দাদ, হাজা ও বর্ষাঋতুর রোগ সমূহের চিকিৎসা পরামর্শ

বর্ষাকালে কি দাদ, হাজা‘র বাড়বাড়ন্ত দেখা দেয়? স্যাতসেঁতে আবহাওয়ায় ছত্রাক সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। ফলে বাড়ে দাদ হাজার প্রকোপ। আমাদের দেশে সাধারণত ট্রাইকোফাইটন জাতীয় ছত্রাকের প্রকাপ বেশি। শরীরের যে সমস্ত জায়গায় ঘাম ও ময়লা জমে থাকার সম্ভাবনা বেশি যেমন, বাহুমূলে, কুচকিতে, অন্তবাসের নীচে, এই ধরনের ছত্রাকের আক্রমণে সেখানে দাদ হতে পারে। যাঁরা বেশি জল ঘাঁটাঘাঁটি করেন তাঁদের হাত ও পায়ের আঙুলের ফাঁকে হাজা হয়, ভিন্ন ধরনের ছত্রাকের আক্রমণে। কানের ভিতরেও ছত্রাক সংক্রমণ হতে পারে। এই বিষয়ে আরো জানাচ্ছেন: ডাঃ রাজীব শীল

❍ প্রশ্ন: বর্ষাকালে যে অনেক সময় কানে ব্যথা হয় তা কি ছত্রাক সংক্রমণের দরুন?

☛ উত্তর: সব সময় নয়। তবে ছত্রাক সংক্রমণ হলেও কানে হঠাৎ করে খুব ব্যথা হয়। কান দপদপ করে। চুলকোয়। কান পরিষ্কার করলে ভেজা ব্লটিং পেপার বা কয়লার গুডাের মতাে ময়লা বের হয়।

❍ প্রশ্ন: এদের এড়াতে কী করব?

☛ উত্তর:
(১) শুকনাে ঢিলে সুতির পােশাক পরবেন। পােশাক যেন পরিষ্কার থাকে।
(২) শরীর সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। স্নানের পর বা বাইরে থেকে ঘুরে আসার পর শরীরের জল বা ঘাম ভাল করে মুছে অথবা মেডিকেটেড সাবান দিয়ে ধুয়ে হালকা করে পাউডার লাগাতে হবে। স্নানের সময় কানে যাতে জল না ঢােকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
(৩) ঘামে ভেজা শরীরে ছত্রাক বাসা বাঁধে বেশি। যে সমস্ত জায়গায় বেশি ঘাম জমে সেখানে প্রচুর পাউডার ঢেলে রাখার বদলে ঘাম মুছে শুকনাে রাখার চেষ্টা করা দরকার।
(৪) হাত ও পায়ের আঙুলের ফাঁকে যেন ময়লা না জমে।
(৫) জল কাদা এড়াতে গামবুট বা প্লাস্টিকের জুতাে পরতে হবে। যাঁদের প্লাস্টিকে এলার্জি আছে তাঁরা বাড়ি ফিরেই পা শুকননা করে ধুয়ে মুছে নেবেন।
(৬) বেশি জল খাটতে হলে রবারের গ্লাভস ব্যবহার করা যায়। তবে দীর্ঘক্ষণ ব্যবহারে এর থেকে কিছু চর্মরােগ হতে পারে।
(৭) সমস্যা হলে চর্মরােগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যােগাযােগ করবেন।

❍ প্রশ্ন: আলতা পরলে হাজা কমে যায়?

☛ উত্তর: একদম নয়।

❍ প্রশ্ন: তাহলে দাদ, হাজা হলে কী করতে হবে?

☛ উত্তর: রাস্তাঘাটে যে দাদ হাজার মলম কিনতে পাওয়া যায় তা ব্যবহার করবেন না। প্রায় ক্ষেত্রেই এগুলােতে বিশেষ কিছু থাকে না। কিছু ক্ষেত্রে উল্টোপাল্টা জিনিস থাকার দরুন রােগের হয়তাে সাময়িক আরাম হয়। কিন্তু চামড়ার ক্ষতি হয়। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত ব্যবহার করা উচিত মাইকোনাজল, কোট্রাইমাজল, ইকোনাজল জাতীয় লাগানাের ওষুধ। কানেও এই জাতীয় ড্রপ ব্যবহার করা যায়। কখনও মুখে খাওয়ার ওষুধও দরকার হতে পারে। কিন্তু রােগ ওই পর্যায়ে পৌঁছলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া কিছু করা উচিত নয়।

❍ প্রশ্ন: বর্ষাকালে আমাশা বেশি হয়?

