মন্দির স্থাপনের নিয়ম এবং অশুভ শক্তি থেকে মুক্তির উপায়

ভগবান বিশ্বকর্মা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বাস্তু শাস্ত্রের সিদ্ধান্তে রাজা ভোজ নিজের শ্রেষ্ঠ বিদ্বানদের সহায়তায় প্রজাদের সুখ সমৃদ্ধির কামনার জন্য 'সমরাঙ্গন বাস্তু শাস্ত্র' রূপে সংগৃহীত করেছেন। সমরাঙ্গন বাস্তু শাস্ত্রে একজন সফল ব্যক্তি, পরিবার কুটুম্ব, সমাজ, নগর তথা রাজ্যের সমগ্র বিকাশের জন্য সূক্ষ্মতম বাস্তু সিদ্ধান্তের উল্লেখ আছে।

বাস্তু শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত অনুসারে কোন বাড়ির আসে পাশে কোন দেবী ও দেবতার মন্দির থাকলে তা শুভ বলে মনে করা হয় না। যেখানে বাড়ির কোন দিকে কোন দেবী বা দেবতার মন্দিরের প্রভাব অশুভ হয়, তার সম্বন্ধে একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো।

বাড়ির যে কোন দিকে তিনশো কদম দূরে আছে এমন শিবমন্দিরের প্রভাব অশুভ হয়। বাড়ির বাঁ দিকে যদি কোন দুর্গা, গায়ত্রী, লক্ষ্মী বা অন্য দেবীর মন্দির থাকে তবে তা অশুভ হয়ে থাকে। যদি ঐ মন্দিরে স্থাপিত প্রতিমার দৃষ্টি ঐ বাড়ির ওপর পরে, তবে তা বাস্তুর ক্ষেত্রে খুবই অমঙ্গলজনক হয়। বাড়ির পেছন দিকে ভগবান বিষ্ণু বা তাঁর কোন অবতারের মন্দির থেকে থাকে তবে তা বাস্তুর ক্ষেত্রে অত্যন্ত অমঙ্গলজনক হয়। রুদ্র অবতার ভগবান হনুমানজীর মন্দির শিব মন্দিরের মতই বাস্তুর জন্য অমঙ্গল হয়। ভগবান ভৈরব, নাগ দেবতা, সতীমাতা, শীতলা মাতা ইত্যাদির মন্দির যদি ভূমি থেকে এবং গৃহস্বামীর উচ্চতা থেকে কিছু ছোটো হয় তবে সেখানে কোনো বাস্তু দোষ থাকে না। মন্দিরের পরিসরের মধ্যে আছে এমন গাছের ছায়া বাড়ি ওপর পড়লে তাও এক বাস্তুদোষের মধ্যে পড়ে।

অশুভ শক্তি থেকে মুক্তির উপায়

বাড়ির যে দিকে শিব মন্দির আছে, সেই দিকেই ভগবান গণেশের প্রতিমা স্থাপন করতে হবে। ঐ প্রতিমাটি গৃহস্বামীর ডান হাতের বড় আঙুলের আকারে হতে হবে। ভগবান গণেশের চোখ ঐ শিব মন্দিরের শিবের দিকে স্পষ্টভাবে চেয়ে থাকবে। এইভাবে স্থাপিত ভগবান গণেশের প্রতিমাতে সিঁদুর এবং ঘি লাগিয়ে যেতে হবে।

শিব মন্দির যদি বাড়ির সামনে হয় এবং তার প্রধান দরজাটি বাড়ির ঠিক সামনে হয় তবে বাড়ির প্রধান দরজাটির ফ্রেমের নীচের অংশটিতে তামার সাপ পুঁতে বা লাগিয়ে দিতে হবে। ঐ সাপটি যেন সামনের মন্দিরে শিবলিঙ্গের উপর স্থাপিত যে সাপটি আছে তার আকৃতির মতো হতে হবে।

ভগবান ভৈরবনাথের মন্দির যদি বাড়ির ঠিক সামনে হয় তবে আপনি আপনার বাড়ির প্রধান দরজায় রোজ কুকুরকে রুটি খাওয়াতে পারলে ভাল হয়।

কোন মন্দিরের কারণে উৎপন্ন বাস্ত দোষ নিবারণ করার জন্য ঐ দেবীর অস্ত্রের প্রতিরূপ অস্ত্র আপনার বাড়ির প্রধান দরজায় আটকানোর চেষ্টা করুন। এই প্রতীকটি বাশ, লাঠি, মাটি, রূপো, তামা অথবা মিশ্র ধাতুর হলে ভালো হয়। যদি আপনি তা করতে না পারেন তবে আপনি রঙ দিয়ে প্রতীকটির আকৃতি বাড়ির প্রধান দরজায় আঁকতে পারেন। অথবা তার ছবি ও আপনি আটকাতে পারেন। পাথর অথবা লোহার তৈরী অস্ত্রের প্রতিরূপ কখন বাড়ির প্রধান দরজায় আটকাবেন না।

