পিশাচসিদ্ধি লাভের মন্ত্র এবং পদ্ধতি : অষ্ট প্রকার যক্ষিণী সাধনা

প্রিয় পাঠক, এই প্রবন্ধে আমরা যক্ষিণী বা পিশাচসিদ্ধি সম্পর্কে জানব। তবে তার আগে আপনাদের অবশ্যই জেনে রাখা প্রয়োজন সেটা হল যক্ষিণী বা পিচাশসিদ্ধি একটি বিপদজনক সাধনা। সঠিক গুরুর নির্দেশ ব্যতীত সাধক গুরুতর ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন এমনকি তার জীবন নাশ হতে পারে। তাই প্রতিটি সাধনার আগে সাধন পদ্ধতিগুলো এবং এর ফলাফল সম্পর্কে অবগত হবেন। তারপর সাধনায় মনোনিবেশ করতে পারেন। যক্ষিণীদের তিন ভাবে আরাধনা করা হয়, যেমন মাতৃরূপে, ভগিনী রূপে ও ভার্য্যা (প্রেমিকা/স্ত্রী) রুপে। মাতৃরূপে ও ভগিনী রূপে এদের সাধন করাই শ্রেয়। এরা খুবই কামুক, তাই ভার্য্যা রূপে সাধনা করলে সর্বনাশের কিছু বাকী রাখে না এরা। কেউ যদি শখের বসে বা হুট করে এই সাধনা করেন তাহলে তার জন্য ভয়ঙ্কর কিছু অপেক্ষা করছে।

অষ্ট প্রকার যক্ষিণী পিশাচসিদ্ধি সাধনা

অনেকেই প্রশ্ন করতে পারে, যক্ষিণী বা পিশাচসিদ্ধি লাভ করলে এদের দ্বারা কি লাভ করা যায়? 
মূলত প্রকারভেদে দূর ভবিষ্যৎ জানা, কোন তন্ত্রের সিদ্ধি লাভের তথ্য কিংবা অন্যের ক্ষতি করার জন্য তান্ত্রিকরা যক্ষিণী বা পিচাশসিদ্ধি সাধন করে থাকে। যেমন, আমরা অনেকেই হয়তো কর্ণ পিশাচ নামটা শুনেছি। যা সিদ্ধি লাভ করলে এই পিশাচ সিদ্ধের কানে ভবিষ্যতের ঘটনাগুলি ফিসফিস করে বলে দেয়। যক্ষিণীর একশ্রেণি হলো পিশাচ। তন্ত্রে পিশাচ হল অত্যন্ত নিম্ন শ্রেণীর এক জীব। সাধারণ মনুষ্য সমাজে যাহা কিছু ঘৃণ্য এবং উচ্ছিষ্ট তার উপরেই লালিতন-পালিত হয় এই পিশাচগণ। এদের দ্বারা ক্ষতি ছাড়া ভালোর তেমন কিছু নেই।

ভারত উপমহাদেশে এই সাধনা গুলো হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম সহ কয়েকটি ধর্মে এর উল্লেখ্য পাওয়া যায় এবং বহু প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন ধর্মীয় সাধক বা তান্ত্রিক গুরুরা এর সাধনা করে আসছেন। যক্ষিণী স্ত্রী বাচক শব্দক এবং এর পুরুষ বাচক শব্দ হলো যক্ষ। যক্ষিণী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এখানে [উইকিপিডিয়া]। যক্ষিণী সাধনার পদ্ধতি গুলো ভূত-ডামর তন্ত্র গ্রন্থগুলোতে সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ্য পাওয়া যায়। সেই রকম কিছু উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ থেকে যক্ষিণী বিদ্যার বিভিন্ন পদ্ধতি আমরা এই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবো। আশা করি যাদের এই বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে তারা এই বিষয়ে অনেক তথ্য পাবেন। 
  
