অ্যাপেনডিসাইটিস হওয়ার নানান কারণ ও চিকিৎসা পরামর্শ

কীভাবে বুঝব অ্যাপেনডিসাইটিস হয়েছে? অ্যাকিউট অ্যাপেনডিসাইটিসের কয়েকটি লক্ষণ আছে। তীব্র ব্যথা শুরু হয় পেটে মাঝখানে নাভির কাছ থেকে। ছড়িয়ে পড়ে ডানদিকের তলপেট বরাবর। অল্প জ্বর বা বমি ভাব থাকতে পারে। বমিও হয় কখনও। ডানদিকের তলপেটের একটি বিশেষ অংশ (ম্যাগবার্নিস পয়েন্ট) টিপলে রােগী ব্যথায় প্রায় লাফিয়ে ওঠে। এমন কি তলপেটের বাঁদিক টিপলেও সেই ব্যথা এসে ধাক্কা দেয় ডানদিকে। রােগ নির্ণয়ে বিশেষ অসুবিধে হয়না। সমস্যা হয় ক্রনিক বা রেকারেন্ট অ্যাপেনডিসাইটিসের বেলায়। লাফিয়ে ওঠার মত ব্যথা থাকে না এক্ষেত্রে। ঝিমঝিমে একটা ব্যথা বােধ ছড়িয়ে থাকে ডানদিকের তলপেট ও কোমর জুড়ে। এই বিষয়ে আরো জানাচ্ছেন: ডাঃ অলােক বন্দ্যোপাধ্যায়

❍ প্রশ্ন: ক্রনিক অ্যাপেনডিসাইটিসের বেলায় রােগ নির্ণয়ে সমস্যা হয় কেন? তবে কি কেবল লক্ষণ দেখেই এই রােগ নির্ণয় করেন আপনারা?

☛ উত্তর: প্রায় তাই। বিশেষজ্ঞের সিদ্ধান্ত এবং অন্য রােগের অনুপস্থিতি। মােটামুটি এর উপর ভিত্তি করেই রােগ নির্ণয় হয়

❍ প্রশ্ন: অন্য রােগের অনুপস্থিতি বলতে?

☛ উত্তর: ব্যাপারটা খুলে বলি। অ্যাপেনডিক্স বসে আছে ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্রের মাঝখানে। অবস্থানটা তলপেটের ডানদিকের কোনায়। পাশে আছে সিকাম, কোলন, মহিলাদের ওভারি, টিউব। এগুলির যে কোনও একটিতে সামান্য প্রদাহ হলেই পেট ব্যথা হয়। সেক্ষেত্রে কী থেকে ব্যথা করছে তা ধরা কখনও কখনও সত্যিই বেশ অসুবিধেজনক হয়ে পড়ে। তখন কাজে আসে ডাক্তারের অভিজ্ঞতা।

❍ প্রশ্ন: বেরিয়াম মিল এক্স-রে করে অ্যাপেনডিসাইটিস ধরা যায় না?

☛ উত্তর: কিছু সুবিধে হয়। খুব জটিলতা হলে কখনও কখনও করাতেও হয়। তবে সাধারণভাবে আজকাল আর বেরিয়াম মিল এক্স-রে করানাে হয় না কিছু অসুবিধের কথা ভেবে। বিশেষত কম বয়সী মহিলাদের ক্ষেত্রে। এই এক্স-রেতে অন্তত ৫-৬ টা প্লেট নিতে হয়। ওভারি, টিউবকে অতবার এক্সরের সম্মুখীন করা ঠিক নয়।

❍ প্রশ্ন: তার মানে মােটামুটি অনুমানের ওপর ভিত্তি করেই অ্যাপেনডিক্স অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পর যদি দেখা যায় আদৌ অসুস্থ ছিল না অ্যাপেনডিক্স?

☛ উত্তর: শুধু অ্যাপেনডিসাইটিস কেন অনেক রােগ নির্ণয়ই আমরা অনুমানের ওপর ভিত্তি করে করে থাকি। আর অ্যাপেনডিক্স আদৌ অসুস্থ ছিল কিনা বা অসুস্থতা কী ধরনের ছিল সেটা অপারেশনের পর বায়ােপসি করলেই জানতে পারা যায়।

❍ প্রশ্ন: অ্যাপেনডিক্স বাদ দিলে শরীরের কোনও ক্ষতি হয় না?

☛ উত্তর: না।

❍ প্রশ্ন: অর্থাৎ শরীরে এর কোনও ভূমিকা নেই?

☛ উত্তর: সুস্থ অবস্থায় আছে। সুস্থ অবস্থায় সে টনসিলের মতােই রােগ সৃষ্টিকারী জীবাণুকে নিজের মধ্যে আটকে নিয়ে মেরে ফেলে। অসুস্থ অ্যাপেনডিক্সের আচরণ ঠিক উল্টো। সংক্রমণ ছড়ানাে তার কাজ। কাজেই অ্যাপেনডিক্স অসুস্থ হলে তাকে বাদ দিয়ে দেওয়াই ভাল।

❍ প্রশ্ন: হােমিওপ্যাথি কবে শুনেছি অ্যাপেনডিসাইটিসের সমস্যা কমে যায়?