যদি দেবী প্রতিমার হাতে কোন অস্ত্র না থাকে তবে আপনি দেবীর বাহনের ছবি ও আপনার বাড়ির প্রধান দরজায় আটকাতে পারেন। বলা যায় যে, মা সীতা, রাধা, রুক্মিণী, লক্ষ্মী ইত্যাদি দেবীর হাতে কোন অস্ত্র থাকে না। এইসব দেবীদের সাথে তাদের স্বামীদের হাতে ও যেন কোন অস্ত্র না থাকে। এই সব কারণে তাদের প্রধান মন্দির মনে করে বাস্তুর দোষ কাটানোর উপায় করলে খুবই ভালো হয়।

বাড়ির সামনে ভগবতী লক্ষীর মন্দির থাকে তবে আপনি আপনার বাড়ির দরজায় পদ্মফুলের ছবি আটকান অথবা ভগবান বিষ্ণুর ছবি লাগিয়ে তাতে প্রত্যেকদিন পদ্মফুলের মালা পড়ান অথবা বাড়ির উঠোনে প্রত্যেকদিন নানারকম রঙ দিয়ে আলপনা দিন।

ভগবান বিষ্ণু এবং তাঁর অবতারদের কারণে উৎপন্ন বাস্তু দোষ থেকে মুক্তি পাবার উপায়গুলি হল:

যদি মন্দিরটি ভগবান বিষ্ণুর হয় এবং তা থেকে বাস্ত দোষ সৃষ্টি হয়, তবে বাড়ির ইশান কোণে রূপো অথবা তামার উপর ভিত্তি করে দক্ষিণাবর্তী শব্দটি স্থাপন করে তাতে প্রত্যেকদিন জল ভর্তি কতে হবে ও পুজো করতে হবে। সকালে শব্দটিতে জল ভরে ঘরের সর্বত্র ছিটিয়ে দিতে হবে। এই শব্দটিতে সব সময় জল ভরে রাখতে হবে। যদি প্রতিমাটি চতুর্ভুজ হয় তবে তবে প্রধান দরজায় বাড়ির গৃহস্বামীর বড় আঙুলের মাপের পিতলের গদা ও লাগাতে বা আটকাতে হবে।

ভগবান বিষ্ণুর অবতার রামের মন্দিরের জন্য যদি বাস্তু দোষ সৃষ্টি হয় তার থেকে মুক্তি পাবার জন্য বাড়ির প্রধান দরজায় তাঁর ছাড়া ধনুকের ছবি তৈরী করে লাগাতে হবে। আর যদি ভগবান কৃষ্ণের মন্দির হয় তবে এইসব ক্ষেত্রে একটা গোলাকার চুম্বককে সুদর্শন চক্রের রূপে প্রতিষ্ঠিত করে স্থাপিত করতে হবে। যদি অন্য কোন অবতারের মন্দির হয় তবে বাড়ির প্রধান দরজায় পঞ্চমুখী হনুমানের ছবি আটকালে ভালো হয়।

বাড়ির কাছে মন্দিরের লাগোয়া যে গাছ আছে তার ছায়া বাড়ির ওপর পড়ার কারণে বাস্ত দোষের সৃষ্টি হতে পারে। তা থেকে মুক্তি পাবার জন্য বাড়ির দক্ষিণ পশ্চিমের মধ্যে যে নৈঋত কোনটি সব থেকে উঁচু করে তাতে, ত্রিশূল, লাল ঝান্ডা অথবা একাকী শ্রীফল স্থাপন করতে পারলে খুবই ভালো হয়। বাড়ির কাছের মন্দিরটিতে প্রতিদিন দর্শন করতে যাওয়াটা খুবই মঙ্গলজনক। এই কারণে মন্দিরে দর্শন করতে যাওয়ার সময় দুধ, ফল, মিষ্টি, ফুল ইত্যাদি নিয়ে যেতে পারলে খুবই ভালো হয়। মনে রাখবেন যে মন্দির থেকে ফিরে আসার সময় চরণামৃত প্রসাদ, তুলসীপাতা ইত্যাদি নিয়ে তবেই বাড়িতে প্রবেশ করবেন। মন্দিরে সব সময় দেবতাদের ডান হাতের দিকে দাঁড়িয়ে দর্শন করুন অথবা বসে প্রণাম করুন।

Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url