ভূত প্রেত ঝাড়ন, নাশক, তাড়ানোর মন্ত্র সমূহ
আধুনিক বৈজ্ঞানিকগণ বা আজকের অনেক মানুষ ভ্রমাত্মক সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে ভূত-প্রেতাদির অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে ভূত-প্রেতাদির উপদ্রবের প্রমাণ সারা বিশ্বের প্রায় সকল ভাগের মধ্যেই প্রত্যক্ষ ভাবে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, ভূত-প্রেত সম্বন্ধীয় আশ্চর্য ঘটনাসমূহ প্রত্যক্ষ করে অনাস্থাবাদীগণও অবাক হয়ে যান। সারা বিশ্বের প্রায় ধর্মগ্রন্থ সমূহে ভূত-প্রেতাদির উল্লেখ পাওয়া যায়। ভারতীয় ধর্মগ্রন্থ সমূহে অন্যান্য প্রাণীদের ন্যায় ভূত-প্রেতাদিকেও একটি বিশিষ্ট যোনি বলে স্বীকার করা হয়েছে। এদের আবার ভেদ উপভেদাদিরও বিস্তৃত বর্ণনা করা হয়েছে, যেমন-হিন্দুধর্মে ভূত, প্রেত, ডাকিনী, শাকিনী পিশাচ প্রভৃতির প্রভেদ বলা হয়েছে, সেইরূপ ইসলামী মতে জিন, খইস্ প্রভৃতির বিদ্যমানতা মানা হয়েছে।
এই ভূত প্রেতাদি পূর্ব জন্মের শত্রুতা, কোনও অপরাধ অথবা অন্যান্য কারণে যখন কোনও ব্যক্তি বিশেষকে জড়িয়ে ফেলে তখন তার দেহে বিভিন্ন বিকৃতির যেমন লক্ষণ দেখা যায়, তখন তার সেই সব লক্ষণ দূর করা ঔষধাদির দ্বারা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে মন্ত্রাদি প্রয়োগে তাকে আরোগ্য করা যায়। এই প্রকরণে ভূত প্রেতাদি বিষয়ে হিন্দু মতের তন্ত্র ও যন্ত্রাদির আলোচনা করা হলো। এই সব মন্ত্র বা যন্ত্র প্রত্যক্ষ ফলপ্রদ। এখানে সেইসব মন্ত্র ও যন্ত্রের বিবরণ দেওয়া হলো।
ডাইনী নাশক মন্ত্র
জ্যায়সে ক্যায়লোমা কার্য স্বরূপে।
করি করিওয়ো ন করো বলী,
ততে রাম লক্ষ্মণ সীতয়া কার কোটি কোটি আজ্ঞা।
বিধি—উপরোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে রোগীর দেহে ফুঁ দিলে ভূত, ডাইনী, কন্ধকাটা প্রভৃতির বাধা দূর হয়।
ভূত নাশক কপালী মন্ত্র
মন্ত্র—“ওঁ নমো কালী কপালী দহী দহী স্বাহা।”
বিধি—উপরোক্ত মন্ত্র ১০৮ বার উচ্চারণ করতে করতে ভূতগ্রস্ত রোগীর দেহে তেল লাগালে ভূত চীৎকার করতে থাকে এবং স্বগ্রস্ত ব্যক্তিকে ছেড়ে পালায়।
ভূতাদি নাশক মন্ত্র
মন্ত্র—“ওঁ নমো শ্মশানবাসিনী ভূতাদীনাং পলায়ন কুরু কুরু স্বাহা।”
বিধি— রবিবার দিন শিরীষ গাছের পাতা বা ফুল নিয়ে ঘুঘু পাখী, কুকুর ও বিড়ালের বিষ্ঠা, উটের রোম, গোবর, গন্ধক, শ্বেত সরিষা এবং সরষের তেল একসঙ্গে করে, তাতে উক্ত মন্ত্র ১০৮ বার জপ করে রোগীর গায়ে ছুঁড়ে মারলে ও ধূপ দিলে ভূত, প্রেত, রাক্ষস, বেতাল, দেব, দানব, খেচর, ডাকিনী, পেত্নী আদি নানা প্রকার বাধা দূর হয়।
