ছেলেদেরও ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে পারে

ছেলেদেরও কি ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে পারে? হ্যা, হতে পারে। তবে সম্ভাবনা খুব কম। ১০০ জন ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে ১ জন পুরুষ। এই বিষয়ে আরো জানাচ্ছেন: ডাঃ জি, এস, ভট্টাচার্য

❍ প্রশ্ন: ব্রেস্টে মাংসপিণ্ড দেখা দেওয়া মানেই কি ক্যান্সার?

☛ উত্তর: অধিকাংশ ক্ষেত্রে নয়। ব্রেষ্টে কোনও রকম অস্বাভাবিকতা নজরে এলে প্রথমে ম্যামােগ্রাম করা হয়। তারপর দরকার মতাে আলট্রাসনােগ্রাফি, বায়ােন্সি ইত্যাদি করে টিউমারের চরিত্র নির্ধারণ করা হয়।

❍ প্রশ্ন: ম্যামােগ্রাফি করে সবসময় রােগ ধরা পড়ে?

☛ উত্তর: না, ৪৫ এর নীচে বয়স হলে ম্যামােগ্রাফি কবে তেমন কিছু বােঝা যায় না। সেক্ষেত্রে বায়ােন্সি এবং অন্যান্য পদ্ধতির সাহায্যে বেগ সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ হতে হয়।

❍ প্রশ্ন: বংশগত কারণে কি ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে পারে?

☛ উত্তর: হ্যা, মা বোেন, মাসি, পিসির মধ্যে কারাের থাকলে সাবধান হওয়া দরকার। বিশেষ করে যদি কম বয়সে দুটো ব্রেস্টই-আক্রান্ত হয়ে থাকে।

❍ প্রশ্ন: কি সাবধানত নিতে হবে?

☛ উত্তর: ১৮-১৯ বছর বয়স থেকে কয়েকটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে।
(১) ব্রেস্টের কোথাও কোনও পরিবর্তন নজরে এলে যেমন কোনও মাংসপিণ্ড দেখা দিলে, ভন বৃন্ত থেকে জলীয় কিছু বোেতে থাকলে, বাহুমূল বা কার কাছে কোনও গ্রন্থির স্ফীতি দেখা দিলে অবিলম্বে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।
(২) ৩৫ এর উপর বয়স হলে এসবের সঙ্গে দু'বছর অন্তর অন্তর ম্যামােগ্রাম করতে হবে।
(৪) ব্রেস্ট ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেশি মনে হলে অনেকসময় অ্যান্টিইন্ট্রোজিনিক কিছু হরমােন যেমন ট্যামােক্সিফেন জাতীয় ওষুধ বছর পাঁচেকের জন্য খেতে হতে পারে।

❍ প্রশ্ন: ব্রেস্ট ক্যান্সার কি যে কোন বয়সে হতে পারে?

☛ উত্তর: হ্যা, তবে বেশি সম্ভানা রজঃনিবৃত্তির পর। অর্থাৎ ৪৫-৫০ বছর বয়স নাগাদ।

❍ প্রশ্ন: রজঃনিবৃত্তির পর হরমােন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বা এইচ আর টি করালে ব্রেস্ট ক্যান্সারের সম্ভাবনা আরাে বাড়ে?

☛ উত্তর: সব চিকিৎসারই কিছু না কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। এইচ আর টিতে যেমন জরায়ু এবং ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা। স্ত্রীরােগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতাে চিকিৎসা চালালে অত ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

❍ প্রশ্ন: গর্ভনিরােধক বড়ি থেকেও ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়?

☛ উত্তর: হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এসমস্ত ওষুধ খাবেন না।

❍ প্রশ্ন: মােটা মহিলাদের এই রােগ বেশি হয়?

☛ উত্তর: হা।

❍ প্রশ্ন: চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খেলে নাকি ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে পারে?

☛ উত্তর: হ্যা।

❍ প্রশ্ন: কী ধরনের খাবার খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরােধ করা যাবে?

☛ উত্তর: রােজকার খাদ্য তালিকায় চর্বি জাতীয় খাবারের পরিমাণ ৩০ শতাংশের নীচে হওয়ার দরকার। দেখা গেছে যারা সপ্তাহে ৫-৬ বার গরু বা শুয়ােরের মাংস খান তাদের ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ক্যান্সারের সম্ভাবনা ২০০ শতাংশ বেশি। মাঠা না ভােলা দুধ, মাখন, ঘি, চিজ, মার্জারিন, তেল এবং তৈলাক্ত খাবার কম খেতে হবে। ফল, শাক সবজি খেতে হবে বেশি করে। গাজর, পাকা পেঁপে, পালংশাক, রাঙা আলু, কুমড়াের বিটা ক্যারােটিন, লেবু, টোম্যাটো কাচা আম, আমলকী, কাঁচা পেঁপে, পেয়ারা ইত্যাদির ভিটামিন ' সি ', রাঙা আলু, সূর্যমুখী তেলের ভিটামিন ‘ ই ’ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে ক্যান্সার প্রতিরােধে সাহায্য করে। সি ফুড, লিভার, কিডনিতে রয়েছে সেলেনিয়াম। সেলেনিয়াম শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তৈরির মাত্রা বাড়ায়। সয়াবীন ও বিভিন্ন ডালের ফাইটোইস্টেজেনও ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরােধ কাজ আসে। ভূমিকা আছে ফাইবারেরও।

❍ প্রশ্ন: বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ালে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে?

