বাচ্চার সমস্যা দূর করতে মা-বাবারও সাইকোথেরাপি জরুরি

বাচ্চা মিথ্যে কথা বলছে, পড়াশােনায় মন নেই। কী করব? বাচ্চার আচরণগত ত্রুটি ওষুধপত্রের সাহায্যে ঠিক করা যায় না। যদি না এর পেছনে দুশ্চিন্তা বা অবসাদ জাতীয় কোনও সমস্যা লুকোনাে থাকে। এসব ক্ষেত্রে দরকার হয় সাইকোথেরাপি এবং কাউন্সেলিংয়ের। বাচ্চা, বাবা, মা প্রত্যেকের। কিছুক্ষেত্রে পরিবেশ পরিস্থিতিরও পরিবর্তন করতে হয়। এই বিষয়ে আরো জানাচ্ছেন: ডাঃ দেবাশিস চট্টোপাধ্যায়

❍ প্রশ্ন: বাচ্চার সমস্যা দূর করতে মা বাবার সাইকোথেরাপি?

☛ উত্তর: হ্যা। তার কারণ অধিকাংশ সময় বাচ্চার মধ্যে সমস্যার সৃষ্টি হয় মা বাবা এবং পারিপার্শ্বিকের জন্য। আচরণগত সমস্যা নিয়ে যে সমস্ত বাচ্চা আমাদের কাছে আসে তাদের অনেকের পরিবারেই কিছু না কিছু ঝঞ্জাট থাকে। যেমন
(১) বাবা মার মধ্যে বনিবনার অভাব
(২) তাঁদের কারও কোনও মানসিক সমস্যা
(৩) বাবা বা মার মধ্যে কেউ ড্রাগ অ্যাডিক্ট অথবা অ্যালকোহলিক হলে
(৪) বাড়িতে ডিসিপ্লিনের অভাব, দিনরাত ঝগড়া অশান্তি
(৫) বাচ্চার ওপর জোর জবরদস্তি করা, বেশি চাহিদা থাকা
(৬) মা বাবার এক সঙ্গে না থাকা ইত্যাদি অজস্র বিষয়ের প্রভাব পড়ে বাচ্চার পর। তার প্রকাশ একেক বাচ্চার ক্ষেত্রে একেকভাবে হয়। কেউ অবসাদগ্রস্থ হয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। অবসাদের কারণেই কেউ আবার খিটখিটে হয়ে যায়। বাবা মার মাত্রাতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে কারাের মধ্যে দুশ্চিন্তার জন্ম হয়। কারাের মধ্যে নানারকম আচরণগত সমস্যা দেখা দেয়।

❍ প্রশ্ন: কী রকম?

☛ উত্তর: আচরণগত সমস্যা হাজার একটা হতে পারে। যেমন
(১) অবাধ্যতা
(২) কারণে অকারণে মিথ্যে বলা
(৩) পড়াশােনায় অমনোেযােগ
(৪) স্কুল পালানাে
(৫) সবাইকে বিরক্ত করা
(৬) ছােটদের, বয়স্কদের মারধর করা
(৭) অতিরিক্ত চাহিদা এবং না পেলে চেঁচামেচি, অশান্তি করা
(৮) টাকা পয়সা চুরি করা ইত্যাদি। এই সব আচরণগুলির মধ্যে এক বা একাধিক বাচ্চার মধ্যে থাকলে বুঝে নিতে হবে তার চরিত্রে আচরণ গত সমস্যা আছে।

❍ প্রশ্ন: কিন্তু এর এক বা একাধিক তাে সব বাচ্চার মধ্যেই থাকে। বিশেষ করে অবাধ্যতা পড়াশােনায় অমনােযোগ বা চাহিদা?

