অসুখ অসুখ মনে হওয়াটাও এক ধরনের রোগ

ঝগড়া, অশান্তি হলে অনেকে বুক ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি উপসর্গে কষ্ট পান। এর কি কোনও কারণ আছে না সবটাই ভান? না ভান নয়। উদ্বেগ, অশান্তি, মানসিক চাপ যখন এমন জায়গায় এসে পৌঁছয় যে মানুষ তার ভার আর বইতে পারে না, কাউকে বলতে পারে না অথবা বলেও সুরাহা। হয় না-- মনের কষ্টের প্রভাব শরীরে এসে পড়তে শুরু করে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট, বুক ব্যথা, কখনও মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা ইত্যাদি নানান উপসর্গ দেখা দেয়। এইরকম অবস্থায় নতুন করে আর ঝগড়া, অশান্তির চাপ নেওয়ার ক্ষমতা থাকে না। তবু হয়তাে ঝগড়া হয়। মনের আর ক্ষমতা নেই। পুরােটাই তাই এসে পড়ে শরীরের ওপর। শুনলে অবাক হবেন ইনটেনসিভ কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিটে বুক ব্যথা, শ্বাস কষ্ট নিয়ে যত রােগী ভর্তি হন তার শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ সােমাটোফর্ম অটোনােমিক ডিসফাংশনে ভুগছেন। এই বিষয়ে আরো জানাচ্ছেন: ডাঃ উদয় চৌধুরী

❍ প্রশ্ন: সােমাটোফর্ম অটোনােমিক ডিসফাংশন মানে?

☛ উত্তর: সােমা মানে শরীর। অটোনমিক ডিসফাংশন অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কাজকর্মের বিচ্যুতি। এই রােগে মনের চাপ স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রে ধাক্কা দেয়। তার প্রভাব এসে পড়ে শরীরে। হৃৎস্পন্দন বাড়ে, ঘাম হয়, রক্তচাপ এবং শরীরের তাপমাত্রাও বাড়তে পারে। শ্বাসকষ্ট কখনও মারাত্মক রূপ নেয়।

❍ প্রশ্ন: একেই কি কার্ডিয়াক নিউরােসিস বলে?

☛ উত্তর: হ্যা। উপসর্গগুলি দেখতে সবই হার্টের রােগের মতাে। অথচ কার্ডিয়াক মনিটর লাগিয়ে এবং অন্যান্য যাবতীয় নিরীক্ষা করে শারীরিক রােগের কোনও পাওয়া যায় না। তাই একে নিউরোসিস অর্থাৎ মনের রােগ বলেই ছাপ দেওয়া হয়।

❍ প্রশ্ন: কাদের এই সমস্যা বেশি হয়?

☛ উত্তর: আবেগ প্রবণ, সংবেদনশীল অথচ অন্তর্মুখী মানুষ যে কোনও সােমাটোফর্ম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হন বেশি। কারণ এরা দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ আর পাঁচ জনের থেকে বেশি মাত্রায় অনুভব করেন। কিন্তু অন্তর্মুখী হওয়ায় তার ভাগ দিতে পারেন না তেমন কাউকে। এদের মনে আবেগের ওঠাপড়া বেশি। ফলে দুঃখ বা আনন্দে মনে ঝড় ওঠে বেশি। কাছের মানুষ সহানুভূতিশীল না হলে এই ঝড়ের পুরােটা তাঁদের সামলাতে হয় একা। মন বেশি স্পর্শকাতর হওয়ায় চাপের অনেকটাই শরীরে এসে পড়ে।

❍ প্রশ্ন: কিন্তু ঝগড়া, অশান্তিতাে সবার জীবনেই থাকবে। বারবার এরকম হলে তাে বিপদ।

☛ উত্তর: সে তাে বটেই। সে জন্যই চিকিৎসা খুব জরুরি। আর সত্যি কথা বলতে কি এদের চিকিৎসা তেমন কঠিন কিছু নয়। খুব সামান্য ওষুধপত্র এবং কাউন্সেলিংয়ের সাহায্যে এদের সুস্থ করে তােলা যায়। তবে কাউন্সেলিং কিন্তু বাড়ির লােকেরও করতে হবে।

❍ প্রশ্ন: কী রকম?