☛ উত্তর: তা আমি জানি না।

❍ প্রশ্ন: আগে শােনা যেত অ্যাপেনডিক্স ফেটে রােগী মারা গেছেন সেটা কী ব্যাপার?

☛ উত্তর: অনেক সময় মারাত্মক সংক্রমণ হয়ে অ্যাপেনডিক্সে পুঁজ তৈরি হয় এবং তা অ্যাপেনডিক্সের দেওয়াল ভেদ করে পেটের মধ্যে চলে আসে। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা না নিলে এই অবস্থায় রােগী মারাও যেতে পারে। একে বলে অ্যাপেনডিকুলার পারফোরেশন। তবে আজকাল এরকম কমই হয়। রােগী এসে উপস্থিত হলে এমারজেন্সি অপারেশন করে আমরা বরং তাকে সুস্থ করে দিই।

❍ প্রশ্ন: পেট না কেটে এই অপারেশন সম্ভব?

☛ উত্তর: অ্যাপেনডিকুলার পারফোরেশন হয়ে গেলে কেটে অপারেশন করাই শ্রেয়। অন্যথায় রোগী চাইলে ল্যাপারােস্কোপিক পদ্ধতিতে পেটে তিনটে ফুটো করে অপারেশন করা যায়। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে পেট কেটে অপারেশন করাই পছন্দ করি।

❍ প্রশ্ন: কেন?

☛ উত্তর: ল্যাপারােস্কোপিক পদ্ধতির অপারেশন জনীতা পেয়েছে মূলত দুটি কারণে।
(১) শরীরের উপরে কাটাছেড়া খুব কম হয়
(২) রােগী দ্রুত সুস্থ হয়ে কাজকর্মে যােগ দিতে পারেন। অ্যাপেনডিক্স অপারেশন পেট কেটে করলেও এত ছােট করে কাটা হয়
(মিনি ল্যাপ) যে ল্যাপারােস্কোপিক পদ্ধতিতে যে সুবিধে পাওয়া যায় তার থেকে বিশেষ ফারাক থাকে না। এছাড়া পেট কেটে অপারেশন করলে যে কোনও জটিলতা সহজে সামলানাে যায়।

❍ প্রশ্ন: জটিলতা বলতে?

☛ উত্তর: সব অপারেশনের মতাে অ্যাপেনডিক্স অপারেশনেও জটিলতা আছে। সংক্রমণ খুব বেশি থাকলে তাে কথাই নেই, এমনিতেও কখনও অ্যাপেনডিক্স খুঁজে পেতে হন্যে হতে হয়।

❍ প্রশ্ন: ছােটবেলায় যাঁদের টনসিলাইটিস থাকে বড় হয়ে তাঁদেরই নাকি অ্যাপেনডিসাইটিস হয়?

☛ উত্তর: না।

❍ প্রশ্ন: আর যারা নিয়মিত পেটের অসুখে ভােগেন?

☛ উত্তর: অ্যামিবায়ােসিস বা কােলাইটিসে যাঁরা নিয়মিত ভােগেন তাঁদের ক্ষেত্রে অ্যাপেনডিসাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। অনেক সময় আবার কোলাইটিস, বিশেষ করে পেটের ডানদিকের কোলাইটিসের ব্যথার সঙ্গে অ্যাপেনডিসাইটিসের ব্যথা গুলিয়ে যায়। লাগাতার পেটের অসুখ থেকে যেমন অ্যাপেনডিসাইটিস হতে পারে, তেমনই অ্যাপেনডিক্স আক্রান্ত হলে হজমের গােলমাল, অম্বল, পেটে গ্যাস, ইত্যাদি পেটের অসুখ দেখা দিতে পারে। একে বলে অ্যাপেনডিকুলার ডিসপেপসিয়া। অপারেশন করিয়ে নিলে হজমের গণ্ডগােল ঠিক হয়ে যায়।

❍ প্রশ্ন: আর কী কী কারণে অ্যাপেনডিসাইটিস হতে পারে?

☛ উত্তর: পেটের যে কোনও অঙ্গের প্রদাহ থেকেই অ্যাপেনডিক্সে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

❍ প্রশ্ন: অ্যাপেনডিসাইটিস কি যে কাবােরই হতে পারে?

☛ উত্তর: তা পারে। মাছ, মাংস, টিন ফুড বেশি খেলে, খাবারে ফাইবারের পরিমাণ কম থাকলে কোষ্ঠবদ্ধতা হবে। বাড়বে অ্যাপেনডিক্স আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা। 

Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url