সমস্ত দুষ্ট শমনং সুরাসুর নমস্কৃত।
সন্তুষ্টো যদি দেবেশ যক্ষিণী সাধনঃ বদ॥

উন্মত্তভৈরবী বলিতেছেন– হে দুষ্টাস্তকারক সুরাসুর নমস্কৃত ভৈরব! যদি তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হইয়া থাক, তবে যক্ষিণী সাধন আমার নিকট বল।

শ্রীউন্মত্তভৈরব উপাচ অথাতঃ সংপ্রবক্ষ্যামি যক্ষিণীসিদ্ধিসাধন। 
ক্রোধাধিপং নমস্কৃত্যোৎপত্তি-স্থিতি-লয়াত্মকম্॥ 
যক্ষিণ্যোহষ্টোঁ সমাখ্যাতা যাস্তাসাং সিদ্ধিসাধনং। 
মনুং তমপি বক্ষ্যামি বাঞ্ছিতার্থপ্রদায়কং॥

উন্মত্তভৈরবী বলিতেছেন– হে দেবি! আমি সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়কারী ক্রোধ-পতিকে নমস্কার করিয়া যক্ষিণী সাধন তোমার নিকট বলিতেছি। যক্ষিণী অষ্ট প্রকার বিখ্যাত আছে, তাহাদিগের সিদ্ধিসাধন ও মন্ত্র বলিতেছি। এই প্রণালীতে যক্ষিণী সাধন করিলে অভিলষিত ফল প্রাপ্ত হওয়া যায়?

এই সাধন কার্যে সিদ্ধিলাভ করিতে হইলে, প্রথমতঃ প্রাতে উঠিয়া স্নানাদি ও নিত্যক্রিয়া সম্পাদনপুর্ব্বক যথারীতি আচমন করতঃ "ওঁ হুঁ ফট্‌" মন্ত্রে দিক্‌ বন্ধন করিয়া “ওঁ হ্রীঁ হুঁ" মন্ত্রে প্রাণায়াম করিতে হয়। অনস্তর রক্তচন্দন, আলতা, কুঙ্কুম ও গোরোচনা সংমিশ্রিত করতঃ তদ্দ্বারা একখানি তাম্রপীঠোপরি একটি অষ্টদল পদ্ম অঙ্কিত করিবে এবং ঐ পদ্মের মধ্যমণ্ডলে “ওঁ হ্রীঁ হুঁ" এই মন্ত্র লিখিয়া জীবন্যাস করিতে হয়।
বলা বাহুল্য এই কার্য্যের পূর্ব্বে তাম্রপীঠোপরি নিম্নলিখিত মন্ত্র দ্বারা দেবীকে "আহ্বান করতঃ স্নান করাইবে।

ওঁ আগচ্ছ সুরসুন্দরি হ্রীঁ হৌঁ স্বাহা।
এই মন্ত্রে সুরসুন্দরীর আরাধনা করিবে।

ওঁ সর্ব্বমনোহারিণী ওঁ হৌঁ।
মনোহারিণীর সাধনাতে এই মন্ত্র জানিবে।

ওঁ কনকবতি মৈথুনপ্রিয়ে হোঁ স্বাহা।
এই কনকবতীর মঙ্গ সর্ব্ব সিন্ধি প্রদ।

ওঁ মাতরা গচ্ছ কামেশ্বরি স্বাহা।
এই কামেশ্বরী মন্ত্র বাঞ্ছিতার্থ প্রদান করে।

ওঁ হ্রীঁ রতিপ্রিয়ে স্বাহা।
এই রতিপ্রিয়া মন্ত্র বাঞ্ছিতার্থ প্রদান করে।

ওঁ পদ্মিনী স্বাহা।
এই পদ্মিনী মন্ত্র মনুষ্যের অভিষ্ঠার্থ প্রদান করে।

ওঁ হ্রীঁ নটী মহানটী স্বর্ণ রূপবতী, হৌঁ।
মনুষ্যের অভিষ্টপ্রদ মহানটী এই মন্ত্র কথিত হইল।

