প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ ও শিশুর জ্বর নিয়ে সমস্যা হলে করণীয় তন্ত্র ও টোটকা চিকিৎসা

 
প্রিয় পাঠক, এই প্রবন্ধে আমরা দুটি তন্ত্র-মন্ত্র নিয়ে আলোচনা করব। তবে এই তন্ত্র মন্ত্র দুটি ত্রিপুরা উপজাতিদের ব্যবহৃত। এগুলোকে ত্রিপুরা মন্ত্র বললেও ভুল হবে না। এই মন্ত্র ও তন্ত্র দুটি যে কেউ মনে বিশ্বাস রেখে পালন করলে সুফল পাবে। হয়তো দ্রব্যাদির নাম পরিচিতি আপনাদের কাছে দুঃসাধ্য মনে হতে পারে। যদিও আমি এর আগে কিছু প্রবন্ধে বলেছিলাম যে, তন্ত্র মন্ত্র বিভিন্ন ভাষায় রচিত হয়েছে এবং যে তন্ত্র মন্ত্র গুলোর প্রভাব এখনো বিদ্যমান রয়েছে, মানুষ সেগুলো চর্চা করে আসছে। 

যেকোনো ভাষার তন্ত্র মন্ত্র দ্বারা যে কোন ব্যক্তি সিদ্ধি লাভ করতে পারে। তার জন্য অবশ্যই ওই ব্যক্তিকে সেই সকল তন্ত্র-মন্ত্রের বিধি-বিধান মেনে চলতে হবে। আর আমি এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ভাষার তন্ত্র মন্ত্র আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করি। আমি চাই আপনারা বিভিন্ন ভাষার তন্ত্র মন্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান রাখুন। তন্ত্র মন্ত্র শুধু জাদু-টোনার জন্য নয়, এখানে লুকিয়ে রয়েছে বিভিন্ন জনজাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। আসুন এ বিষয়ে কথা না বাড়িয়ে সরাসরি চলে যাই আলোচনায়; 


শিশুদের জ্বর বিষয়ে অনেক ঝাড়ুর মন্ত্র, তন্ত্র টোটকা রয়েছে। ত্রিপুরায় শিশুর জ্বর নিবারণে বহুল প্রচলিত টোটকা: রসসিন্দুর রসমাণিক্য পাথরে ঘষিয়া ঝিনুকের খোলে লইয়া শিশুর জিহ্বায় লাগাইবেন, ইহাতে শিশুর জ্বর ছাড়িয়া যায়।

প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ নিয়ে সমস্যা


১. প্রসূতি মাতার বুকে দুধ না আসিলে নিম্নলিখিত মন্ত্রে সাতবার অভিমন্ত্র করিয়া চাউলের পিঠা গুড়া জলে গুলিয়া সিদ্ধ করিয়া প্রসূতিকে খাওয়াইবেন। ফলনীর শব্দের স্থানে প্রসূতি নারীর নাম বলতে হবে। 

মন্ত্র: হাত ছড়া পানি, হাত গরু দুধ 
(ফলানীর) অঙ্গের দুধ ঝড়ঝড়িয়া পড় 
ঈশ্বর মহাদেবের দোহাই ॐ স্বাহা॥

ঔষধ: খুমতকতৈ শিকড় তুলিয়া ধুইয়া খোসা ছাড়াইয়া রসুন গুলমরিচ দিয়া বাটিয়া খাওয়াইবেন তাহাতে বুকের দুধ আসিবে। দুধ বাড়ে।

২. বুকের দুধ না আসিলে আতপ চাউলের গুড়া জলে গুলিয়া সিদ্ধ করিয়া নিম্নমন্ত্রে সাতবার পড়িয়া প্রসূতিকে খাওয়াইবেন । ফলনীর স্থানে প্রসূতির নাম বলতে হবে।

মন্ত্র: “অগর ছয়া মগিনী পানি 
সুর পৈথামা গান্দ্রিমা জানি 
(ফলনীর) দুধুলে ভাঙ্গে 
আইস্রা আই, মা চন্ডীকা নামে 
সাত নাল খুলিয়া আয়, 
বট বট ওস্তাদের দোহাই।”

আবার অনেক সময় প্রসূতির বুকের দুধ বাড়ে, ঐ স্তন দুগ্ধ পানে শিশু ঘন ঘন মলত্যাগ করে ও পেটের অসুখ হয়। তখন নিম্নমন্ত্রে স্তন ঝাড়িবেন।

মন্ত্র: দুধু বাড়ে, দুধু বাড়ে 
দুধু ছিড়া ছিড়ি, ফলানী দুধু বাড়ে 
দুধু নামিয়া যা দুধু ছাড়িয়া যা॥

সকাল সকাল তিন সকাল তিনবার ঝাড়িবেন। অর্থাৎ তিন দিন প্রতি সকালে তিনবার করে ঝাড়তে হবে।

তন্ত্র মন্ত্রে যে কথাটি না বললেই নয়। ত্রিপুরা জাতি অথবা যেকোনো জাতি আগের দিনের তন্ত্র মন্ত্র ব্যবহার করত নিরুপায় হয়ে। কারণ সেই সময় হাতের নাগালে চিকিৎসা ছিল না। শুধু ছিল প্রকৃতির নানা রূপ। সেই প্রকৃতির রূপ থেকে লতাপাতা দ্বারা চিকিৎসা চালাতেন। প্রার্থনা করতেন ও চর্চা করতেন ঐশ্বরিকতা ও অলৌকিকতার। তারা পুরোপুরিভাবে প্রগতি এবং অলৌকিকতার উপর বিশ্বাস রাখতেন। এছাড়া তাদের কোন উপায় ছিল না। এর ফলে বিশ্বাস এতটাই প্রগাঢ় ছিল যে তারা যে মন্তব্য করতেন সেগুলোতেই সফল হতেন। আর এই সফলতার লিপিবদ্ধ তন্ত্র গুলো থেকেই সৃষ্টি আজকের তন্ত্র শাস্ত্র।

সেই সময় থেকে আজ অবধি যে কথাটি আমাদের মেনে নিতে হয়; তা হল সব সময় তন্ত্র-মন্ত্রে সফলতা আসে না। বর্তমান যুগে এত উন্নত চিকিৎসা সত্বেও রোগী মারা যায়। কারিকারি টাকাও তখন কোন কাজে লাগে না। তাইতো তন্ত্র, মন্ত্র ও টোটকাকে একেবারে মিথ্যা বলাটা যেমন বোকামি, তেমনি হাতের নাগালে সু-চিকিৎসা ছেড়ে দিয়ে তন্ত্র-মন্ত্রে ডুবে থাকা অনুচিত। কথায় আছে, “যেখানে দাওয়া কাজ করে না সেখানে দোয়া কাজ করে।” তাই তন্ত্র মন্ত্র তখন প্রয়োগ করুন, যখন নাগালে আধুনিক চিকিৎসা থাকে না। 
Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url