পেটে বুকে ফাটা দাগ নিয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর ও চিকিৎসা সমাধান

ত্বকের ফাটা দাগ ও বিভ্রান্তি

গর্ভধারণ এবং সন্তান প্রসবের পর তলপেটের ত্বকে সাদাটে লম্বা লম্বা দাগ দেখা দেয়। এ জাতীয় সমস্যাকে বলা হয় স্ট্রায়া গ্রেভিডেরাম। শতকরা ১০০ জনের ক্ষেত্রেই কম বেশি এ সমস্যা দেখা দেবে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্তন, উরু এবং বাহুর উপরিভাগেও এ জাতীয় দাগ দেখা দিতে পারে। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় তখনই যখন অবিবাহিতাদের ত্বকে এ জাতীয় দাগ দেখা দেয়। তখন এ জাতীয় সমস্যাকে বলা হয়-ট্রায়া ডিসটেন্সি। সাধারণ মানুষের বদ্ধমূল ধারণা যে, শুধু মাত্র গর্ভধারণের ফলেই এ জাতীয় সমস্যা দেখা দেয়। এই কারণে জনমনে সন্দেহ দেখা দেয় যে, তাহলে কি মেয়ের চরিত্র খারাপ? 
বাসর ঘরেই স্বামী হয়ে ওঠে নববিবাহিত স্ত্রীর প্রতি সন্দিহান। স্বামী অতি ভদ্রলােক হয়ে থাকলে কিছু জিজ্ঞাসা করবেন না বটে, তবে মনে মনে সন্দেহ ও দুঃখবােধে ডুবে যাবেন। আর যদি ভদ্রলােক হয়ে থাকেন তবে তাে সংসারই ভেঙ্গে যাবে। ঠিক এ জাতীয় ধারণার কারণে অবিবাহিতার আত্মীয়রা উদ্বিগ্ন হয়ে চর্মরােগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এ সম্পর্কে একটা সঠিক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হলাে। প্রথমে আসা যাক কেন এবং কি কারণে এ জাতীয় দাগ হয়। ত্বকের ইলাস্টিসিটি (টান দিলে লম্বা হওয়া এবং ছেড়ে দিল পূর্বের অবস্থানে ফিরে যাওয়ার প্রবণতা) রক্ষা করার জন্য এক ধরনের ফাইবার থাকে, যার নাম ইলাস্টিক ফাইবার। একটা রাবার বা ইলাস্টিককে টান দিলে যেমন লম্বা হয় এবং একটা পর্যায়ে অতিরিক্ত টানের ফলে ছিড়ে যায়। ঠিক তেমনিভাবে ত্বকের ইলাস্টিক ফাইবারেরও একটা ক্ষমতা আছে যা ত্বকের চেয়ে বেশি প্রসারিত হলে ছিড়ে যায়। যেমনটি হয় গর্ভধারণের পরে, পেট বড় হয়ে যাওয়ায় ত্বকের ইলাস্টিক ফাইবার তখন ছিড়ে যায় এবং ছিড়ে গিয়ে দু'পাশে চলে যায় এবং মাঝের খালি জায়গাটিই তখন দাগ আকারে দেখা দেয়। যেহেতু এ সমস্যা গর্ভধারণের ফলে হচ্ছে, তাই চিকিৎসার বিজ্ঞানের পরিভাষায় এটাকে বলা হয়- স্ট্রায়া গ্রেভিডেরাম। স্ট্রায়া ’ মানে দাগ। গ্রেভিডেরাম ’ মানে গর্ভধারণ সম্পর্কিত। অবিবাহিতাদের ক্ষেত্রে যে ঘটনাটি ঘটে তা হচ্ছে হঠাৎ অতিরিক্ত মােটা হয়ে যাওয়া বা হঠাৎ অতিরিক্ত লম্বা হলে ত্বকের ইলাস্টিক ফাইবারগুলাে ছিড়ে যায় এবং এ জন্য এটাকে বলে-স্ট্রায়া ডিসটেন্সি। স্ট্রায়া ’ মানে দাগ। ‘ ডিসটেন্সি ' মানে বর্ধিত হওয়া। সুতরাং ফাটাদাগ সৃষ্টিতে গর্ভধারণই একমাত্র কারণ এটা ঠিক নয়। যে কোন কারণে ত্বকে হঠাৎ অতিরিক্ত বর্ধনের ফলে দাগ দেখা দিতে পারে। এটাই বিজ্ঞানসম্মত কথা। ছেলেদের ক্ষেত্রেও হঠাৎ লম্বা বা মােটা হওয়ার কারণে এ জাতীয় দাগ দেখা দেয়। কিন্তু ছেলে তাে আর গর্ভধারণ করেনি। তারও তাে এই দাগ হলাে! কাজেই শুধু গর্ভধারণের সঙ্গেই এই দাগ সম্পক্ত নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে কোন কারণ ছাড়াই বা পারিবারিক প্রবণতা থাকে এ জাতীয় দাগ হওয়ার। সুতরাং এ নিয়ে ভুল বােঝার আর অবকাশ নেই। এখন আসা যাক এর চিকিৎসা ব্যবস্থা কি? 

না, এর কোন কার্যকরী চিকিৎসা নেই অর্থাৎ হয়ে যাওয়া দাগ দূর করার কোন ওষুধ নেই। যদি অনেক ধরনের ক্রিম এই দাগ দূর করার দাবী করছে। এই দাবী ঠিক নয়। তাই এটাকে মেনে নিতেই হবে। তবে একটা সময়ে দাগ কিছু কম অনুভূত হতে পারে। কিন্তু সম্পূর্ণ চলে যাবে না।

মহিলার বুকে ও পেটে ফাটা দাগ

সন্তান জন্মদানের পর অনেক মহিলার বুকে ও পেটে ফাটা দাগ দেখা দেয়। এই দাগ নির্মূল করার উপায় আছে কি?

সাধারণত গর্ভধারণের সময় শরীরের বিভিন্ন জায়গা অতিরিক্ত মােটা হওয়াতে ত্বকের ইলাস্টিক ফাইবার ছিড়ে যায় এবং লম্বা লম্বা দাগ পড়ে। ঠিক একই ভাবে গর্ভধারণ ছাড়াও হঠাৎ যদি কেউ মােটা হয় তাহলেও ইলাস্টিক ফাইবার ছিড়ে গিয়ে একই রকম দাগ পড়ে। এ ধরনের দাগ সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব না হলেও তাকে কিছুটা কমানাে সম্ভব। এক্ষেত্রে চর্ম বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাহু ও উরুর ত্বকে ফাটা দাগ

বেশ কিছুদিন ধরে যদি বাহু ও রানের ত্বকে লম্বাটে ডােরা ডােরা সাদা দাগ দেখা দেয় তাহলে কি এটাকে কোন রােগ বলে ধরে নিতে হবে?

এ জাতীয় সমস্যাকে ‘স্ট্রয়া ডিসটেনসী’ বলে। হঠাৎ লম্বা হওয়া বা হঠাৎ মােটা হওয়াতে অনেকের ত্বকের ইলাস্টিক ফাইবার ছিড়ে যায় এবং এ ধরনের দাগের সৃষ্টি হয়। এই দাগ কোন সমস্যার সৃষ্টি করবে না। তাই চিকিৎসারও দরকার নেই। এছাড়া এই দাগ দূর করার বিশেষ কোন চিকিৎসা ব্যবস্থাও নেই। তবে একটা সময়ে নিজে থেকেই কমে যেতে পারে। 

Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url