ওঁ হ্রীঁ অনুরাগিণি মৈথুনপ্রিয়ে স্বাহা।
এই মন্ত্রে অনুরাগিণীর আরাধনা করিবে। 

উপরোক্ত অষ্ট যক্ষিণীর এই অষ্ট মন্ত্র কথিত হইল।

বজ্রপাণি (সুরসুন্দরী) আরাধনা


অথাসাং সাধনং বক্ষ্যে একৈকং ক্রোধভাষিতং। 
বজ্রপাণি গৃহং গত্বা দত্বা ধূপঞ্চ গুগগুলুং॥ 
জপেণত্রিসন্ধ্যং মাসান্তে আয়াতি সুরসুন্দরী। 
জননী ভগিনী ভার্য্যা স্বেচ্ছয়া কামিতা ভবেৎ॥ 
রাজ্যং দীনারলক্ষঞ্চ রসঞ্চাপি রসায়নং। 
মাতা ভূত্বা মহালক্ষী মাতৃবৎ পরিপালয়েৎ॥ 
যদি স্যাম্ভগিনী দিবাং কন্যামানীয় যচ্ছতি। 
রসং রসায়নং সিদ্ধদ্রব্যং ভার্য্যা ভবেদ্ যদি। 
সর্ব্বাশাঃ পূরয়ত্যেবং মহাধনপতির্ভবেৎ॥

গুগগুল দ্বারা ধূপ প্রদান করতঃ প্রতিদিন তিন সন্ধ্যা পূর্ব্বোক্ত সুরসুন্দরীর মন্ত্র জপ করিবে। একমাস এইরূপ জপ করিলে মাসান্তে দেবী আগমন করেন এবং সাধকের ইচ্ছানুসারে জননী, ভগিনী কিম্বা ভার্য্যা হইয়া থাকেন। যক্ষিণী আগমন করিলে যদি সাধক তাঁহাকে মাতৃ-সম্বোধন করে, তবে দেবী তাহাকে রাজা, লক্ষ সুবর্ণ মুদ্রা এবং নানাবিধ রসায়ন দ্রব্য প্রদান করিয়া মাতৃবৎ পালন করেন। যক্ষিণী দেবীকে ভগিনী ভাবে আরাধনা করিলে দিব্যকন্যা, নানাপ্রকার রসায়ন দ্রব্য দিয়া থাকেন এবং ভার্যারূপে সাধন করিলে সাধকের সর্ব্বপ্রকার আশা পূর্ণ হয় ও সাধক মহা ধনপতি হইয়া থাকে।

মনোহরা যক্ষিণী আরাধনা


গত্বা সরিত্তটং কৃতা চন্দনেন চ মণ্ডলং। 
পূজাং বিধায় মহতীং দত্ত্বা ধূপঞ্চ গুগগুলুং।
আসগপ্তদিবসং মন্ত্রং জপেদযুতসংখ্যকং। 
সপ্তমে দিবসে রাত্রৌ কৃত্বা পূজাং মনোরমাং।
প্রজপেদর্দ্ধরাত্রে তু শীঘ্রমায়াতি যক্ষিণী। 
সাধকং কিং করোমীতি বদেচ্চেট্যাহ সাধকঃ। 
শতাষ্ট পরিবারাঢ্যা বাঞ্ছিতার্থঞ্চ যচ্ছতি। 
শতমেকঞ্চ দীনারং সাবশেষং ব্যয়েদ্ধু ধঃ॥ 
তদ্ব্যয়াভাবতো ভূয়ো ন দদাতি প্রকুপ্যতি। 
ন দদাতি না চায়াতি ম্রিয়তে সা মনোহরী।

নদীতটে গমন করিয়া চন্দন দ্বারা মণ্ডল নির্মাণ পূর্ব্বক মহাপুজা করিবে এবং গুগগুলু দ্বারা ধূপ প্রদান করতঃ পূর্ব্ব কথিত মনোহারিণীর মন্ত্র দশ সহস্র জপ করিবে। সপ্ত দিবস এইরূপে পূজা ও মন্ত্র জপ করিয়া সপ্তম দিবসে রাত্রিকালে মহতী পূজা করিয়া মূল মন্ত্র জপ করিতে থাকিবে। অদ্ধরাত্রি সময়ে মনো-হারিণী যক্ষিণী আগমন করিয়া সাধককে বলিবেন, তোমার কি কার্য করিতে হইবে?