☛ উত্তর: সেতো সব কটাই অল্প বিস্তর সবার মধ্যে থাকবে। মাত্রা ছাড়ালে তবেই তা আচরণগত সমস্যা। উদাহরণ দিই। বাচ্চাকে স্নানে যেতে বললেন। প্রথম দুবার সে গেল না। কিন্তু তৃতীয়বার একটু বকাঝকা করতে চলে গেল। অর্থাৎ জোর দিয়ে বললে তার সাহস হচ্ছে না সেটা অমান্য করতে। পড়তে বসার জন্য রােজই মনে করিয়ে দিতে হয়। বসার পরও একশ বার জল খাব’, বাথরুম যাব’ ইত্যাদি নানান বাহানা। কিন্তু কোনও দিন আপনার মন মেজাজ যদি খারাপ থাকে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও মােটামুটি চুপচাপ পড়ে নেয় বাচ্চা। বা নানা জিনিসের জন্য বায়না করে, কিন্তু বুঝিয়ে বা বকে প্রায় সময়ই থামিয়ে দিতে পারা যায়। এগুলি সবই স্বাভাবিকের পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু স্নানের জন্য যদি বারবার বলতে হয় বা রােজই স্নানে পাঠাতে চেঁচামেচি, মারধর করার দরকার পড়ে বুঝতে হবে বাচ্চার মধ্যে আচরণগত সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে বা হয়ে গেছে। চাহিদা যদি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে যা চাইবে তৎক্ষণাৎ তা দিতে হবে নাহলে বাচ্চা ভাঙ্গুর করবে, কি তুমুল কান্নাকাটি করবে, কি খাওয়া বন্ধ করে দেবে, অবশ্যই তার মধ্যে সমস্যা দেখা দিয়েছে। পড়াশােনার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। বলে বলেও পড়তে বসানাে যাচ্ছে না, রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে কিন্তু তা নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই বাচ্চার। পরবর্তী ধাপে সে মিথ্যে কথা বলবে, স্কুল পালাতে শুরু করবে। অর্থাৎ একটি সমস্যা দেখা দিলে তার সঙ্গে লাইন বেঁধে হাজারটা সমস্যা এসে হাজির হবে।

❍ প্রশ্ন: এসব ক্ষেত্রে কী করব?

☛ উত্তর: বাচ্চার আচার আচরণ বিচ্যুতি দেখা দিলে সচেতন হয়ে যান। বকাঝকা বা মারধর করে সমস্যার গভীরে ঢােকবার চেষ্টা করুন। প্রথমে খেয়াল করে দেখুন বাচ্চার মধ্যে কবে থেকে এই জাতীয় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ঠিক সেই সময় বা আগে বাড়িতে বা স্কুলে কোনও সমস্যা হয়েছিল কিনা। বাচ্চা যাঁদের সঙ্গে ওঠবােস করে যেমন মা, বাবা, ভাই, বােন, পিসি, দাদু, ঠাকুমা এদের মধ্যে কোনও সমস্যা দেখা দিয়েছে কিনা। বাড়িতে বাবা মার মধ্যে ঝগড়া অশান্তি বেড়ে গেলে বাচ্চার মধ্যে নিরাপত্তার অভাব দেখা দিতে পারে। অন্যদের জ্বালাতন করা, অবাধ্যতা, পড়াশােনা না করা, মিথ্যে কথা বলা সব কিছুসম্ভব এই অবস্থায়। ডিসিপ্লিনের অভাব থেকে যেমন সমস্যা দেখা দেয়, অতিরিক্ত চাপ এবং চাহিদার ফলেও বাচ্চার মধ্যে অশান্তি, উদ্বেগের জন্ম হতে পারে। বেশি শাসন যেমন বাচ্চাকে বিদ্রোহী করে তুলতে পারে, সবসময় আগলে আগলে রাখলেও সমস্যা দেখা দেওয়া সম্ভব। এর আবার তৃতীয় আরেকটি দিক আছে। বাবা হয়তাে খুব শাসন করেন, মা আগলে রাখেন। বা মা শাস্তি দিতে গেলে ঠাকুমা, দিদিমা বাধা দেন। শুধুমাত্র শাসন বা আগলানাের চেয়ে এ কিন্তু আরও খারাপ। খারাপ ছােটখাট ব্যাপার নিয়ে সবসময় বাচ্চার পেছনে লেগে থাকাও। বাচ্চাকে সুস্থ রাখতে চাইলে বাবা মা এবং বাড়ির অন্যদের এ সমস্ত অভ্যেস পরিবর্তন করতে হবে। আর একটি ব্যাপার বিশেষ কবে খেয়াল রাখা দরকার। স্বামী স্ত্রী হয়তাে ঝগড়াঝাটির জন্য নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বন্ধ কবে আছে, দরকারি কথা চলছে বাচ্চার মাধ্যমে। অথবা বাচ্চার সামনেই দু'জন দু'জনকে যাচ্ছেতাই ভাবে গালমন্দ কবে যাচ্ছেন। খুব অল্পদিনের মধ্যেই এইসব অশান্তির প্রভাব কিন্তু বাচ্চার উপর পড়বে। বাচ্চার খাতিবে বাচ্চার সামনে ঝগড়াঝাটি বন্ধ করুন। তা সম্ভব না হলে বরং আলাদা হয়ে যান। দিনরাত অশান্তির চেয়ে এই ব্যবস্থা বােধহয় তুলনামূলকভাবে ভাল। অন্তত বাচ্চার জন্য।

❍ প্রশ্ন: কিন্তু মা বাবা একসঙ্গে না থাকলেও তাে বাচ্চার মধ্যে আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পাবে?