রাক্ষস নাশক মন্ত্র
মন্ত্র—“ওঁ ঠং ঠাং ঠিং ঠীং ঠুং ঠুং ঠেং ঠেং ঠৌং ঠং ঠঃ অমুক হুং।
বিঃ দ্রঃ—মন্ত্রে অমুক শব্দের স্থলে রাক্ষসগ্রস্ত রোগীর নাম বলতে হবে। বিধি—উপরোক্ত মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে রোগীর গায়ে ফুঁ দিলে রাক্ষস ছেড়ে যায়।
শ্মশান বাধা নাশক মন্ত্র
সপেদা সমান গুরু গোরখ কী আন্।
যমদণ্ড মশান কাল ভৈঁরো কী আন্।
হলদিয়া মশান কওড়া ভৈঁরো কী আন্।
সুকিয়া মশান নুনিয়া চমারী কী আন্।
ফুলিয়া সমান গোরে ভৈঁরো কী আন্।
পীলিয়া মশান দিল্লী কী জোগিন্ কী আন্।
কমেদিয়া মশান কাল্ল্কা কী আন্।
কীড়িয়া মশান রামচন্দ্রজী কী আন্।
মিচমিচিয়া মশান শিবশঙ্কর কী আন্।
সিসিলিয়া মশান বীর মোহম্মদা পীর কী আন্।”
বিধি—উপরোক্ত মন্ত্র পাঠ করতে করতে এবার ফুঁ দিলে শ্মশান বাধা দূর হয়।
সর্ববাধা নাশক মন্ত্র
“সতনাম আদেশ গুরু কী আদেশ,
পবন্ পানী কা নাদ।
অনাহদ্ দুন্দুভী বাজৈ জহাঁ ব্যায়ঠী যোগমায়া,
কয়ন্ ওয়ীর বালক কী হরৈ,
সাজে চওসঠ জোগ্নী,
সব পীর আনে জাত,
শীতলা জানিয়ে বন্ধু বন্ধু
করে জাত সমান ভূত,
বন্ধু প্রেত বন্ধু ছল্ বন্ধ,
ছিদ্র বন্ধ সব্কো মারকর্
ভসমন্ত সনাম আদেশ গুরু কো।
বিধি—গ্রহণের দিন উপরোক্ত মন্ত্র ১০৮ বার জপ করলে মন্ত্র সিদ্ধ হয়। পরে উক্ত সিদ্ধ মন্ত্র পাঠ করতে করতে ৭বার ফুঁক দিলে সর্বপ্রকার বাধা দূর হয়।
ভূত তাড়ানো মন্ত্র
বাঁধো ভূত জহাঁ তু উপজী ছাড়ো, গিরে পর্ওয়ত্ চঢ়াঈ সগৈ দুহেলী, পৃথ্বয়ী তুভি ঝিলিমিলাহি হংকারে, হনুবন্ত্ পচারই ভীমা জারি জারি, জারি ভস্ম করে জো চাপেসীউ।
বিধি—উপরোক্ত মন্ত্র. পড়তে পড়তে ভূতগ্রস্ত ব্যক্তিকে ঝাড়া দিলে ভূত তাকে ছেড়ে পালায়।
ডাইন ছাড়ানো দেবী মন্ত্র
ওঁ রুনুং ইঝুনং ইমৃত মারাতং দেওয়ী ঔরম্পর তারা ওয়ীর্ মান্যো ওয়ীর্ তোন্যো হাঁক ডাক মহিমথন করণ জোগ, ভোগ জোগঘর ছতীস নক্ষত্র ঘর সর্পপতি বাসুকী ঘর, সপ্ত ব্রহ্মাণ্ডপতি ব্রহ্মো কে ছায়াধৌ, দেওয়াধৌ দেওতাধৌ ডাইনিধৌ গুরুরানাধৌ ভূতধৌ প্রেতধৌ, ঘর ঘর মাং চণ্ডী বীজ করুওয়ালষণ্ডী,ধৌর্যবাগুটিনাং য দাদদলীং ইমাম্কো চলন্তে কে কে জাতে আর রে ওয়ীর ভ্যায়ওয়ী কামরূপ কামচণ্ডী, ঘর-ঘর বাকী মহা কাব্য করে মউরুমারও কুকী ঘর বারণ ঘোরবনিতে তে কামরু