তখন সাধক বলিবে, তুমি আমার চেটিকা হইয়া থাক। যক্ষিণী তাহাতে একীভূত হইয়া অষ্টোত্তর শত পরিবারের সহিত সাধকের কার্য্য করিতে থাকেন এবং অভিলষিত বস্তু, শত স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করেন। সাধক সেই সকল দ্রব্য অবশিষ্ট না রাখিয়া সমুদায় ব্যয় করিবে না। সমুদয় ব্যয় করিলে দেবী কুপিতা হইয়া পুনর্ব্বার আর তাহা প্রদান করিবেন না এবং আর দেবীর সাক্ষাৎ হয় না।

কনকবতী যক্ষিণী আরাধনা


বটবৃক্ষতলং গত্বা মৎস্যমাংসাদি দাপয়েৎ। 
উচ্ছিষ্ঠেন স্বয়ং রাত্রৌ সহস্র সপ্তবাসরান্॥ 
প্রজপেৎ সপ্তমেঽহ্ন্যর্দ্ধরাত্রেঽভাচ্চ সুগন্ধিভিঃ। 
সর্ব্বালঙ্কার সংযুক্ত। সর্ব্বাবয়ব সুন্দরী॥ 
শতাষ্ট পরিবারাঢ্য ধ্যাতা গচ্ছতি সন্নিধিং। 
'অশ্বহং দ্বাদশানাঞ্চ বস্ত্রালঙ্কার ভোজনং॥ 
দদ্যাদষ্টৌ দীনারাণি ভার্য্যা ভবতি কামিতা। 
দেবী কনকবত্যেষা সিদ্ধ্যতেরং ন চান্যথা। 

বটবৃক্ষ তলে গমন করিয়া মৎস্য- মাংসাদি প্রদান করিবে এবং সেই উচ্ছিষ্ট দ্রব্যের সহিত রাত্রিতে পূর্ব্ব কথিত কনকবতী মন্ত্র সহস্রবার জপ করিতে হইবে।

এইরূপ সপ্তদিবস জপ করিয়া সপ্তম দিবসে অর্দ্ধরাত্রি সময়ে সুগন্ধি দ্রব্য দ্বারা দেবীর অর্চ্চনা করিবে। ইহাতে সন্তুষ্টা হইয়া সর্ব্বাঙ্গসুন্দরী কনকবতী সর্ব্বালঙ্কারে ভূষিতা হইয়া একশত অষ্ট পরিবারের সহিত সাধকের নিকট আগমন করেন এবং দ্বাদশ প্রকার বস্ত্র, অলঙ্কার, ভোজ্যদ্রব্য ও অষ্ট সুবর্ণমুদ্রা প্রদান করিয়া সাধকের ভার্য্যা হইয়া থাকেন। এইরূপে আরাধনা করিলে দেবী কনকবতী সিদ্ধা হন, ইহার অন্যথা হয় না।