☛ উত্তর: পরিসংখ্যান তাই বলে বটে। তবে এক্ষেত্রে কারণ বােধহয় বাবা বা মার একা থাকা নয়। তাদের ব্যক্তিত্বের সমস্যা। একা থাকা মহিলা বা পুরুষের মধ্যে অধিকাংশ সময় উদ্বেগ, অশান্তি, অস্থিরতা, হতাশা, অনিশ্চয়তা ইত্যাদি মিলেমিশে এক জটিল মানসিক অবস্থার জন্ম হয়। যার ফলে তাদের আচার আচরণে অনেক সময়ই পারম্পর্য রক্ষা হয় না। ফলে বাচ্চা মানসিকভাবে সুস্থির হতে পারেনা। কিন্তু একা মহিলা বা পুরুষ নিজে যদি সমস্যামুক্ত থাকেন, বাচ্চাকে ঠিকভাবে দেখভাল করেন, বাচ্চার সমস্যা তেমন হওয়ার কথা নয়।

❍ প্রশ্ন: মিথ্যে কথা বলা, অন্যকে মারধাের করা বা স্কুল পালানাে সাইকোথেরাপি করে ঠিক হয়ে যাবে?

☛ উত্তর: সাইকোথেরাপি ওষুধ নয়। দিলাম আর পরদিন বাচ্চা ভাল হয়ে গেল তেমন হবে। সাইকোথেরাপিস্ট বাবা মায়ের সঙ্গে বসে বাচ্চার ক টা আচরণে অসঙ্গতি আছে তার একটা তালিকা তৈরি করবেন। এবার তাকে সাজানাে হবে গুরুত্ব অনুযায়ী। একে বলে বিহেভিয়ার চেকলিস্ট। এবার সেই সব সমস্যা একে একে দূর করার জন্য বাবা মা বা বাড়ির অন্য লােকজনেরা কীভাবে বাচ্চার সঙ্গে ব্যবহার করবেন সেটা শেখানে থেরাপিস্ট। একটা পদ্ধতির কথা বলি। একে বলে টাইম আউট-টেকনিক। এতে বাচ্চাকে খানিকটা আলাদা করে দেওয়া হয়। তার চেঁচামেচি, কান্না, অন্যকে বিরক্ত করা বা আবার কোনওটাকেই আর তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। প্রথম দিকে শুরু আদায় করার জন্য বাচ্চা নানারকম বাড়াবাড়ি করতে থাকে। বেশিঅশাস্তিকরা, ভাঙ্গুর করা, অবাধ্যতা, খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া ইত্যাদি নানান কিছু করেও যখন সে দেখে যে কিছু করেই আর কারও মনােযােগ আকর্ষণ করা যাচ্ছে না তখন তার মধ্যে একটা পরিবর্তন আসে। এই পরিস্থিতিতে সাইকোথেরাপি খুব ভাল কাজে আসে। বাচ্চা চাইছে সবার কাছে আগের মতাে গুরুত্ব পেতে। থেরাপিস্ট তাকে বলছে কী কী অভ্যেস পরিবর্তন করলে আবার সব আগের মতাে হবে। মা বাবা থেরাপিস্টের কাছে শিখছেন এই পরিস্থিতিতে কীভাবে বাচ্চার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। পুরাে ব্যাপারটা যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ। এবং প্রচুর ধৈর্য ধরতে হয় বাবা মাকে। কিছুটা ত্যাগ স্বীকারও করতে হয়।

❍ প্রশ্ন: কতদিন মােট সময় লাগবে?

☛ উত্তর: সেটা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। বাচ্চার মধ্যে কতটা সমস্যা দেখা দিয়েছে, কী ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে, বাড়ির লােকজন কতটা সাহায্য করছেন ইত্যাদি। তাও মােটামুটি ৩-৬ মাস সময় লাগতে পারে।

❍ প্রশ্ন: যদি সমস্যা স্কুলে হয়?

