ফুসফুস ক্যান্সার কেন হয়? জানুন চিকিৎসা পরামর্শ

কোনও উপসর্গ নেই। রুটিন হেলথ চেক-আপের সময় বুকের এক্সরে করে ধরা পড়ল ফুসফুসে ক্যান্সার। উপসর্গ ছাড়াও এভাবে তলে তলে রােগ এগােতে পারে কি? তা পারে। রােগের শুরুতে অনেক সময়ই উপসর্গ তেমন থাকে না। কখনও আবার থাকে। লােকে গুরুত্ব দেয়না। ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে এটা বেশি দেখা যায়। খুসখুসে কাশি হয়ত চলছে। এরা ধরে নেন ধূমপানের জন্য ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস আছে, কাশি তার জন্য। দু'চারদিন সিগেরেট বন্ধ রেখে, কাফ সিরাপ খেয়ে, গার্গেল করে অবস্থা একটু সামলে গেলে আবার ধূমপান শুরু হয়। ফলে উপসর্গ কিছুটা চাপা থাকলেও রােগ বাড়তে থাকে। এই বিষয়ে আরো জানাচ্ছেন: ডাঃ সরােজ গুপ্ত

❍ প্রশ্ন: ফুসফুস ক্যান্সারে কী কী উপসর্গ থাকে?

☛ উত্তর: প্রথম অবস্থায় সামান্য কাশি। তারপর তা বাড়তে থাকে এবং ওষুধপত্রে সারে না। কাশির সঙ্গে প্রথমে কফ পড়ে। তারপর রক্ত। পরবর্তী ধাপে বুকে ব্যথা এবং অল্প থেকে মারাত্মক স্বাসকষ্ট।

❍ প্রশ্ন: কিন্তু ফুসফুস ক্যান্সারে অনেক সময় মাথা ব্যথা, ঘাড় মুখ ফুলে যাওয়া, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গও তাে থাকে?

☛ উত্তর: চিকিৎসা না হলে ক্যান্সার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। একে বলে মেটাস্টেটিস। ক্যান্সার মাথায় পৌঁছলে মাথা ব্যথা, বমি, দৃষ্টিশক্তির ঘাটতি থেকে পক্ষাঘাতও হতে পারে। হাড়ে গেলে ব্যথা, হাড় ভেঙে যাওয়া, ঘারে লিম্ফ নােডে পৌছলে ঘাড় মুখ ফুলে যাওয়া, ব্যথা ইত্যাদি নানান কষ্ট শুরু হয়। দ্রুত ওজন কমতে থাকাও অনেক সময় ক্যান্সারের প্রাথমিক উপসর্গ হতে পারে।

❍ প্রশ্ন: ফুসফুস ক্যান্সার ধরা পড়ার পর রােগী আর বেশি দিন বাঁচেন না?

☛ উত্তর: প্রথম অবস্থায় ধরা পড়লে শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ ক্ষেত্রে অপারেশন এবং প্রয়ােজন অনুযায়ী রেডিওথেরাপি বা কেমােথেরাপির সাহায্যে রােগীকে সুস্থ করে তােলা যায়। কিন্তু রােগ অনেকদূর এগিয়ে গেলে বা অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়লে সব রকম চিকিৎসা করেও বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখা যায় না।

❍ প্রশ্ন: ছড়িয়ে পড়া রােখা যায় না?

☛ উত্তর: এই জন্যই তাে চিকিৎসা। অপারেশনে করে আক্রান্ত জায়গা বাদ দেওয়া, রেডিও থেরাপি করে অসুস্থ কোষ মেরে ফেলা এবং কেমােথেরাপির সাহায্যে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছনাে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা। কিন্তু প্রতিটি পদ্ধতিরই সীমাবদ্ধতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। রােগের গতি ভীষণ বেড়ে গেলে অনেক সময়ই এরা আর তাল সামলাতে পারে না। কাজেই ফুসফুস ক্যান্সারের হাত থেকে মুক্তি পেতে চাইলে সহজতম উপায় একে প্রতিরােধ করা।

❍ প্রশ্ন: কীভাবে? সিগারেট না খেয়ে?