কামেশ্বরী যক্ষিণী আরাধনা


গোরোচনেন প্রতিমাং ভূর্জ্জপত্রে বিধায় চ। 
শয্যামারুহা একাকী সহস্রং প্রজপেন্মমুং॥ 
মাসান্তে মহতীং পূজাং কৃত্বা রাত্রৌ পুনর্জপেৎ। 
ততোঽর্দ্ধরাত্রে আয়াতি ভার্য্যা ভবতি কামিতা॥ 
দ্বিব্যালঙ্কারনং ত্যক্তা শয়নে প্রত্যহং ব্রজেৎ। 
পরস্ত্রী গমনত্যাগোঽন্যথা মৃত্যুরদূরতঃ॥ 
ইয়ং কামেশ্বরী দেবী বাঞ্ছিতার্থ প্রদায়িনী। 
চিন্তয়েত্তাং স্বর্ণবর্ণাং দিব্যালঙ্কারভূষিতাং। 
সর্ব্বাভীষ্ট প্রদাং শক্তিং সর্ব্বজ্ঞামভয় প্রদাং। 
জাতী প্রভৃতিভিঃ পুষ্পৈঃ সমভ্যর্চ্চ্য ঘৃতোৎপলাং।

ভূর্জপত্রে গোরোচনা দ্বারা প্রতিমা অঙ্কিত করিয়া রাত্রিকালে একাকী শয্যাতে বসিয়া পূর্ব্ব কথিত কামেশ্বরী মন্ত্র সহস্রবার জপ করিবে। এই প্রকারে একমাস মন্ত্র জপ করিয়া মাসান্তে দেবীর পূজা করিয়া রাত্রিতে পুনর্ব্বার মন্ত্র জপ আরম্ভ করিবে। ইহাতে অর্দ্ধরাত্রি সময়ে কামেশ্বরী আগমন করিয়া সাধকের ভার্য্যা হইয়া থাকেন এবং সাধকের সহিত রাত্রি যাপন করিয়া শয্যাতে দিব্য অলঙ্কার পরিত্যাগ পূর্ব্বক গমন করেন। এই দেবতা সিদ্ধ হইলে অন্য স্ত্রী সহবাস পরিত্যাগ করিতে হয়, অন্যথার সাধকের শীঘ্রই মৃত্যু হইয়া থাকে। এইরূপে কামেশ্বরীর আরাধনা করিলে দেবী সিদ্ধা হইয়া সাধকের বাঞ্ছিতার্থ প্রদান করেন।

রতিপ্রিয়া যক্ষিণী আরাধনা


ধূপঞ্চ গুগ গুলুং দত্ত্বা জপেদষ্ট সহস্রকং। 
আসপ্তদিবসং সপ্তদিবসান্তে চ বৈষ্ণবীং।
পূজাং বিধায় যত্নেন ঘৃতদীপং বিধায় চ। 
প্রজপে দর্দ্ধরাত্রেঽসৌ সমায়তি রতিপ্রিয়া। 
কামিতা সা ভবেদ্ভার্য্যা দিব্যং ভোজ্যং রসায়নং॥ 
পঞ্চবিংশতি দীনারং বস্ত্রালঙ্কারনানি চ। 
আশাশ্চ পূরয়ত্যাণ্ড সিদ্ধিদ্রবং প্রযচ্ছতি॥

গুগ, গুলু দ্বারা ধুপ প্রদান করতঃ পূর্ব্বোক্ত রতিপ্রিয়া মন্ত্র অষ্ট সংস্রবার জপ করিবে। সপ্তদিবস এইরূপ জপ করিয়া সপ্ত দিবসান্তে যত্ন পূর্ব্বক দেবীর পূজা করিবে এবং রাত্রিকালে মত প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করিয়া মন্ত্র জপ করিবে। ইহাতে অর্দ্ধরাত্রি সময়ে রতিপ্রিয়া যক্ষিণী আগমন করিয়া থাকেন এবং সাধকের ভার্যা। হইয়া দিব্য রসায়ন ভোজ্যদ্রব্য, পঞ্চবিংশতি সুবর্ণ মুদ্রা ও বস্ত্রালঙ্কার প্রদান করিয়া সকল প্রকার আশা পরিপূর্ণ করিয়া থাকেন।