☛ উত্তর: ধরুণ, শ্বাসকষ্ট, বুকব্যথা নিয়ে কোনও রােগী আই সি সি ইউতে ভর্তি হলেন। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা গেল তার শারীরিক কোনও অসুখ নেই। তখন একটু বেশি মাত্রায় অ্যালপ্রাজোলাম বা লােরাজিপাম জাতীয় দুশ্চিন্তা কমানাের ওষুধ ইঞ্জেকশন দিয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয়। এবার বাড়ির লােকের সঙ্গে কথাবার্তা বলার পালা। যদি দেখা যায় দীর্ঘদিন ধরে কোনও ঝগড়া, অশান্তি চলছে বা কোনও কারণে মানসিক চাপের মধ্যে আছে রােগী, দুটি ধাপে চিকিৎসা শুরু করি আমরা। প্রথম ওষুধপত্র। স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রকে সামাল দিতে ব্যবহার করা হয় বিটা ব্লকার যেমন প্রানােলল জাতীয় ওষুধ। বুক ধরফর, ঘাম হওয়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি কমতে থাকে। এর সঙ্গে অ্যালপ্রাজোলাম বা লােরাজিপাম জাতীয় দুশ্চিন্তা কমানাের ওষুধ খেতে হয় কিছুদিন এবং অল্পমাত্রায় অবসাদ কমানাের ওষুধ যেমন টি সি এ, এস এস আর আই বা এস এন আর আই। ওষুধ চলাকালীন বাড়ির লােককে কতগুলি নিয়ম মেনে চলতে বলা হয়। যেমন রােগীর সঙ্গে তর্ক বিতর্কে না যাওয়া, তাকে সঙ্গ দেওয়া, সমালােচনা বন্ধ করে তার গুণ নিয়ে আলােচনা করা এবং উৎসাহ দেওয়া। ওষুধ এবং বাড়ির লােকের সাহায্য দুইই পেলে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারে রােগী। তখন শুরু হয় কাউন্সেলিং। তাঁকে বাস্তব পরিস্থিতি মানতে শেখাননা, নিজের দুর্বলতা চেনা এবং তাকে মেনে নেওয়া বা দুর করার পদ্ধতিও শেখানাে হয় কাউন্সেলিংয়ের সময়। মােটামুটি ২-৩ মাসের মধ্যে রােগী ভাল হয়ে যান।

❍ প্রশ্ন: মনের অসুখের ক্ষেত্রে ভাল হয়ে যাওয়া কথাটার অস্তিত্ব আছে কি?

☛ উত্তর: আগেই বলেছি সােমাটোফর্ম ডিসঅর্ডার সংবেদনশীল মানুষের মধ্যে বেশি দেখা দেয়। নরম স্বভাবের জন্য এরা বেশি কষ্ট পান এবং সারাজীবন ধরে পেতে থাকেন। তবে ওষুধপত্র এবং কাউন্সেলিংয়ের চিকিৎসা সম্পূর্ণ হলে এঁরা নিজেদের ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে এতটাই সচেতন হয়ে যান যে পরবর্তী কালে কষ্টে পড়লে নিজে নিজেই অনেকটা সামাল দিতে পারেন বা সাহায্যের জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন। ভয়ানক শারীরিক কষ্টের মুখােমুখি আর হতে হয় না। এই অবস্থায় পৌঁছনােকেই আমরা ভাল হয়ে যাওয়া বলি।

❍ প্রশ্ন: মাথা ব্যথাও নাকি অনেক সময় মানসিক কারণে হয়?

☛ উত্তর: মানসিক কারণ বললেই লােকে ব্যাপারটাকে বাতিক চলে ধরে নেয়। অর্থাৎ ব্যথা নেই। রােগী ভান করছে। আসলে কিন্তু তা নয়। শুধু মাথা ব্যথা নয়, ঘাড়, কোমর, হাত, পা, পিঠ পেট যে কোনও জায়গার ব্যথা অনেক সময় মানসিক কষ্টের প্রতিফলন হতে পারে, এর ডাক্তারি নাম সােমাটোফর্ম পেন ডিসঅর্ডার। মনের ব্যথার কথা অকপটে বলতে না পারার দরুণ তা শরীরের বিভিন্ন ব্যথা বেদনার মাধ্যমে বাইরে বেড়িয়ে আসে।

❍ প্রশ্ন: চিকিৎসা কী? ব্যথা কমার ওষুধ?