☛ উত্তর: হ্যা, কারণ ব্রেস্ট ক্যান্সারে শতকরা ৯০-৯৫ ভাগ ক্ষেত্রেই আক্রান্ত হয় লােবিউল অর্থাৎ যে সমস্ত গ্রন্থিতে দুধ তৈরি হয়, এবং ডাক্ট অর্থাৎ যে পথ বেয়ে দুধ স্তন বৃন্তে এসে পৌছায়। দেখা গেছে বুকের দুধ খাওয়াতে অভ্যস্ত মহিলাদের ক্ষেত্রে এই সমস্ত জায়গায় অস্বাভাবিক কোষ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা কম।

❍ প্রশ্ন: ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়া মানে ব্রেট কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া?

☛ উত্তর: না, আজকাল জোর দেওয়া হয় ব্রেস্ট কনসারভিং থেরাপির উপর। দুটো ধাপে এই চিকিৎসা করা হয়।
(১) লামপেকটমি অর্থাৎ মাংসপিণ্ড এবং তার আশপাশের কিছু সুস্থ এলাকা এবং বাহুমূলের কিছু গ্রন্থি কেটে বাদ দেওয়া এবং
(২) ৬-৭ সপ্তাহ রেডিও থেরাপি করা।

❍ প্রশ্ন: লামপেকটমি করলে রােগ তাড়াতাড়ি ফিরে আসে?

☛ উত্তর: কাটাছেড়া হলে ক্যান্সার দ্রুতগতিতে বাড়ে সবসময় এমন নয়। অল্প বয়সে ব্রেস্ট কেটে বাদ দিলে অনেক মহিলা অবসাদে আক্রান্ত হন। ব্রেস্ট রিস্ট্রাকটিভ সার্জারি করে অবস্থা সামাল দেওয়া যায়। কিন্তু অনেকেই পর পর দুটো অপারেশনের ধকল নিতে চান না। তাছাড়া লামপেকটমির সাফল্যের হার পুরাে ব্রেস্ট কেটে বাদ দেওয়া বা ম্যাসটেকটমির থেকে কম কিছু নয়।

❍ প্রশ্ন: ম্যাসটেকটমির পর সে দিকের হাত প্রায় অকেজো হয়ে যায়?

☛ উত্তর: কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। বাহুমূল থেকে কনুই পর্যন্ত চামড়া কিছুটা অসাড় হয়ে যেতে পারে। হাত নড়াতে অসুবিধা হতে পারে। ব্যথা ফোলা ইত্যাদিও হয় অনেক সময়। সেজন্য ম্যাসটেকটমির পর কয়েকটি সাবধানতা মেনে চলা দরকার। যেমন
(১) ওই হাতে রক্তচাপ না মাপা।
(২) প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য ওই হাত থেকে রক্ত না দেওয়া।
(৩) হাত ফুলে গেলে বা ভাবী বােধ করলে ডাক্তারের সঙ্গে যােগাযােগ করা।
(৪) অ্যান্টি ইডিমা গারমেন্ট অর্থাৎ চাপা ফুল হাতা জামা পরা।
(৫) কেটে ছড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন কাজ করতে হলে গ্লাভস পরে নেওয়া ইত্যাদি।

❍ প্রশ্ন: ব্রেস্ট ক্যান্সারে কেমােথরাপি করার দরকার হয় না।

☛ উত্তর: রােগ ছড়িয়ে পড়লে দরকার হয়।

❍ প্রশ্ন: কেমােথেরাপির তাে অজস্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়?

☛ উত্তর: কী ওষুধ কতদিন ধরে কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তার উপর অনেক প্রতিক্রিয়া নির্ভর করে। সাধারণভাবে প্রথমদিকে খিদে কমে যায়। বমি বমি ভাব থাকে বা বমি হয়। মুখে ঘা, চুল পড়ে যাওয়া, পিরিয়ড আচমকা বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। রক্তে শ্বেতকণিকার পরিমাণ কমে যাওয়ায় রােগ সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে। সামান্য কাটাছেড়ায় বেশি রক্তপাত, ক্লান্তি, রক্তাল্পতা ইত্যাদি উপসর্গও দেখা দিতে পারে। কিছু ওষুধে হৃৎপিণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

❍ প্রশ্ন: সমস্যা এড়িয়ে যাওয়ার পথ নেই?

☛ উত্তর: নানারকম ওষুধ দিয়ে কেমােথরাপি করা হয়। চেষ্টা করা হয় যার যে ওষুধে অসুবিধা হচ্ছে সেটা বদলে অন্য ওষুধ দেওয়ার। কিছু ক্ষেত্রে উপসর্গ ভিত্তিক চিকিৎসাও করা হয়।

❍ প্রশ্ন: ব্রেস্ট ক্যান্সার সারে?

☛ উত্তর: প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়লে ৭০ শতাংশ মহিলা ১০ বছর ডাল থাকেন।

Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url