কামচণ্ডী, ইটমায়া প্রসরণি কোটি কোটি আজ্ঞাদেওয়ী রামচণ্ডী বীজে চনিষণ্ডী, চত্তদিগে ঐরদেওয়ী বসিলাকিমাণ্ডি, চন্তিচন্দ্র চমেকিলে সূর্যটরিল ঐরিল দেওয়ী, হরাহরাংপরি সুখিলা কোটরে জীবো, পরাংদ্রিবাহন্তে খপ্পর দাহিনে হাতে, ছুরি ঐরলাদেওয়ী অবরতাহি ডাইনি বাঁধো, চুরইনি বাঁধু গুলী বাঁধু মীরা বাঁধু, মশানী বাঁধু গুলিয়া নাসুনী আওয়ে গরনি আবু লাওয়ে রাঙে মালা ডাণ্ডে জীওয়ত ডাণ্ডৈ হসৈ খেলৈ ভাবিওয়ন্। ভারোওয়লিতে তে তে কামরূ কামচণ্ডী কোটিশ আজ্ঞা।
বিধি—উপরিলিখিত মন্ত্র পাঠ করতে করতে ঝাড়া দিলে ডাইন প্রভৃতি স্থান ত্যাগ করে দূরে পালায়।
ভূতাবেশ দূরীকরণ মন্ত্র
ওঁ নমো ভগবতে ভূতেশ্বরায়,
কিল, কিল তর বায়,
রুদ্র দংষ্ট্রাকরালায় বক্তৃায়,
ত্রিনয়ন ভীষণায়,
ধগধগিত পিশাঙ্গ ললাট নেত্রাম্,
তীব্র কোপানলায়মিত তেজসে,
পাশ-শূল-খড়গ ডমরুক,
ধনুর্বাণ-মুদ্গর ভূপদণ্ড ত্রাস মুদ্রা,
বেগ দশ দোর্দণ্ড মণ্ডিতায়,
কপিল জটাজুট কুটার্দ্ধ চন্দ্রধারিণে,
ভস্মি রাগরঞ্জিত বিগ্রহায়,
উগ্রফণপতি ঘটাটোপ মণ্ডিত কণ্ঠদেশায়,
জয় জয় ভূত ডামরয় আত্মরূপং,
দর্শে দর্শে নিরতে নিরতে সর সর চল চল,
পাশেন বন্ধ বন্ধ হুঙ্কারেণ ত্রাসয় ত্রাসয়
বজ্রদণ্ডেন হন হন নিশিতি খঙ্গেন ছিন্ন ছিন্ন
শূলাগ্রে ভিন্ন ভিন্ন, মুদ্গরেণ চূর্ণয় চূর্ণয়
সর্ব গ্রহাণাং আবেশয় আবেশয়।”
বিধি— প্রথমে উক্ত মন্ত্র গ্রহণের দিন কিংবা দীপান্বিতা অমাবস্যার দিন, অথবা দোল পূর্ণিমার দিন ১০০০ (এক হাজার) জপ করবে। তার ফলে মন্ত্র সিদ্ধ হবে। প্রয়োগ সময়ে গব্যঘৃত, গুগ্গুল, নিম পাতা, সাপের খোলস একত্রে মিশিয়ে মন্ত্র পড়তে পড়তে রোগীর দেহে নিক্ষেপ করলে ভূত চীৎকার করতে থাকে। তাকে জিজ্ঞাসা করলে পূর্বজন্মের পরিচয় দেয়, কোথা তার বাস ছিল, কোথায় সে এখন থাকে, কেন আক্রমণ করেছে, সব কথা বলে। এরপর নৃসিংহ মন্ত্র উচ্চারণ করে রোগীর দেহে ফুঁ দিয়ে ভূত তাড়াতে হবে, অর্থাৎ নিম্ন মন্ত্র ৭বার পাঠ করে রোগীর দেহে ফুঁ দিলে ভূত ছেড়ে যাবে।
নৃসিংহ মন্ত্র
“ওঁ নমো নারসিংহায় হিরণ্যকশিপু বক্ষ বিদারণায়, ত্রিভুবন ব্যাপকায় ভূত-প্রেত পিশাচ-শাকিনী ডাকিনী কীলোমূলনায়। সন্তুষ্ট ভব, সমস্ত দোষাণ হন হন, সর সর চল চল কম্প কম্প মথ মথ, হুং ফট্ হুঁ ফট্ ঠঃ ঠঃ মহারুদ্র জাপিয়াৎ স্বাহা।
বিঃদ্রঃ এই মন্ত্রটিও প্রথমে পূর্বোক্ত বিধিতে ১০০০ (এক হাজার) বার জপ করে সিদ্ধ হতে হবে। তারপর প্রয়োগ করতে হবে।