☛ উত্তর: না, ব্যথা কমার ওষুধ এক্ষেত্রে তেমন কাজ করে না। সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম বা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ওপর কাজ করে এমন ওষুধপত্র দিতে হয়। দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসার জন্য ট্রাইসাইক্লিক বা এস এস আর আই গােত্রের অবসাদ কমানাের ওষুধ এবং তাৎক্ষণিক ব্যথা কমানােব জন্য অ্যালপ্রাজোলাম বা লােরাজিপাম জাতীয় ওষুধ। রােগীর অবস্থার ওপর নির্ভর করে অ্যালপ্রাজোলাম সপ্তাহ তিনেকের জন্যও দেওয়া যেতে পারে। অবসাদ কমানাের ওষুধের মাত্রাও বাড়াতে হয় কখনও।

❍ প্রশ্ন: সব সময় অবসাদ কমানাের ওষুধ দেওয়ার দরকার পড়ছে কেন? এ সমস্ত শারীরিক কষ্টের সূত্রপাত কি অবসাদের জন্য?

☛ উত্তর: সব সময় তা নয়। তবে অশান্তি, হতাশা, অবসাদ অনেক সময় এমন মেশানাে থাকে যে তাকে পুরােপুরি আলাদা করা যায় না। আবার অনেক সময় অশান্তি, দ্বন্দ থেকেই সােমাটোফর্ম ডিসঅর্ডারের সৃষ্টি। তাই এই সমস্ত রােগে ব্যবহৃত ওষুধই এক্ষেত্রেও কাজে লাগে। তবে কম মাত্রায়।

❍ প্রশ্ন: অশান্তির জন্য ঘাড়ে মাথায় ব্যথা হলে বুঝতে পারা যায়, হাতে, পায়ে, কোমরে, পিঠে, পেটে ব্যথা হলে কী করে বুঝ?

☛ উত্তর: বােঝ একটু শক্ত। বিশেষ করে রােগী যদি সব কিছুখুলে বলতে না চান। সাইকিয়াট্রিস্ট সহজে বুঝতে পারবেন। তবে ব্যথা বেদনা নিয়ে তাে কেউ আর সরাসরি সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে আসেন না। নিজে নিজে ব্যথা কমার ওষুধ খেয়ে বেশ কিছুদিন কাটান। ফলে মাথা, গা, হাত, পা ব্যথার সঙ্গে অনেক সময় যুক্ত হয় গ্যাসট্রাইটিসের সমস্যা। পেট ব্যথা, বুক ব্যথা, খেতে ইচ্ছে না করা, ঘুম না হওয়া ইত্যাদি নানান উপসর্গ নিয়ে এবার রােগী ডাক্তাৱে কাছে যান। ব্যথার উৎস খুঁজতে যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়। তারপর ব্যাখ্যা করার মতাে তেমন কিছু পাওয়া না গেলে সাইকিয়াট্রিস্টের ডাক পড়ে। ব্যথার উৎস শারীরিক নয় এ ব্যাপারে নিশ্চিত হলে তবেই আমরা চিকিৎসা শুরু করি।

❍ প্রশ্ন: এরকম ব্যথা বেদনা হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে?

☛ উত্তর: না, হলেই সঙ্গে সঙ্গে যেতে হবে না। ২-৪ দিন অপেক্ষা করে ব্যথার ধরণ বােঝবার চেষ্টা করতে হবে। অনেক সময় দুশ্চিন্তা, অশান্তি থেকে ঘাড়ে মাথায় ব্যথা হয়। অশাস্তি কমার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা কমে যায়। শশাওয়া, বসার দোষের জন্য কোমরে, হাতে, পায়ে, পিঠে ব্যথা হতে পারে। মাথা বা শরীরে ব্যথা ঠাণ্ডা লেগেও হওয়া সম্ভব। তবে এই সমস্ত ক্ষেত্রে ২-৪ দিনে ব্যথা কমে যায়। না কমলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

❍ প্রশ্ন: এই ২-৪ দিন ব্যথা কমার ওষুধ খাওয়া খেতে পারে?

