জরায়ু ক্যান্সার হওয়ার কারণ ও চিকিৎসা পরামর্শ

রজঃনিবৃত্তি হতে দেরি হলে অনেকে ভাবেন বুঝি জরায়ুতে ক্যান্সার হলো। এই ভয়ের কি কোনও ভিত্তি আছে? ৫০ বছর বয়স পেরিয়ে গেলেও যদি রজঃনিবৃত্তি না হয়, ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা দরকার। অনেক সময় সত্যিই এর পেছনে ক্যান্সারের বীজ লুকিয়ে থাকে। এই বিষয়ে আরো জানাচ্ছেন: ডাঃ প্রমথেশ দাশ মহাপাত্র

❍ প্রশ্ন: পিরিয়ডের সময় যাদের অতিরিক্ত রক্তনিসৃত হয়?

☛ উত্তর: অতিরিক্ত রক্তনিসৃত জরায়ু ক্যান্সারের প্রাথমিক উপসর্গ হতে পারে। এরকম হলে ডাক্তারের সঙ্গে যােগাযােগ করবেন।

❍ প্রশ্ন: কী ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে বুঝব জরায়ু ক্যান্সার হয়েছে বা হতে চলেছে?

☛ উত্তর: জরায়ু ক্যান্সারকে দু'ভাগে ভাগ করা হয়। জরায়ু মুখের ক্যান্সার এবং জরায়ুর উপর অংশের ক্যান্সার। জরায়ু মুখের ক্যান্সারে শুরুতে সাদা স্রাব ছাড়া আর তেমন কোন উপসর্গ থাকে না। রােগ এগােতে থাকলে শুরু হয় রক্তপাত। পিরিয়ডের সময় ছাড়া অন্য সময়ও রক্তপাত হতে থাকে। রজঃনিবৃত্তির পর এমন কি সহবাসের সময়ও রক্তপাত হতে পারে। ধীরে ধীরে তলপেটে ব্যথা শুরু হয়। পায়খানা প্রস্রাব করার সময়ও তলপেটে ব্যথা হয়। জরায়ুর উপর অংশের ক্যান্সারেও রক্তপাত প্রধান উপসর্গ। সঙ্গে সাদা স্রাব, তলপেটে ব্যথা ইত্যাদিও থাকতে পারে।

❍ প্রশ্ন: একে প্রতিরােধ করা যায় না?

☛ উত্তর: জরায়ু মুখ ক্যান্সারের প্রতিটি কারণই প্রতিরােধযােগ্য। যেমন ১৮ বছর বয়সের নীচে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি না করা, একাধিক পুরুষ সঙ্গী না থাকা, ধূমপান না করা, জরায়ু মুখে কোনও সংক্রমণ বা যৌন অসুখ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে যাওয়া, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা ইত্যাদি। এছাড়া উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক ৩৫ এর উপর বয়স হলে নিয়মিত স্ত্রীরােগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি। এবং ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি ৩ বছর অন্তর সারভাইকাল স্ক্রিনিং বা প্যাপ টেস্ট করা উচিত। এই টেস্টের উদ্দেশ্য ক্যান্সার হওয়ার আগেই রােগটিকে চিনে ফেলা। জরায়ুর উপর অংশের ক্যান্সার প্রতিরােধ করতে চাইলে কয়েকটি ব্যাপার খেয়াল রাখা দরকার। দেখা গেছে যে সমস্ত মহিলার বাচ্চা হয়নি বা কম বাচ্চা হয়েছে তাঁদের মধ্যে এই ধরনের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এদের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হলে এবং উচ্চ রক্তচাপ, হাইপােথাইরয়েডিজম বা ডায়াবেটিসের কোনও একটা থাকলে সে সম্ভাবনা আরও বাড়ে। অতএব এই ধরনের মহিলারা ৩৫ বছর বয়স হলেই নিয়মিত স্ত্রী রােগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যােগাযােগ রেখে চলবেন। রক্তপাতের হিসেবে সামান্যতম এদিক ওদিক হলেও তা ডাক্তারকে জানাতে ভুলবেন না।

❍ প্রশ্ন: বাচ্চা বেশি হলেও তাে জরায়ু ক্যান্সার হতে পারে?

☛ উত্তর: হ্যা, জরায়ুমুখের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

❍ প্রশ্ন: গর্ভনিরােধক বড়ি খেলে এই জাতীয় রােগ হয়?

☛ উত্তর: না।

❍ প্রশ্ন: আর হর্মোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি করালে?

☛ উত্তর: ডাক্তারের তত্ত্বাবধান ছাড়া হর্মোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি করা উচিত নয়।

❍ প্রশ্ন: ক্যান্সার হলে চিকিৎসা কি জরায়ু কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া?

☛ উত্তর: অপারেশন, রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপির এক বা একাধিক দরকার হতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় জরায়ু অপারেশনেই কাজ হয়। কিন্তু রােগ ছড়িয়ে পড়লে ওভারি, ফ্যালােপিয়ান টিউব, লিফনােড ইত্যাদিও বাদ দিতে হয়। তারপরও রােগের গতি রুখতে কেমােথরাপি বা রেডিওথেরাপি করার দরকার হতে পারে।

❍ প্রশ্ন: কিন্তু রােগের প্রথম অবস্থাতেও তাে অনেক সময় ওভাবি বাদ দেওয়া হয়?

☛ উত্তর: জরায়ুতে ক্যান্সার হলে পরবর্তী কালে ওভারিতেও তা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। রােগীকে পুরাে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলা হয়। এবং ৪৫-৫০ এর মধ্যে বয়স হলে অনেকসময় রােগীর যদি আপত্তি থাকে, ওভারি বাদ দেওয়া হয় না। কিন্তু ৫০ এর উপর বয়স হলে আমরা আর ঝুঁকি নিই না।

❍ প্রশ্ন: ওভারি ক্যান্সার কি বংশগত কারণে হতে পারে?

☛ উত্তর: সম্ভাবনা আছে। মা, বােন, মাসি, পিসি কারাের এই রােগ থাকলে সাবধান হওয়া দরকার।

❍ প্রশ্ন: কী করে বােঝা যাবে ওভারি আক্রান্ত হয়েছে?

☛ উত্তর: প্রথম দিকে খুব অস্পষ্ট কিছু উপসর্গ যেমন পেট ব্যথা, অল্প স্বল্প হজমের গণ্ডগােল, কোষ্ঠবদ্ধতা, দুর্বলতা ইত্যাদি থাকে। পরের দিকেও তেমন বিশেষ কিছু বােঝা যায়। তবে বংশে কারাের এ রােগ থাকলে সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেও ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা দরকার।

❍ প্রশ্ন: এই সমস্ত ক্যান্সারে সাফল্যের হার কী রকম?

☛ উত্তর: প্রথম অবস্থায় ধরা পড়লে চিকিৎসায় ভাল ফল পাওয়া যায়।

❍ প্রশ্ন: চিকিৎসা চলাকালীন স্বাভাবিক বিবাহিত জীবনযাপন করা যায়?

☛ উত্তর: অপারেশন এবং কেমােথরাপির পর অসুবিধে নেই। কিন্তু রেডিওথেরাপি করার দরকার হলে তা আর সম্ভব হয় না। 

Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url