বাচ্চার আঙ্গুল চোষা অভ্যাস এবং মুখ দিয়ে শ্বাস নিলেও দাঁতের গঠন খারাপ হতে পারে

আপনারা নাকি হাসি সুন্দর করে দিতে পারেন? শুধু সুন্দর কেন, অপূর্ব সুন্দর করে দিতে পারি। সংজ্ঞানুযায়ী যেমন হওয়া উচিত ঠিক তেমনই। এই বিষয়ে আরো জানাচ্ছেন: ডাঃ অশােক সুরানা

❍ প্রশ্ন: হাসির আবার সংজ্ঞা আছে?

☛ উত্তর: নিশ্চয়ই।

❍ প্রশ্ন: কী রকম?

☛ উত্তর: এক এক করে বলি।
(১) হাসি হবে চওড়া। যত বেশি দাঁত দেখা যাবে হাসি হবে তত সুন্দর।
(২) মাড়ি দেখা যাবে না।
(৩) সুতোর মধ্যে মুক্তো গেঁথে দিলে যেমন হয়, দাঁতের সারি হবে ঠিক সেরকম।
(৪) পুরাে চওড়া হাসি হাসলে অনেকের হাসির দু'প্রান্তে ঠোট এবং মুখের সংযােগে একটা করে কালাে ত্রিভুজ তৈরি হয়— নেগেটিভ এরিয়া। এটা থাকা মানে হাসির দর পড়ে গেল।

❍ প্রশ্ন: যেমন মুখই হােক আপনারা এরকম হাসি করে দিতে পারেন?

☛ উত্তর: হাসিটা এরকম হয়ে যাওয়ার পর কিন্তু আর ‘যেন মুখ’ ব্যাপারটা থাকবে না। কারণ নাক, দাঁত, চিবুক-এদের সৌন্দর্য একে অপরের উপর নির্ভরশীল। হাসি মুক্তোর মতাে হওয়া মানে নাকের নীচ থেকে চিবুক পর্যন্ত পুরােটাই সুন্দর হয়ে যাওয়া।

❍ প্রশ্ন: কারাের চিবুক উঁচু বা হাসলে মাড়ি বেরিয়ে যায়? কীভাবে সব ঠিক করবেন? কেটেছেটে?

☛ উত্তর: ১৮ বছর বয়স হয়ে গেলে কিছু ক্ষেত্রে কাটতে হাঁটতে হবে। কিন্তু যখন ত্রুটিগুলাে চোখে পড়ে অর্থাৎ ৭-৮ বছর বয়সে এলে কিছু পদ্ধতি করেই ঠিক করে দেওয়া যায়। 

❍ প্রশ্ন: ৭-৮ বছর বয়স মানে তাে দুধের দাঁতও পড়েনি। পরবর্তীকালে দাঁতের গঠন কীরকম হবে সেটা এই বয়সে বােঝা যায় কি?

☛ উত্তর: দুধের দাঁতের উপর নজর না দেওয়াতেই পরবর্তী কালে অনেক সময় দাঁতের গঠন খারাপ হয়ে যায়। ডাক্তারের কাছে গিয়ে নিজে নিজেই দাঁত ঠিক করতে চাইলে এই সময় থেকে সাবধান হওয়া দরকার।

❍ প্রশ্ন: কী রকম?

☛ উত্তর: খেয়াল রাখতে হবে দাঁত যেন অসময়ে পড়ে না যায়। দাঁত কোটা কখন পড়বে তার মােটামুটি একটা নিয়ম আছে। ৭ বছর বয়সে শুরু হয় দাঁত পড়া। প্রথমে পড়ে মুখের সামনের নীচেরটা। তারপর সামনের উপর। নীচের ধারের দাঁতগুলাে ৯ বক্স নাগাদ পড়তে শুরু করে। সবচেয়ে শেষে পড়ে উপরের ধারের দাঁতগুলি। ৯-১১ বছর বয়সের মধ্যে সব শেষ। ১২-১৮র মধ্যে সম্পূর্ণ হয় মােলার থেকে আক্কেল দাঁত ওঠা। সময়ের আগে যদি দাঁত পড়ে, প্রকৃতি সেই ফাঁকা জায়গাটা ভরাট করে দেওয়ার চেষ্টা করবে। ফলে নতুন দাঁত ওঠার সময় জায়গা না পেয়ে এঁকে বেঁকে উঠবে। আবার যদি সময়ের পরে পড়ে, ফাঁকা জায়গা নেই কিন্তু দাঁত উঠে আসছে। অতএব তাকেও আসতে হবে বাঁকা পথে। গজ দাঁতের সৃষ্টি এভাবেই হয়। দাঁত ওঠা পড়া ছাড়াও আরও কয়েকটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে। যেমন
(১) বাচ্চা আঙুল চোষে কিনা,
(২) মুখ দিয়ে শ্বাস নেয় কিনা,
(৩) নীচের চোয়াল মুখের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাড়ছে কিনা,
(৪) সাধারণ ভাবে মুখ বন্ধ করলে উপরের দাঁতের পাটি নিচের দাঁত্রে উপরে থাকে। যদি উল্টো হয় বা উপরের অন্য অভ্যেসগুলির কোনও একটা বাচ্চার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