☛ উত্তর: প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেয়ে দেখতে পারেন।

❍ প্রশ্ন: অ্যালজোলাম বা লােরাজিপাম খাওয়া যাবে না?

☛ উত্তর: অশান্তি থেকে হচ্ছে কিনা না জেনে এই সমস্ত ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়। দীর্ঘদিন খেতে খেতে অভ্যেস হয়ে যেতে পারে।

❍ প্রশ্ন: সােমাটোফর্ম পেন ডিসঅর্ডারে কাউন্সেলিংয়ের ভূমিকা নেই?

☛ উত্তর: মনের অশান্তি, উদ্বেগ থেকে যে সমস্ত অসুস্থতার সৃষ্টি সবের ক্ষেত্রেই কাউন্সেলিংয়ের ভূমিকা আছে।

❍ প্রশ্ন: আর হিস্টিরিয়ায়?

☛ উত্তর: হিস্টিরিয়া কথাটাই উঠে গেছে। মানসিক কারণে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, মুখে গাজলা বেরনাে, হাত পায়ে খিচুনি, দাঁতে দাঁত লেগে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিলে তাকে বলে সােমাটোফর্ম কনভারশন ডিসঅর্ডার। এক্ষেত্রেও কাউন্সেলিং কাজে আসে।

❍ প্রশ্ন: মৃগীর উপসর্গও তাে এই একই। তাহলে কীভাবে বােঝা যাবে রােগটা মৃগী না কনভারশন ডিসঅর্ডার?

☛ উত্তর: মৃগী হলে ব্রেনের ই ই জি-তে প্রায় সময়ই ত্রুটি ধরা পড়ে। কিন্তু এক্ষেত্রে পড়ে। উপসর্গ দেখেও রোগ দুটিকে আলাদা করা যায়।

❍ প্রশ্ন: কী রকম?

☛ উত্তর: মৃগীতে রােগী অজ্ঞান হয়ে যেখানে সেখানে ছিটকে পড়ে যেতে পারে। মারাত্মক আঘাত লাগাও বিচিত্র নয়। দাঁতে দাঁত লেগে জিভ কেটে যেতে পারে। অসারে প্রস্রাব হয়ে যেতে পারে। এমন কি ঘুমের মধ্যেও অনেক সময় উপসর্গ দেখা দেয়। কনভারশন ডিসঅর্ডারে মানুষটি কিন্তু যেখানে সেখানে অজ্ঞান হয়ে পড়বেন না। কারে মানুষ ধারে কাছে থাকলে তবেই অজ্ঞান হওয়ার ঘটনা ঘটবে। পড়ে যাওয়ার দরুণ মারাত্মক কোনও আঘাত লাগবে না। জিভ কেটে যাবে না। প্রস্রাব হবে না বা ঘুমের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেবে না।

❍ প্রশ্ন: কাল্পে মানুষ আশে পাশে না থাকলে সােমাটোফর্ম কনভারশন ডিসঅর্ডারের রােগী অজ্ঞান হয় না— এ ভান ছাড়া আর কী?

☛ উত্তর: না ভান নয়। মনের কষ্ট প্রকাশ করার একটা ধরণ।নভারশন ডিসঅর্ডার নানা রকমের হয়। অনেক সময় দেখা যায় পরীক্ষার আগে কথা বন্ধ হয়ে গেছে বা চোখে দেখতে পাচ্ছে না। অনেক সময় প্যারালিসিসের উপসর্গ নিয়েও আসেন রােগী। এক ভদ্রমহিলার কথা জানি, বাড়িতে অশান্তির দরুণ মানসিক কষ্ট ভােগ করতেন। তার প্রথম শারীরিক কষ্টের সূত্রপাত হয় কোমর ব্যথা দিয়ে। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রােগের শারীরিক কোনও কারণ ধরা পড়ে নি। এর কিছুদিন পর শরীরের বা দিক অসার হতে শুরু করে। নিউরােলজিস্ট দেখানাে হয়। রােগের কারণ ধরা পড়ে না অথচ উপসর্গ বাড়তে থাকে। কোনও কিছু না পেয়ে এরপর সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে আসা হয়। দেখা যায় আসলে সে ভুগছিল সােমাটোফর্ম কনভারশন ডিসঅর্ডারে।

❍ প্রশ্ন: একই মানুষের মধ্যে এই জাতীয় একাধিক সমস্যা থাকতে পারে?

