সময় পায়ের গােড়ালি সামান্য ঘষে তাতে ভেজাভাব থাকা অবস্থায় ভেসিলিন মাখলে গােড়ালি ফাটবে না। শীতে পা অতিরিক্ত ঘামে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অলসতার কারণে প্রতিদিনের মােজা প্রতিদিন যদি ধৌত করা না হয়, রাতে ঘুমানাের আগে পা যদি ভালভাবে ধােয়ার অভ্যাস না থাকে তবে পায়ে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হবে। পায়ের বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং অতিরিক্ত ঘাম মিলে এই দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। তাই জুতােয় গন্ধ লেগে যাওয়ার পূর্বেই মােজা বদলে নিতে হবে। পা ধুয়ে নিতে হবে। জুতােতে গন্ধ লেগে গেলে আর মােজা বদলে লাভ নেই। তখন জুতােই গন্ধের আঁধার হয়ে যাবে। যাদের অতিরিক্ত দুর্গন্ধ হওয়ার প্রবণতা থাকে তাদের ক্ষেত্রে পায়ের ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণে এবং ঘামভাব কমাতে পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট-এর কয়েকটি দানা হাল্কা কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে ২০ মিনিট তাতে পা ভেজাতে হবে, একাধারে ৭-১৪ দিন। পরবর্তীতে সপ্তাহে ১ বার পা ভেজালেই হবে। তবে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে-পানিতে। পটাশের পরিমাণ যেন বেশি না হয়। পানির রং হাল্কা বেগুনি হতে হবে, অতিরিক্ত পটাশে রং গাঢ় হবে এবং তাতে ত্বক বেশি শুষ্ক হয়ে ফেটে গিয়ে এলার্জির মতাে সমস্যা হতে পারে। 

পায়ের গােড়ালি ফাটা রােধে শীতে কিছুটা সময় হলেও প্রতিদিন গােড়ালি ঢাকা থাকে এমন স্যাণ্ডেল বা জুতাে পরা উচিত। বিশেষ করে ঘরে বাইরে ধূলিময় পরিবেশে জুতাে পরলে গােড়ালিতে ময়লা লাগার সুযােগ থাকে না এবং পা বেশি শুষ্কও হতে পারে না। আর খালি পায়ে হাঁটা যাবে না। সব সময় খােলা স্যাণ্ডেল পরলেও পায়ের গােড়ালি ফাটে। পায়ে মােজাও পরা যেতে পারে। মােট কথা, শীতে ত্বককে রক্ষার জন্য ত্বক পরিষ্কার রেখে তাতে ক্রিম মেখে দিতে হবে আর হাত পা বারবার না ভেজানােই ভাল। ভেজালে ভাল করে ধুয়ে মুছে সঙ্গে সঙ্গে ক্রিম লাগাতে হবে। এভাবেই ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করে ত্বককে সজীব রাখবে চেষ্টা করতে হবে।
Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url