অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণ ও চিকিৎসা

অতিরিক্ত ঘাম: ঘাম উৎপাদনকারী গ্রন্থি বা গ্ল্যান্ড শরীরের অন্যান্য স্থানের চেয়ে হাত-পায়ে একটু বেশি পরিমাণেই থাকে। স্বাভাবিক মাত্রা বা ফিজিওলজিক্যাল লিমিট পর্যন্ত ঘামটা কিন্তু জরুরী। অন্যথায় হাত-পা বেশি শুষ্ক হয়ে চামড়া ফেটে যাবে, শক্ত হয়ে থাকবে। তবে প্রয়ােজনের অতিরিক্ত ঘামা কাম্য নয়। হাত-পা অতিরিক্ত ঘামা অনেকেরই সমস্যা। হাত-পা এমনকি সমস্ত শরীর ঘামার বিস্তর কারণ রয়েছে।

𒊹︎︎︎ জ্বর এবং জ্বর ভাল হওয়ার পর কয়েক মাস পর্যন্ত শরীর বেশি ঘামতে পারে। ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান, উপর্যুপরি বমি, ডায়াবেটিক নিউরােপ্যাথি, রক্তে শর্করার পরিমাণ নেমে গেলে, অতিরিক্ত মােটা শরীর, মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিক বন্ধ হওয়ার পর থেকে, থাইরয়েড গ্রন্থির অধিক কার্যকারিতা, পিটুইটারি গ্রন্থির অধিক কার্যকারিতা, এমনকি কখনও কখনও ক্যান্সার জাতীয় অসুখের কারণে অতিরিক্ত ঘাম হয়ে থাকে। এছাড়া আবহাওয়ার অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা, বেশি ব্যায়াম, গর্ভ অবস্থায়, পারকিনসন্স ডিজিজ, ফিওক্রোমােসাইটোমা এবং এসপিরিন জাতীয় ওষুধ অতিরিক্ত সেবনেও সমস্ত শরীর ঘামতে পারে।

𒊹︎︎︎ শুধু হাত-পা ঘামে এমন কারণের মধ্যে আছে মানসিক দুশ্চিন্তা, ভয়। মানসিক কারণে হাত পা ছাড়া বগল ও কুঁচকিও ঘেমে কে।

হাত-পা ঘামার বিভিন্ন পর্যায়

➪ লাগাতার বা কন্টিনিউয়াস ঘাম বেশি হয় গ্রীষ্মকালে।

➪ ক্ষণে ক্ষণে হাত-পা ঘামাটা মানসিক কারণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

➪ অটোসােমাল ডমিন্যান্ট বা বংশগতভাবেও অনেকের হাত-পা ঘামে।

➪ শীতকালে পা ঘামার সমস্যাটি প্রায় সবারই। এর কারণ হচ্ছে নির্দিষ্ট স্থানের অতিরিক্ত তাপমাত্রা। যেহেতু শীতকালে জুতা ও মােজা প্রায় সারাদিনই পরতে হয় বলে সেখানকার তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে পা ঘেমে যায়। এ সময়ে অতিরিক্ত ঘামাটা সমস্যা নয়। সমস্যা হচ্ছে দুর্গন্ধ। দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম হওয়াকে বলে ব্রোমহাইড্রোসিস। ঘামে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিই এই দুর্গন্ধের কারণ।

➪ গ্যাস্ট্রেটরি হাইপার হাইড্রোসিস- এক্ষেত্রে অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার, টম্যাটো, সস্, চকোলেট, চা-কফি ইত্যাদি খাওয়ার পর ঠোট, কপাল, বুকের মধ্যস্থানে অতিরিক্ত ঘামের সৃষ্টি হয়।

অতিরিক্ত ঘাম এবং চিকিৎসা পদ্ধতি

সমস্ত শরীর ঘেমে থাকলে সেক্ষেত্রে মেডিসিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শে চিকিৎসা করানােই ভাল। এক্ষেত্রে বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার হতে পারে। মানসিক কারণের সঙ্গে সম্পর্কিত ঘাম দূর করার জন্য মানসিক সমস্যাগুলাে নির্ণয়ে সচেষ্ট হতে হবে এবং তা থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। সাধারণত ২৫ বছর বয়সের পর নিজে থেকেই এ সমস্যা দূর হতে থাকে। যদিও কোন চিকিৎসাই অতিরিক্ত ঘাম সম্পূর্ণ নিরাময়ে সক্ষম নয়, তবে ‘আয়ান্টো-ফরেসিস’ নামক চিকিৎসা ব্যবস্থায় কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া অনেক দিন ভাল থাকা যায়। পায়ের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য মােজা ঘন ঘন বদলাতে হবে। এছাড়া পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মেশানাে হালকা বেগুনি রঙের কুসুম গরম পানিতে প্রতিদিন প্রায় ৩০ মিনিট করে কয়েকদিন পা ভিজিয়ে রাখলে অবস্থার উন্নতি হবে। তবে একাধারে ২ সপ্তাহের বেশি এভাবে ভেজাবেন না এবং পানির রং গাড় বেগুনি করবেন না। 

Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url