☛ উত্তর: হ্যা। একসঙ্গে থাকতে পারে, বা জীবনের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

❍ প্রশ্ন: সবক্ষেত্রেই চিকিৎসার ধারাটা মােটামুটি এক?

☛ উত্তর: হ্যা, মােটামুটি একই ধরণের ওষুধপত্র এবং কাউন্সেলিং। তবে তেমন মারাত্মক অবস্থা হলে উপসর্গ ভিত্তিক চিকিৎসাও কিছু করতে হয়।

❍ প্রশ্ন: পরীক্ষার আগে মাথা ব্যথা, বুক ধরফর, শ্বাসকষ্ট, ঘুমােতে না পারা ইত্যাদি উপসর্গের হাত থেকেও রেহাই পাওয়া সম্ভব?

☛ উত্তর: সম্ভব। ক্ষেত্র বিশেষে খুব কম মাত্রায় টি সি এ, এস এস আর আই বা এস এন আর আই গােত্রের ওষুধ অথবা রাতে শােওয়ার আগে ৫-১০ মিগ্রা জোলপিডেম। অ্যালপ্রাজোলাম বা লােরাজিপাম জাতীয় ওষুধও ব্যবহার করা হয় কখনও। দীর্ঘস্থায়ী ফল পেতে পরীক্ষার ২-৩ মাস আগে থেকে বিটা ব্লকার জাতীয় ওষুধ ১০ মিগ্রা করে দিনে ২ বার দেওয়া যেতে পারে।

❍ প্রশ্ন: পরীক্ষা বা ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে বারবাব টয়লেটে যাওয়া?

☛ উত্তর: মানসিক টানাপােড়েনে যাঁরা বেশি ভােগেন তাদের এই সমস্যা বেশি হয়। কিছু বাচ্চা স্কুল যাওয়ার আগে বমি করতে শুরু করে। এদের ক্ষেত্রেও কিন্তু উপসর্গ কমানাের ওষুধ দিয়ে স্থায়ী কাজ হবে না। অশান্তি কমানাের ওষুধ এবং কাউন্সেলিং কাজে আসবে। তবে অল্প স্বল্প সমস্যা থাকলে মাথা ঘামানােব দবকার নেই। উদ্বেগপ্রবণ মানুষদেব এরকম থাকে একটু আধটু।

❍ প্রশ্ন: উদ্বেগ থেকে তাে আরও নানা রকম উপসর্গ হয়। হাত পায়ের তলা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, কান, মাথা, গরম হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এ সবেরও চিকিৎসা আছে?

☛ উত্তর: আবারও একই কথা। উদ্বেগপ্রবণ মানুষদের এই সমস্ত সমস্যা অল্প বিস্তর থাকে। মাত্রা না ছাড়ালে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা না করাই ভাল।

❍ প্রশ্ন: সারাক্ষণ অসুখ অসুখ বাতিক যাঁদের, তাঁদের সুস্থ করে তােলা যায়?

☛ উত্তর: হ্যা। চিকিৎসা বলতে কম মাত্রায় বিটা ব্লকার এবং অবসাদ কমানাের ওষুধ। এদের অনেকের মধ্যে আবার অবসাদও থাকে। সে ক্ষেত্রে অবসাদ কমানাের ওষুধের মাত্রা বাড়াতে হয়। সঙ্গে কাউন্সেলিং। মনকে শরীরের ওপর থেকে খানিকটা উঠিয়ে দিতে পারলে বােগ সেরে যায়। বাড়ির লােকের সাহায্য খুব জরুরি। দিনরাত অসুখ অসুখ শুনতে শুনতে তারা যেন বিরক্ত হয়ে রােগীকে অবহেলা না করেন। তাহলে রােগের প্রকোপ বাড়বে। তাদের বুঝতে হবে অসুখ অসুখ বাতিকও আসলে এক ধরনের অসুখই। 

Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url