বাস্তুশাস্ত্র দোষ কি? প্রতিকার ও টিপস্

বাস্তু দোষ কি?

বাস্তুশাস্ত্র প্রবন্ধে আমরা পড়েছি, সংস্কৃত শব্দ বস্তু থেকে বাস্তু শব্দটি এসেছে এবং এর অর্থ “ভূ” বা পৃথিবী। কোন স্থানের আকার, আকৃতি এবং সেই জায়গার সাজসজ্জা বাস্তু নিয়মের অনুরূণ যদি না হয়, তবে সেখানে পঞ্চতত্ত্বের লাভপ্রদ ব্রহ্মন্ডীয় যে শক্তি, সেই শক্তির সেখানে অভাব দেখা যায়। ইহাই হল বাস্তদোষ। সাধারণ ভাবে বলা যায় যে, এই শক্তির অভাবের জন্যে মানুষের জীবনটা নানা রকম ভাবে বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। এবং এই দোষ যদি নিবারণ না করা হয় তাতে মনুষ্য জীবনে নানারকম কষ্ট, বাধা, বিপত্তি এবং নানা রকম রোগ ব্যাধির সামনে পড়তে হয়।

কিভাবে বাস্তুদোষ নিবারণ করবেন?

আপনি যে ভূখণ্ডের ওপরে কোন নির্মাণ কাজ করার আগে আপনাকে দেখে নিতে হবে যে তা বাস্তু সম্মত আছে না নেই। যদি তা বাস্তু সম্মত না থাকে তবে একজন যোগ্য বাস্তুবিদের পরামর্শ মত উপযুক্ত নিয়ম মেনে আপনি ঐ ভূখন্ডকে বাস্তু সম্মত করে নিন। তাতে আপনার সবদিক থেকে মঙ্গল হবে। আপনি সুখে শান্তিতে জীবন নির্বাহ করতে পারবেন।

উপযুক্ত বাস্ত কিভাবে ভাগ্য বদল করতে পারে?

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে, বাস্তুসম্মত বাড়ি তৈরী করলে কি ভাগ্য বদলে যেতে পারে। এটাই স্বাভাবিক। এর উত্তর আরও স্পষ্ট করে বলা সমীচীন যে, বাস্তুশাস্ত্রের সিদ্ধান্তের অনুরূপ ভূমি ভবন এবং বিবিধ বস্তুর প্রয়োগ করে মানুষ আজ প্রাকৃতিক শক্তিকে নিজের অনুকূলে আনতে সক্ষম হয়েছে। বাস্তুসম্মত নির্মাণ এবং তার পরিবর্তনের ফলস্বরূপ পঞ্চতত্ত্বের যে শক্তি তার উপযুক্ত সঞ্চার মানুষের মস্তিষ্ক এবং শরীর হতে শুরু করে। তার ফল হিসেবে আমরা

তার নির্ণয় শক্তি এবং তার কাজকর্ম শুভ হতে শুরু করে, যার ফলে তার ভাগ্যও অনুকূলে আসার প্রবল সম্ভাবনা দেখা দেয়। এর থেকেই আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারি যে বাস্তুশাস্ত্রের সিদ্ধান্তের অনুরূপ বাড়ি তৈরি করা বা তাতে পরিবর্তন করলে ভাগ্য ও বদল যেতে পারে।

বাস্তুদোষের নিবারণ এবং তার পরিণাম

সাধারণত লোক বাস্তুদোষ থেকে মুক্ত হওয়ার পরে তারা তাড়াতাড়ি কোন চমৎকারের অপেক্ষা করতে থাকে যেটা একেবারেই ঠিক নয় বা কোনমতেই উচিত নয়। কোন স্থানের বাস্তু দোষ থেকে উদ্ধার পাওয়ার পর সেখানে দীর্ঘকালীন যে অশুভ শক্তির প্রভাব ছিল তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু সময় অবশ্যই লাগবে। অশুভ শক্তির প্রভাব কেটে যাওয়ার পর যে সুখকর পরিণাম প্রাপ্ত হবে তা চিরকলীন ধরে প্রাপ্ত হোতে থাকবে।

যদিও ব্যবসায়িক এবং আর্থিক দিক থেকে কোন সমস্যা থেকে থাকে অথবা কোন অসফলতার কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তবে বাস্ত দোষ কেটে যাওয়ার পর থেকে দেখা যায় যে, পরিস্থিতি আর ও খারাপ হয়, প্রায় সব কিছু বন্ধ হয়ে যায় এবং সূক্ষ্মভাবে শুভ শক্তির পরিণাম প্রাপ্ত হোতে শুরু করে। তারপর আস্তে আস্তে সমস্ত বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে এগিয়ে চলতে শুরু করে ক্রমশঃ তা উন্নতির পথে এগিয়ে যায়। কিন্তু দেখা যায় যে, স্বাস্থ্য, পড়াশুনা, স্বভাব, আদালতের মামলা, বৈবাহিক জীবন, পারিবারিক পরিস্থিতি ইত্যাদি পালটাতে কিছু সময় বেশী লাগতে পারে।