☛ উত্তর: বর্ষাকালে ব্যাপক জলদূষণের ফলে আমাশা, জিয়ার্ডিয়া, কৃমি সব কিছুরই সম্ভাবনা বাড়ে।

❍ প্রশ্ন: কীভাবে এড়ানাে যাবে?

☛ উত্তর: খাবার এবং জলের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে। বাড়িতে কারও এ রােগ হয়ে থাকলে আরও সাবধানতা দরকার।

❍ প্রশ্ন: জল এবং খাবারের ব্যাপারে সতর্ক হলে জন্ডিসও এড়ানাে যাবে?

☛ উত্তর: জন্ডিস নানা কারণে হতে পারে। এর মধ্যে ইনফেকটিভ হেপাটাইটিস অর্থাৎ ভাইরাস এ এবং ই-র দ্বারা যে জন্ডিস হয় তার প্রকোপ বাড়ে। ভাইরাস ই জন্ডিস কখনও কখনও। মারাত্মক রূপ নিতে পারে। এমন কি ঠিকঠাক সাবধানতা না নিলে মহামারী হওয়াও অসম্ভব নয়। এই জীবাণু শরীরে ঢােকে ফিকাল ওরাল রুট ধরে। অর্থাৎ সংক্রামক মলমূত্রের মাধ্যমে দূষিত জল খাওয়া, বান্না করা অথবা বাসন ধােয়ার কাজে ব্যবহার করলে। গ্রামাঞ্চলে কাছাকাছি কালাের ইনফেকটিভ হেপাটাইটিস হলে সেই পুকুরের জল স্নান, জামাকাপড় ধােয়ার কাজেও ব্যবহার করা ঠিক নয়। অবশ্য এই ভাইরাস দুটি রক্তের মাধ্যমেও শরীরে ঢুকতে পারে।

❍ প্রশ্ন: ফিকাল ওরাল রুট ধরে আস্ত্রিক, কলেরা, টাইফয়েড ইত্যাদির জীবাণুও তাে শরীরে ঢুকতে পারে?

☛ উত্তর: হ্যা, আসলে বর্ষাকালে ফাংগাস, ব্যাকটিরিয়া, ভাইরাসের প্রকোপ এত বাড়াবাড়ি রকমের হয় যে সাধারণ আমাশা থেকে রক্ত আমাশা, আন্ত্রিক, কলেরা, টাইফয়েড সব রােগেরই বাড়বাড়ন্ত হতে পারে। তার উপর আমাদের অজ্ঞতার দরুন রােগের প্রকোপ বাড়ে। যেমন, এখনও আমরা টয়লেট পেপার ব্যবহারের কথা ভাবিই না। কিন্তু অনেক ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসই জল সাবানে পুরােপুরি ধুয়ে যায় না। ফলে মানুষটি খাবার দাবার তৈরি বা পরিবেশনের সঙ্গে যুক্ত থাকলে খাবারের মাধ্যমে অতি সহজেই জীবাণুরা ছড়িয়ে পড়তে পারে। রাস্তার কাটা ফল, আটকা খাবার, রঙিন সরবত বা আখের রস এখনও নির্বিকারে খাওয়া চলে। আর চলে যত্র তত্র মল মূত্র ত্যাগ। থুথু ফেলা। এসব ত্যাগ করতে পরালে বর্ষায় বিভিন্ন রােগের প্রকোপ অবশ্যই কমবে।

❍ প্রশ্ন: চিকিৎসা?

☛ উত্তর: ভাইরাস সংক্রমণে শরীরে জল লবণের ঘাটতি পূরণ করা এবং উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা চলে। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঠেকাতে দেওয়া হয় অ্যান্টিবায়ােটিক। অবশ্য ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করাও আজকাল বেশ শক্ত কাজ। কারণ অনেকদিন যাবৎ কথায় কথায় অ্যান্টিবায়ােটিক খাওয়ার বদভ্যাসের ফলে ব্যাকটেরিয়াদের প্রতিরােধ শক্তি অনেকগুণ বেড়ে গেছে। কাজেই চিরাচরিত ওষুধ নয়, চিকিৎসা করতে হয় অত্যাধুনিক ওষুধপত্রে সাহায্যে। তার সঙ্গে চলে ওবাল বিহাইড্রেশন থেরাপি। অবস্থা জটিল হলে স্যালাইন।

Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url