পদ্মিনী যক্ষিণী আরাধনা


স্বগৃহে বা শিবস্থানে মণ্ডলং চন্দনাত্মকং !
কৃত্বা গুগ,গুলু ধূপঞ্চ দত্ত্বাভার্চ্চ্য বিধানতঃ॥ 
জপেদষ্টসহস্রস্ত মাসমেকং নিরন্তরং। 
পৌর্ণমাস্যাং সমভার্চ্চ যথাবিভবতো নিশিঃ।। 
প্রজপের্দ্ধরাত্রে তু সমাগচ্ছতি পদ্মিনী। 
সর্ব্বাশাঃ পূরয়েত্তেষা ভবতি কামিতা। 
রসং রসায়নদ্রব্যং সিদ্ধিদ্রব্যং প্রযচ্ছতি॥

স্বগৃহে কিম্বা শিবালয়ে গমন করিয়া চন্দন দ্বারা মণ্ডল নির্মাণ পুর্ব্বক গুগ গুল দ্বারা ধুপ প্রদান করতঃ বিধানক্রমে পদ্মিনী দেবীর অর্চ্চনা করিবে এবং একমাস পর্যন্ত নিরন্তর পূর্ব্বোক্ত পদ্মিনী মন্ত্র অষ্টসহস্র বার জপ করিতে হইবে। তৎপরে পূর্ণিমার রাত্রিতে আপনার বিভবানুসারে পূজা করিয়া জপ করিতে থাকিবে। অর্দ্ধরাত্রি সময়ে পদ্মিনী দেবী আগমন করিয়া সাধকের ভার্য্যা হইয়া থাকেন এবং নানাবিধ অভিলষিত রসায়ন দ্রব্য প্রদান করিয়া সাধকের সকল আশা পরিপূর্ণ করেন।

মহানটি যক্ষিণী আরাধনা 


অশোকবৃক্ষমাগত্য মৎস্যামাসং প্রদাপয়েৎ।
ধূপঞ্চ গুগুলুং দত্ত্বা জপেদষ্টসহস্রকং।
মাসান্তে মহতীং পূজাং কৃত্বা প্রাজ্ঞ্বজ্জন্নিশি।
অর্দ্ধরাত্রে সমায়তি জননী ভগিনী বধুঃ।
স্বেচ্ছয়া জননী ভূত্বা ভোজ্যং যচ্ছতি বাসসী।
ভগিনী চেত্তদা কাম্যং ভোজ্যালঙ্কারনা দিকং।
সহস্রযোজনাদ্দিব্যাং স্ত্রিয়মানীয় যচ্ছতি।
ভার্য্যা চেৎ পূরয়ত্যাসা রসঞ্চৈব রসায়নং।
দদাতাষ্টৌ দীনারাণি প্রত্যহং পরিতোষিতা।

অশোক বৃক্ষের নিকট গমন করিয়া মৎস-মাংস প্রদান করিবে এবং গুগগুলু দ্বারা ধূপ প্রদান করতঃ পূর্ব্বোক্ত মহানটী যক্ষিণীর মন্ত্র অষ্টসহস্র বার জপ করিবে। 

একমাস এই প্রকার জপ করিয়া মাসান্তে মহতী পূজা পূর্ব্বক রাত্রিতে পূর্ব্ববৎ মন্ত্র জপ করিতে থাকিবে। অদ্ধরাত্রি সময়ে যক্ষিণী আগমন করিয়া সাধকের ইচ্ছানুসারে জননী, ভগিনী কিংবা ভার্য্যা হইয়া থাকেন। সাধকের জননী হইলে ভোজ্য দ্রব্য ও বস্ত্রযুগ্ম প্রদান করেন। ভগিনী হইলে অভিলষিত ভোজ্যদ্রব্য ও অলঙ্কার প্রদান করিয়া সহস্র যোজন হইতে দিব্য কামিনী আনিয়া দিয়া থাকেন। ভার্য্যা হইলে সকল প্রকার আশা পূরণ করেন এবং নানাবিধ রসায়ন দ্রব্য ও অষ্ট মুদ্রা প্রতিদিন দিয়া থাকেন।