অনেকসময় দেখা যায় যে, বস্তু বিশেষজ্ঞের একবার নিরীক্ষণ করেই তারা সম্পূর্ণভাবে একসাথে সমস্ত কিছুর পরিবর্তন করার কথা বলে চলে যান। তার ফলে বাস্তু দোষের সমস্যা এবং গৃহস্বামীর অনেকাংশে বিবশতার কারণে সব সমস্যার তাড়াতাড়ি সমাধান সম্ভব হয় না। তাছাড়া ও অনেক লোক এইরকম অসামঞ্জস্য পরিস্থিতির মধ্যে প্রয়োজনীয় দোষগুলি কাটাতে পারেন না এবং সমস্যাগুলি যেন তিন প্রকারে বেড়েই যেতে থাকে।

বস্তুত কোন বাড়ির ফ্ল্যাট, দোকান, অফিস ইত্যাদির ক্ষেত্রে বাস্তু দোষের থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সেখানে শুভ শক্তির সঞ্চার খুব সহজে হোতে শুরু করে, যার ফলে সেই জায়গার লোকেদের মানসিকতারও অনেকাংশে পরিবর্তন দেখা যায়। এর ফলে অন্য দোষের ও পরিবর্তন ও তাড়াতাড়ি হোতে শুরু করে। এইভাবে পঞ্চতত্ত্বের পূর্ণ সমানুপাতিক শক্তির স্থায়ী প্রবাহের পরিণাম স্বরূপ পরিস্থিতির স্থায়ী এবং সুখকর পরিণতি হোতে পারে।

এখানে আরও স্পষ্ট করে বলা যায় যে, ভূখন্ড এবং বাড়িতে যে বাস্তুদোষের নিবারণে জন্য বাস্তু বিশেষজ্ঞ এর পরামর্শ মতোই বাস্ত দোষ কাটানো উচিত। তার সাথে কোন বিদ্বান জ্যোতিষীর দ্বারা পথনির্দেশ ও শাস্ত্রপূর্বক নিয়ম মেনে আস্থা সহকারে গ্রহ শাস্তির কাজ কোন যোগ্য ব্যক্তির দ্বারা করাতে হবে।

টিপস্

১. বাড়ির ঈশান কোণটি সব সময় স্বচ্ছ অথবা পরিষ্কার রাখবেন। এবং অন্য দিক অপেক্ষা এই দিকটা নীচু রাখবেন। এই দিকে কখনই লাল রঙের ব্যবহার করবেন না।

২. উত্তর-পূর্বের দরজা এবং জানলাগুলি সকালে খোলা রাখবেন যাতে বাড়ির মধ্যে শুভ শক্তির প্রবেশ ঘটে এবং সূর্যরশ্মিও যেন প্রবেশ করতে পারে।

৩. দক্ষিণ পশ্চিম দিকটা সব সময় অন্য দিক অপেক্ষা ভারী এবং উঁচু রাখুন।

৪. বিকেল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দক্ষিণ পশ্চিমের দরজা এবং জানলাগুলি বন্ধ রাখুন অথবা ঐ দিকগুলো পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখুন। বাড়িতে বা অফিসে জঙলী পশুপাখী-উদাসী স্ত্রীলোক, যুদ্ধ এবং সমুদ্র মন্থনের ছবি এবং শো-পিস কখনই রাখবেন না বা দেওয়ালে আটকাবেন না।

৫. নদী, পাহাড়, ঝর্ণা ইত্যাদির ছবি বাস্তুসম্মত স্থানে আটকান অন্যথা এই ছবিগুলি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন করে তুলবে।

৬. বাড়িতে যা দরকার নেই এমন জিনিস এবং যেখানে সেখানে যে কোন কিছু লাগাবেন না। তার ফলে শুভ শক্তির প্রভাবে গতিরোধ হয়ে পড়বে এবং অনেক বাধা বিঘ্নের সম্মুখীন হতে হবে।

৭. বাড়ির পরিবেশে যাতে করে কোন শব্দ না দূষিত হয় তা লক্ষ্য রাখার জন্য প্রত্যেক দিন সকালে বৈদিক মন্ত্রের জপ এবং প্রার্থনা অবশ্যই করুন অথবা টেপ বা সিডি চালিয়ে শুনুন।

৮. ঈশান কোণে বাড়ির পুজোর ঘর স্থাপন করবেন বা বাড়ির পুজার ঘরটি সবসময় উত্তর এবং পূর্ব দিকে স্থাপনা করুন যা অত্যন্ত ফলদায়ী হবে।

৯. বাড়ির মেঝেতে এবং সিঁড়িতে কখনই মা লক্ষ্মীর চরণ, স্বস্তিক এবং ওঁ এর স্টীকার কখনই লাগাবেন না।

১০. বাড়িতে যদি কোন বন্ধ ঘড়ি যেন না থাকে ঘড়িটির বন্ধ হওয়া সময় সৌভাগ্যবৃদ্ধিতে বাধা আসতে পারে।

Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url