❍ প্রশ্ন: অনেক সময় তাে দুধের দাঁতে পােকা লাগে। তখন উঠিয়ে ফেলা ছাড়া আর কী রাস্তা আছে?

☛ উত্তর: বাচ্চা খুব কষ্ট পেলে ওঠাতে হতে পারে। তবে ফাঁকা জায়গায় পরবর্তী দাঁত যাতে সুষ্ঠুভাবে আসতে পারে সে জন্য স্পেস মেনটেনাল ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে।

❍ প্রশ্ন: ডিভাইস যদি বাচ্চার পেটে চলে যায়?

☛ উত্তর: পেটে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ঝামেলা এড়াতে চাইলে বাচ্চাকে ঠিকভাবে দেখভাল করুন। এবং পেস্ট দিয়ে দিনে দু'বার সঠিক পদ্ধতিতে দাঁত মাজান। কোনও কিছু খাওয়ার পরই কুলকুচা করিয়ে মুখ ধুইয়ে দিন। বছরে একবার দাঁতের ডাক্তারের সঙ্গে যােগাযােগ করুন।

❍ প্রশ্ন: না পড়লে কী করব?

☛ উত্তর: দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাবে। পাশ দিয়ে দাঁত উঠছে অথচ ওই দাঁতটা পড়ছে না এরকম হলে উনি দাঁতটা তুলে দেবেন।

❍ প্রশ্ন: আঙ্গুল চুষলে কি মুখ কুঁচলাে হয়ে যায়?

☛ উত্তর: ৫ বছর বয়স পর্যন্ত আঙ্গুল চোষার অভ্যেসে কোনও ক্ষতি হয় না। তারপরও চুষলে ক্ষতি শুরু হয়। ৭ বছর বয়সের পরও যারা আঙুল চোষে তাদের উপরের দাতের পাটির গঠন U এর বদলে V এর মতাে হতে থাকে। ফলে মুখ সুলাে হতে শুরু করে।

❍ প্রশ্ন: আঙুল চোষার অভ্যেস বন্ধ করার জন্য আমরা আঙুলে লংকা বা তেতাে লাগিয়ে দিই, এক্ষেত্রেও কি সেটাই করব?।

☛ উত্তর: সে তাে একদম কচি বাচ্চার ক্ষেত্রে কাজে আসে। ৬-৭ বছরের বাচ্চাকে এভাবে মানানাে যাবে না। তাকে বােন প্রথমে। দেখতে খারাপ হয়ে যাবে ‘স’ এর উচ্চারণ করতে গেলে সােজাসুজি উচ্চারণ না হয়ে ‘শিস’ আওয়াজের সঙ্গে হবে ইত্যাদি। কাজে না এলে অভ্যেস নষ্ট করার জন্য কিছু যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে। প্রথম যন্ত্রটি ঘুমােনাের সময় মুখে পরিয়ে দেওয়া হয়। ঘুমের ঘােরে আঙ্গুল ঢােকাতে গেলে কাঁটা বেঁধে হাতে। দ্বিতীয়টা আরও একটু কঠিন। দুদিকের চোয়ালের সঙ্গে আটকে পুরাে সেট করে দেওয়া হয়। মুখ বন্ধ করলেই পর্দা এসে পড়ে দাঁতের সামনে। আঙুল ঢােকানােই যায় না।

❍ প্রশ্ন: মুখ দিয়ে শ্বাস নিলেও দাঁতের গঠন খারাপ হয়ে যায়?

