আমবাত বা আর্টিকেরিয়া এলার্জির চিকিৎসা পরামর্শ

আর্টিকেরিয়া বা আমবাত

Urticaria বা আমবাত বলতে কি বুঝায় তা কমবেশি সবারই ধারণা আছে। তবুও সাধারণভাবে বুঝতে গিয়ে একটি উদাহরণ দেয়া যাক। যেমন- কেউ চিংড়ি মাছ, বেগুন, গরুর মাংস ইত্যাদি খাবার খাওয়ার সাথে সাথেই শরীর চুলকাতে থাকে এবং জায়গায় জায়গায় চাকা চাকা হয়ে ফুলে যেতে থাকে। এই ফুলে ফুলে যাওয়াটাকেই আর্টিকেরিয়া বলে। চিংড়ি, ইলিশ, গরুর মাংস, বেগুন ইত্যাদি খাবারে আর্টিকেরিয়া হয় বলে সবারই ধারণা আছে। তবে এর বাইরে অনেক খাবারেই এমনটি হয়ে থাকে। কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এক, দুই অথবা বড় জোর তিন প্রকারের খাবারে আমবাত হতে পারে। সব ধরনের খাবারেই আমবাত হয় এমন অভিযােগ অনেকে করে থাকেন। এটি ঠিক নয়, এটা সম্পূর্ণ মানসিক ব্যাপার। সাধারণ মানুষের ধারণা নেই এমন কিছু খাবারের নাম দেয়া হলাে যা থেকে আমবাত হতে পারে। তবে একটি জিনিস মনে রাখতে হবে যে, একই জাতীয় খাবার থেকে সবারই আমবাত হবে না। যে দু'এক জনের কপাল খারাপ তাদেরই হয়ে থাকবে, হয়তবা পৃথিবীর সবচেয়ে মজাদার মাছ ইলিশ ’ ই সেই দুর্ভাগা ব্যক্তি খেতে পারছেন না। 

নারিকেল, কলা, মিষ্টি কুমড়া, পুঁইশাক, টমেটো, রসুন, পিয়াজ, বাদাম, চকলেট, চিজ, শুয়ােরের মাংস, পাউরুটি, সস্, ভিনেগার, মদ, কোক, পেপসি, ফান্টা, জেলি, কাস্টার্ড, পুডিং কেক, ব্যাঙের ছাতা ইত্যাদি আরও অনেক খাবারে এমনটি হতে পারে। ধরা যাক, চিংড়ি মাছ খাওয়ার পর কারও শরীরে আমবাত দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেন। চিকিৎসক বললেন, চিংড়ি মাছ আর কখনও খাবেন না। রােগী এটি মানতে চান না। বলেন যে, আমার বয়স ৫০ বছর। এত জীবন চিংড়ি খেয়েছি কোন সমস্যা হয়নি। এখন হবে কেন। হ্যা তাই, কোন খাবার অনেক দিন খেতে খেতে অতিসংবেদনশীলতার সৃষ্টি হয় (সবার ক্ষেত্রে নয়), আর একবার এই অতিসংবেদনশীলতার সৃষ্টি হলে পরবর্তীতে ঐ জাতীয় খাবার খাওয়ার সাথে সাথেই আর্টিকেরিয়া বা আমবাত হয়ে থাকে। সুতরাং ঐ জাতীয় খাবার আর খাওয়া চলবে। খাবার ছাড়াও আরও অনেক কারণে আমবাত হতে পারে। 

যেমন— 

ক) কিছু কিছু ওষুধ সেবনেঃ পেনিসিলিন, এসপিরিন, কোট্রাইমক্সজিল, ভিটামিন, জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি ইত্যাদি। 
খ) নিঃশ্বাসের সাথে শ্বাসনালীতে যায় এমন জিনিসঃ ঘাসের ময়লা (Grass pollen), পাখির পালক, ধূলা, বালি, তুলা (cotton seed), গবাদিপশুর ময়লা (Animal dander), এরােসল, কসমেটিক, ফুলের রেণু! 
গ) দাঁতে পােকা, (caries), ক্রনিক টনসিল ইনফেকশন, ক্রনিক গলব্লাডার ইনফেকশন, ক্রনিক সাইনাস ইনফেকশন, পেটে কৃমি, ফাইলেরিয়া ইত্যাদি অবস্থাতে আর্টিকেরিয়া হয়। 
ঘ) অতিরিক্ত মানসিক চাপ। 
ঙ) সূর্যের আলাে, অতিরিক্ত ঠাণ্ডা ও গরম। 
চ) যে কোন তাপমাত্রার পানি (গােসলের সময়)। 
ছ) কখনও কখনও ব্যায়াম করার পর পর। 
জ) মশা, মাছি, ছারপােকা, মৌমাছি ইত্যাদির কামড়। 

এতসব কারণের ভিতর আর্টিকেরিয়ার একটি প্রকারভেদকে (মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি) এনজিও ইডিমা বলে। এমতাবস্থায় ঠোট, চোখের পাপড়ি ফুলে যায়। পেটব্যথা শুরু হতে পারে এবং আস্তে আস্তে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে। এক পর্যায়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে রােগী মারা যেতে পারে। যদি চোখের পাপড়ি, ঠোট ফুলে যায় তবে দেরি না করে একজন চর্মরােগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হবেন। এ ছাড়া শরীরের অন্যান্য জায়গায় আর্টিকেরিয়ার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে এন্টি হিস্টামিন যেমন— ট্যাবলেট এলাট্রল/সেট্রিন (১০ মিঃ গ্রাম)-এর ১ টি ট্যাবলেট খেয়ে নেবেন, যদি চুলকানি না কমতে থাকে তবে এক ঘন্টা পর আরও ১ টি খেয়ে নেবেন। যদি প্রতিদিনই এ অবস্থা হতে থাকে তবে একজন চর্মরােগ বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিলে ভাল হয়।
Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url