শরীরে শক্তি এবং বীর্য বৃদ্ধি করার আয়ুর্বেদিক রসায়ন ঔষধ প্রণালী
শরীরের সকল প্রকার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, শক্তি ও বীর্য বৃদ্ধি করার আয়ুর্বেদিক রসায়ন তৈরি এবং ব্যবহারের নিয়ম।
“যজ্জরাব্যাধিবিধ্বংসি ভেষজং তদ্রসায়নম্”
রসায়ন সংজ্ঞাঃ— যে সকল ঔষধ ব্যবহার করলে, সুস্থব্যক্তির জরা ও যাবতীয় রােগের আক্রমণ আশঙ্কা নিবারিত হয়, তাহাকে রসায়ন বলে। রসায়ন সেবনে আয়ু, স্মৃতিশক্তি, মেধা, কান্তি, বল ও স্বর' প্রভৃতি বদ্ধিত হয়, এবং সহসা কোনরূপ রােগ আক্রমণ করিতে পারে না।
প্রকারভেদঃ —প্রত্যুষে জলের নস্য লইলে, রসায়ন হয়ে থাকে। ইহাদ্বারা পীনস, স্বরবিকৃতি ও কাসরােগের উপশম হয় এবং দৃষ্টিশক্তি বর্ধিত হয়ে থাকে। সুর্যের অনুদয়ে যথাশক্তি জল পান করলে, বাতজ রােগ প্রশমিত হয়ে মনুষ্য দীর্ঘায়ু হয়ে থাকে। নাসিকাদ্বারা জলপান করিতে পারিলে, আরও উপকার দর্শে। ইহাকে উষাপান বলে। অজীর্ণয়ােগে উষাপান বিশেষ উপকারক। অশ্বগন্ধার চুর্ণ চার আনা মাত্রায়, পিত্তপ্রধান ধাতুতে দুগ্ধসহ, বায়ুপ্রকৃতিতে তৈলসহ, বাত-পৈত্তিক প্রকৃতিতে ঘৃতসহ, এবং বাত-শ্লৈষ্মিক প্রকৃতিতে উষ্ণজলসহ ১৫ পনেরো দিন সেবন করলে রসায়ন হয়, এবং শারীরিক কৃশতা নষ্ট হয়ে থাকে। বিদ্ধড়কের মূল চূর্ণ করিয়া, শতমূলীর রসের সাথে ৭ সাতদিন কাল ভাবিত করিয়া, অদ্ধতােলা মাত্রায় তাহা ঘৃতসহ ১ এক মাসকাল সেবন করলে, বুদ্ধি, মেধা ও স্মৃতিশক্তি বর্ধিত, এবং বলি-পলিতাদি নিবারিত হয়ে থাকে। বর্ষাকালে সৈন্ধবলবণের সাথে, শরৎকালে চিনির সাথে, হেমন্তে গুঠের সাথে, শীতে পিপুলের সাথে, বসন্তকালে মধুর সাথে এবং গ্রীষ্মে ইক্ষু গুড়ের সাথে, হরীতকী সেবন করলে, বিবিধ রােগের শান্তি হয়ে, উত্তম রসায়ন হয়। ইহার নাম হরীতকী-রসায়ন বা ঋতু-হরীতকী।
প্রথমতঃ হরীতকী-চূর্ণ। চার আনা মাত্রায় সেবন আরম্ভ করিয়া, সহানুসারে ক্রমশঃ ২ দুই তলা পর্যন্ত মাত্রা বৃদ্ধি করা যাইতে পারে। সৈন্ধব, শুঠ ও পিপুল বিবেচনাপূৰ্ব্বক কম পরিমাণে হরীতকীর সাথে সেবন করা উচিত। অন্যান্য অনুপান হরীতকীর সমপরিমিত গ্রহণ করিবে। ক্রমশঃ এক বৎসরকাল পর্যন্ত ঘৃতের সাথে প্রত্যহ ৫ পাঁচটী, ৬ ছয়টা বা ১০ দশটী পিপুল সেবন করলে, রসায়ন হয়ে থাকে। কতকগুলি পিপুলে পলাশের ক্ষার-জলের ভাবনা দিয়া, পরে তাহা ঘৃতে ভাজিয়া, প্রত্যহ ভােজনের পূৰ্ব্বে ঘৃত ও মধুর সাথে তাহার ৩ তিনটী করিয়া সেবন করলে, শ্বাস, কাস, ক্ষয়, শােষ, হিক্কা, অর্শ, গ্রহণীদোষ, পাণ্ডু, শােথ, বিষমজর, স্বরভঙ্গ, পীনস ও গুল্ম প্রভৃতি পীড়ার শান্তি হয়ে, আয়ুবৃদ্ধি হয়ে থাকে। পূৰ্ব্বদিনের আহার উত্তম রূপে জীর্ণ হইলে, প্রাতঃকালে ১ একটি হরীতকী, ভােজনের পূর্বে ২ দুইটী বহেড়া ও ভােজনের পরে ও চারিটী আমলকী মধু ও ঘৃতের সাথে একবৎসর পর্যন্ত। প্রত্যহ সেবন করলে, নীরােগশরীরে দীর্ঘকাল জীবিত থাকা যায়। নতুন লৌহ পাত্রে ত্রি-ফলার কল্ক লেপন করিয়া, একদিন একরাত্রি রাখিয়া, পরে সেই কল্ক তুলিয়া রাখিবে; মধু ও জলের সাথে উক্ত কল্ক সেবন করলে, উত্তম রসায়ন হয়ে থাকে। আমলকী, কৃষ্ণতিল ও ভৃঙ্গরাজ – সমুদায় সমভাগে ও একত্র বাটিয়া উপ যুক্ত মাত্রায় নিয়মিতরূপে বহুদিন সেবন করলে, কেশ, বর্ণ ও ইন্দ্রিয় বিমল, শরীর নীরোগ, এবং আয়ু বর্ধিত হয়। প্রত্যুহ প্রাতঃকালে ঘৃত ও মধুর সাথে হস্তি কর্ণ পলাশের ছালচুর্ণ সেবন করলে, বল, বীৰ্য্য, ইন্দ্রিয়শক্তি ও আয়ুঃ বর্ধিত হয়।