নবজাতকের ৬টি চর্মরোগের চিকিৎসা ও ঔষধ

নবজাতকের ৬ টি চর্মরােগ

জন্মের পর পরই শিশুদের কিছু কিছু চর্মরােগ দেখা যায়। যা কি-না খুব স্বাভাবিকভাবেই হয়ে থাকে অথবা অজ্ঞতার কারণেও এ জাতীয় সমস্যার সৃষ্টি হয়। শিশুর। সঠিক পরিচর্যা, সময়মতাে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে অতি সহজেই এ জাতীয় জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

Prickiy Heat বা ঘামাচি: দিনের তাপমাত্রা বেশি থাকা অবস্থাতেও আমাদের মা, চাচিগণ নবজাতককে চারদিক থেকে বিভিন্ন গরম কাপড়ে জড়িয়ে রাখেন এবং এর ফলে কয়েক ঘন্টার ভিতরেই ঘামাচির সৃষ্টি হয়। প্রথম পর্যায়ে যে জাতীয় ঘামাচির সৃষ্টি হয়। তা দেখতে সাদা অথবা লাল রং বিশিষ্ট পানি পানি গােটা আকারে দেখা দেয়। এ জাতীয় ঘামাচি চেনার মূলমন্ত্র হচ্ছে যে, ঘামাচি কখনও লােমের গােড়াতে হয় না। ঘামাচিকে যদিও মনে হতে পারে সাধারণ ব্যাপার, কিন্তু এ থেকে অনেক জটিল সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন-এ থেকে শরীরের অনেক ফোড়ার সৃষ্টি হতে পারে যা সারানাে একটু কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আবহাওয়া যদি গরম থাকে তবে জন্মের পর শিশুকে একটু খােলামেলা রাখা উচিত। ঘরের জানালা খােলা থাকা উচিত। ঘামাচিতে যে কোন ট্যালকম পাউডারের ব্যবহারের উপকারে আসে।

Erathema Toxicum Neonatorum বা মাসিপিসি: গ্রামে মা-চাচিগণ এ জাতীয় চর্মরােগকে মাসিপিসি বলে থাকেন এবং এটি নবজাতকদের হয়েই থাকে বলে তাদের ধারণা। সত্যিই এটি খুব সাধারণ ব্যাপার। জন্মের তিন থেকে চারদিনের দিন শিশুর শরীরে লাল লাল র্যাশ (Rash) দেখা দেয়। এর সাথে জ্বর বা অসুস্থতার অন্য কোন উপসর্গ থাকে না। দশদিনের দিন কোন ধরনের ওষুধ ছাড়াই এটি ভাল হয়ে যায়।

Diaper Rash বা ন্যাপকিন র্যাশ: লেঙ্গট বা জাঙ্গিয়া পরিধানে নবজাতকের লাল লাল ভাব নিয়ে এলার্জির ন্যায় র্যাশ দেখা দিতে পারে। এ জাতীয় র্যাশ শরীরের যে সমস্ত স্থান কাপড়ের সংস্পর্শে আসে সেই জায়গায় হয়ে থাকে। অর্থাৎ উরুতে বা গাদিতে (hip) হবে, তবে উরুর ভাঁজ বা কুঁচকি বা গাদির ভাঁজে হবে না। এমতাবস্থায় কাপড় সাময়িকভাবে বর্জন করা উচিত এবং সাথে ফাঙ্গিডাল-এইচসি নামক ক্রিম দৈনিক ২ বার কিছু দিন ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়। একটি বিষয় এখানে জরুরী, যে সমস্ত বাচ্চার ন্যাপকিন সারা রাতে একবারও বদলানাে হয় না তাদেরই এ সমস্যাটি বেশি হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে পায়খানাতে অবস্থিত জীবাণু ও প্রস্রাবের ইউরিয়া থেকে এ্যামােনিয়া তৈরি করে এলার্জির সৃষ্টি হয়।

Candidiasis বা ফাঙ্গা: নবজাতকের মুখের ভিতর বিশেষ করে জিহ্বাতে দুধের সরের মতাে আস্তরণ দেখা দেয়। সুস্থ সবল শিশুর ক্ষেত্রেও এ জাতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে। মা-চাচীগণ এ জাতীয় সমস্যায় নরম কাপড়ে সরিষার তেল লাগিয়ে ঘষে পরিষ্কার করার চেষ্টা করে থাকেন। এত জিহবা পরিষ্কার হতে এবং ফাঙ্গাস হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে। নিস্ট্যাট ড্রপ আক্রান্ত স্থানে কয়েক ফোটা দৈনিক ৩/৪ বার লাগিয়ে দিলে কয়েকদিনের মধ্যেই এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। যে সমস্ত জায়গা সব সময় ভিজা থাকে, যেমন— কুঁচকি, পায়খানার রাস্তার আশপাশ, গলার ভাঁজ, সে সমস্ত জায়গাতেও Candida দিয়ে ইনফেকশন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানের চামড়া লাল লাল ভাব হয়ে যায় এবং এর ওপর সাদা সাদা ছােপ দেখা দেয় এবং প্রচণ্ড চুলকায়। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে আক্রান্ত স্থানকে অবশ্যই শুকনাে রাখতে হবে। পেভারিল ক্রিম দৈনিক ১/২ বার আক্রান্ত স্থানে মাখলে উপকার পাওয়া যায়।

Cradle Cap বা মাথায় খুশকির মতাে: কোন কোন নবজাতকের মাথায় হলুদ অথবা বাদামী রঙের খােসা বা চামড়া পুরু হয়ে জমতে দেখা যায়। কখনও কখনও বাজে গন্ধ হয় এবং তেলতেলে ভাব দেখা যায়। এটি ৬ মাস বয়সে নিজে থেকেই ভাল হয়ে যায়। সাময়িকভাবে পরিষ্কারের জন্য অলিভ অয়েল বা অয়েলাটাম রাতে মেখে সকালে গােসল করতে পারেন।

Scabies বা পাঁচড়া: চুলকানি, খােস পাঁচড়া ছোঁয়াচে রােগ। নবজাতককে একবার কোলে নেয়ার জন্য আত্মীয়স্বজন সবাই অধীর আগ্রহে অপক্ষো করতে থাকে। এর ভিতর একজনের যদি সামান্য খােস-পাঁচড়াও থাকে তা অতি সহজেই নবজাতককে আক্রান্ত করে। প্রতিটি আঙ্গুলের ভঁজে, কজিতে, হাত ও পায়ের তালুতে, বগলে, নাভি, যৌনাঙ্গে গাল এমনকি সমস্ত শরীরে ছােট ছােট গােটা আকারে চুলকানি দেখা দেয়। অতিসত্ত্বর একজন চর্মরােগ বিশেষজ্ঞের অধীনে এর চিকিৎসা নেয়া উচিত। কারণ খােস পাঁচড়াগুলাে থেকে কখনও কখনও কিডনি আক্রান্ত হতে পারে।

Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url