অনুরাগিণী যক্ষিণী আরাধনা


কুঙ্কুমেন সমালিখ্য যক্ষিণীং ভূর্জপত্রকে। 
প্রতিপত্তিধিমারভ্য প্রত্যহং পরিপূজয়েৎ॥ 
ধূপাদৈঃ প্রজপেদষ্টসহস্রমমুরাগিনীং। 
পৌর্ণ-মাস্যাং পুনারাত্রৌ ঘৃতদীপং প্রকল্পয়েৎ॥ 
পূজয়েদগন্ধপুষ্পাদৈঃ সকলাং প্রজপেন্নিশাং। 
প্রভাতেঽসৌ সমায়তি ভার্য্যা ভবতি-কামিতা॥ 
মুদ্রাসহস্রং ভোজ্যঞ্চ রসঞ্চাপি রসায়নং। 
প্রযচ্ছতি চ বস্ত্রাণি জীবের্ষসহস্রকং। 
যদি কালমতিক্রামে ন গচ্ছতি ন সিদ্ধতি। 
বিষং ক্রোধারযুক্ প্রোক্ত্বামুকী যক্ষিণ্যতঃপরং।
ভূতেশীং সাদরং যুগ্মং দ্বয়ং ক্রোধাস্ত্রসংযুতং। 
ক্রোধেনানেন চাক্রম্য জপেদষ্টসহস্রকং। 
তথাকৃতে সমায়াতি বাঞ্ছিতার্যং প্রযচ্ছতি। 
যদি নায়াতি ম্রিয়তে অঙ্কিমূর্দ্ধি স্ফুটতাপি। 
রৌরবে 'নরকে ঘোরে পাতয়েৎ ক্রোধভূপতিঃ॥

ভূজ্জপত্রে কুম্ভম দ্বারা যক্ষিণীর প্রতিমূর্ত্তি অঙ্কিত করিয়া প্রতিদিন ত্রিসন্ধ্যা ধুপ-দীপাদি বিবিধ উপচারে পূজা করিবে এবং রাত্রিকালে অষ্ট সহস্র অনুরাগিণী মন্ত্র জপ করিবে। এইরূপে প্রত্যহই পূজা ও জপ করিয়া পূর্ণিমার রাত্রিতে ঘৃত প্রদীপ দিবে এবং গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ ও নৈব্যোদি নানাপ্রকার উপকরণ দ্বারা পূজা করিয়া সমস্ত রাত্রি মন্ত্র জপ করিবে।

এইরূপ করিলে প্রভাত সময়ে দেবী আগমন করেন এবং সাধকের ভার্য্যা হইয়া অভিলাষ পূর্ণ করিয়া থাকেন। অতঃপর, সাধককে সহস্র মুদ্রা, নানা রসযুক্ত ভোজনীয় দ্রব্য ও বস্ত্রাদি প্রদান করেন। এই দেবতা সিদ্ধি হইলে সাধক সহস্র বর্ষ জীবিত থাকে।

যদি উক্ত প্রকার সাধনা করিলে যথাসময়ে দেবী আগমন না করেন, তবে- আগমন কাল অতীত হইলে “ওঁ হূঁ ফট্‌ ফট্‌ অমুক যক্ষিণী হ্রীঁ যঃ যঃ হূঁ হূঁ" এই মন্ত্র অষ্ট সহস্র জপ করিবে। অমুক স্থানে কাঙ্ক্ষিত যক্ষিনীর নাম বলতে হবে। এইরূপ করিলে দেবী আগমন করিয়া অভিলষিত 'অর্থ প্রদান করেন। ইহাতেও যক্ষিণী আগমন না করিলে চক্ষু ও মস্তক স্ফূটিত হইয়া তাহার মৃত্যু হইয়া থাকে এবং ক্রোধভূপতি তাহাকে ঘোরতর নরকে পতিত করেন।

অষ্ট যক্ষিনী বা পিশাচ সিদ্ধি অষ্ট মন্ত্র কথিত হইলো। (আরো তথ্য খুজে পেলে সংযুক্ত করা হবে।)
Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url