☛ উত্তর: হ্যা, মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যেস থাকলে মুখ হাঁ হয়ে থাকে। ফলে নীচের চোয়াল ধীরে ধীরে নীচের দিকে ঝুলতে থাকে। নাক থেকে চিবুকের দূরত্ব যে রকম থাকলে সুন্দর দেখায় দূরত্ব তার থেকে বেড়ে যায়।

❍ প্রশ্ন: এই অভ্যেস কী করে বন্ধ করা যাবে?

☛ উত্তর: দুটো কারণে মানুষ মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়
(১) শ্বাস প্রশ্বাসের পথে কোনও বাধা থাকলে, যেমন অ্যাডেনয়েড গ্ল্যাণ্ড বড় থাকলে, নাকের মাঝখানের পর্দা বাঁকা হলে (ডি এন এস) ইত্যাদি।
(২) অভ্যেসের ফলে। যদি দেখা যায় কোনও সমস্যা নেই, শুধুই বদভ্যাস, মুখে একটা পদা পরিয়ে দেওয়া হয়। তাহলে নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়া ছাড়া আর পথ থাকে না।

❍ প্রশ্ন: নীচের চোয়াল কম বা বেশি বাড়লে শুনেছি গ্রোথ গাইডেন্স পদ্ধতি’ খুব কাজে আসে।

☛ উত্তর: ঠিক সময়ে ধরতে পারলে অথাৎ ৮-৯ বস্তু বয়সে, খুব কাজে আসে গ্রোথ গাইডেন্স পদ্ধতিটি। কীভাবে করা হয় বলি একটু

❍ প্রশ্ন: কিভাবে করা হয়?

☛ উত্তর: নীচের ঠোঁট আর চোয়াল যদি এগিয়ে থাকে ব্যবহার করা হয় ফেস মাস্ক। কপাল কান ঘিরে চিবুক বরাবর থাকে মুখােশের বেল্ট, কপালের অংশের নাম হেড গিয়ার। সেখান থেকে উপরের চোয়ালকে সামনের দিকে টেনে বাঁধা হয়। মাসে একবার ক্লিপ, তারের বাঁধন পরীক্ষা করে তাকে জোরদার করা হয়। বছর দুয়েক লাগে চিকিৎসার পর্যায় শেষ হতে। কাজ করে বায়ােনেটর। বায়ােনেটর এমন ভাবে জিভের জায়গায় বসে থাকে যে কথা বলতে গেলে বা খাবার খাওয়ার সময় এগিয়ে আসে নীচের চোয়াল। অনবরত এরকম হওয়ার ফলে চোয়ালের বৃদ্ধির হার হয় দ্রুত। অবস্থা আয়ত্তে আসে মাস ৬-৭ মাসের মধ্যে। উপরের চোয়াল এগােলাে হলে হেড গিয়ারের সঙ্গে লাগানাে ক্লিপ উপরের চোয়ালকে টানে পিনে। আর সমস্যা নীচের চোয়ালে হলে, পরতে হয় চিন ক্যাপ।

❍ প্রশ্ন: মুখে দাঁত বেশি থাকলেও তাে দেখতে খারাপ লাগে।

☛ উত্তর: এক্ষেত্রে প্রথমে প্রয়ােজনমতাে দু'চারটে দাঁত তুলে নিয়ে বাকি গুলােকে ঠেলে ঠেলে জায়গামতাে সাজানাে হয়। ঠেলা এবং উচু নিচু দাঁতকে সমতলে আনার কাজটি করে কিছু বিশেষ ধরনের তারের ক্লিপ। দু'বছর ধরে চলে দেখাশােনার পর্ব। মাঝে মাঝে সেরে ওঠার রকম বুঝে বাঁধনের ধরন পাল্টাতে হয়। পদ্ধতির নাম লেবিয়াল টেকনিক। আজকাল এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এসেছে লিঙ্গুয়াল টেকনিক। এখানে বাঁধন থাকে দাঁতের নিচ বরাবর। উপর থেকে কিছু বােঝা যায় না। কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও পদ্ধতিটি তাই জনপ্রিয় হয়েছে। 

Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url