☛ উত্তর: একদম তাই। যাঁরা সিগারেট খান তাদের ১,০০,০০০ জনের মধ্যে ২০০ জন ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। আর যাঁরা খাননা তাদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১,০০,০০০ জনে ৪ জন। আরও হিসেব আছে। আমেরিকাতে প্রতি বছর যত ক্যান্সার রােগীর মৃত্যু হয় তার এক তৃতীয়াংশই ধূমপানজনিত ফুসফুস ক্যান্সারের দরুণ। আমাদের দেশে এই সংখ্যাটা আরও বেশি।

❍ প্রশ্ন: যাঁদের বাধ্য হয়ে পরোক্ষ ধূমপান করতে হয়?

☛ উত্তর: যে মহিলার স্বামী ধূমপান করেন তার ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা হলো; যে মহিলার স্বামী ধূমপান করেন না তার থেকে ৩০ শতাংশ বেশি।

❍ প্রশ্ন: কত দিন ধরে কী পরিমানে ধূমপান করলে ক্যান্সার হবে?

☛ উত্তর: এভাবে নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে দিনে ১ প্যাকেট সিগারেট বছর ১০/১২ ধরে খেয়ে গেলে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।

❍ প্রশ্ন: ২-৪ বছর সিগারেট খাওয়ার পর কেউ যদি ছেড়ে দেন, তার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে?

☛ উত্তর: সম্ভানা কমে যায়।

❍ প্রশ্ন: বংশগত কারণে ফুসফুসে ক্যান্সারে হতে পারে?

☛ উত্তর: সরাসরি কোনও প্রমাণ নেই। তবে অনেক সময় একই পরিবারে দু-চার জনের মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সার দেখা যায়। আবার একই রকম জীবন যাপন করেন দু'জন মানুষ, তাদের এক জনের ক্যান্সার হল, এক জনের হল না। এ সমস্ত থেকে মনে হয়; হয়তো জিনগত কোনও কারণ থাকতে পারে এর পেছনে। এবং ধুমপান, পরিবেশ দূষণ বা বিশেষ কোনও পেশা রােগটাকে বাইরে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে বা বাড়িয়ে তােলে।

❍ প্রশ্ন: বিশেষ পেশা বলতে?

☛ উত্তর: অ্যাসবেসটস খনিতে যারা কাজ করেন, পাট কারখানায় বা ক্রোমেট, নিকেল আর্সেনিক উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ইলেকট্রোপ্লেটিং এবং ধাতু কারখানার শ্রমিকদের মধ্যেও এর সম্ভাবনা আছে।

❍ প্রশ্ন: ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরােধ বিটা ক্যারােটিনের ভূমিকা আছে?

☛ উত্তর: বিটা ক্যারােটিন আছে যে সমস্ত খাবারে অর্থাৎ গাজর, গাঢ় সবুজরঙের শাক সবজি ইত্যাদি খাওয়া সবসময়ই ভাল। তবে ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরােধে এদের কতটা ভূমিকা আছে তা জানা নেই। ফুসফুস ক্যান্সার হয় মূলত শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে শ্বাসনালি এবং ফুসফুসে ক্ষতিকর পদার্থ ঢুকবার জন্য। প্রতিরােধ করতে চাইলে এই ব্যাপারটাকে প্রতিরােধ করতে হবে। সুষম খাবার দাবার সাধারণ স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে।

❍ প্রশ্ন: পরিবেশ দূষণের প্রভাব এড়াতে গেলে তাে নাকে রুমাল চাপা দিয়ে ঘুরতে হবে?

☛ উত্তর: অসুবিধে কী? ট্রাফিক পুলিশ বা মােটর সাইকেল, স্কুটার যারা চালান তাদের অনেকেই তাে এক ধরনের ক্যাপ ব্যবহার করেন। তবে তার থেকেও বড় দরকার সিগারেট এবং সিগারেট যিনি খান তার সঙ্গ বর্জন করা।

❍ প্রশ্ন: এই রােগটা কি ছেলেদের বেশি হয়?

☛ উত্তর: মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৫ গুণ বেশি।

❍ প্রশ্ন: সাধারণত কোন বয়সে এই রোগ হয়?

☛ উত্তর: ৩৫ থেকে ৬৫ মধ্যে যে কোনও সময়। সবথেকে বেশি সম্ভাবনা ৫০ বছরের আশে পাশে।

Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url