☛ উত্তর: যদি স্কুলের পরিবেশ বাচ্চা মানিয়ে নিতে না পারে, অনেক সময় সাধারণ মানের ছাত্র খুব ভাল স্কুলে পড়লে তার মধ্যে হীনম্মন্যতা দেখা দিতে পারে, সেখান থেকে আরও অন্যান্য সমস্যা, স্কুল পাল্টে দিলে সমস্যা মিটে যায়। প্রথমেই অবশ্য স্কুল পাল্টানাের কথা ভাবা হয় না। বাচ্চাকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কীভাবে মানিয়ে চলতে হবে তা শেখানাে হয়। যদি দেখা যায় অন্যত্র বাচ্চা ভালভাবেই মানিয়ে নিতে পারছে কিন্তু অসুবিধে হচ্ছে স্কুলে তখন স্কুল বদলানাের কথা ভাবা হয়।

❍ প্রশ্ন: অনেকে বলেন বাচ্চা চাওয়া মাত্র সব জিনিস দিয়ে দিলে বাচ্চা বিগড়ে যায়।

☛ উত্তর: বাচ্চাকে যিনি বড় করে তুলকে তার মধ্যে কিছুটা দৃঢ়তা ও কর্তৃত্ববােধ থাকা দরকার। চাওয়ামাত্র সব জিনিস দেওয়া যেমন ঠিক নয়, ঘ্যান ঘ্যান করার পর দেওয়া আরও খারাপ। প্রথমে দেখে নিন কোন জিনিস দেওয়া আপনার আয়ত্তের মধ্যে। সেটা চাইলে একবার চাওয়ার পরই দিয়ে দিন। আর দেবেন না মনস্থ করলে বাচ্চাকে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিন কেন আপনি সেটা তাকে দিতে চাইছে না। বােঝনাের পর বাচ্চা কান্নাকাটি, লাফালাফি যতই করুক সেদিকে আর নজর দেবেন না। দেওয়া দেওয়ির ব্যাপারে পুরস্কার-শাস্তি প্রথা চালু করতে পারেন। হয়ত বাচ্চা সাইকেল চাইল, বলুন পরীক্ষায় আগের চেয়ে ভাল ফল করলে কিনে দেবেন। অনেক সময় এতে বাচ্চারা ভাল কাজ করতে উৎসাহ পায়। তবে ব্যাপারটা যেন বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।

❍ প্রশ্ন: কিছু বাচ্চা আছে ৩-৪ বস্তু বয়স থেকেই উৎপাত করে সবাইকে পাগল করে দেয়। এত ছােট বাচ্চার সাইকোথেরাপি করা যায়?

☛ উত্তর: এদের হাইপার অ্যাকটিভ বা হাইপার কাইনেটিক বলে। রােগটার নাম অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার। এদের মূল সমস্যা মনঃসংযােগের মারাত্মক অভাব। যার ফলে ২-৪ মিনিটের বেশি কোনও জায়গায় বা কোনও খেলাধুলাতেও এরা আটকে থাকতে পারে না। এদের তাৎক্ষণিক আবেগও মারাত্মক। হঠাৎ মনে হল তাে রাস্তায় চলে গেল বা ছাদে উঠে পড়ল কি আগুনে হাত দিয়ে দিল। অ্যাক্সিডেন্টের সম্ভাবনা এদের ক্ষেত্রে খুব বেশি। তবে এসময় কিন্তু মা বাবা এদের নিয়ে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে সচরাচর আসেন না। আসেন আরেকটু পরে, ৮-৯ বছর বয়সে। তখন সমস্যা পড়াশােনায় মন নেই। হাইপার কাইনেটিক বাচ্চাদের ওষুধপত্র এবং বিহেভিয়ার থেরাপির সাহায্যে ভাল করে তােলা যায়।

❍ প্রশ্ন: কিছু বাচ্চা দুষ্টুমি হয়তাে করে না কিন্তু ঘ্যান ঘ্যান করে বা দিনরাত পায়ে পায়ে ঘুরে বিরক্ত করে। এদের জন্য কোনও থেবাপি নেই?

☛ উত্তর: কোনও কারণে বাচ্চার মধ্যে অবসাদ দেখা দিলে এরকম হতে পারে। কারণ খুঁজে বার করে তার সমাধান করে এবং ওষুধপত্রের সাহায্যে অবস্থা সামলে ফেলা যায়।

❍ প্রশ্ন: বাচ্চার সব দুষ্টুমির পিছনেই কি কারণ থাকে?

☛ উত্তর: কারণ হয়তাে থাকে। তবে তা মারাত্মক নাও হতে পারে। নজর কারার জন্য বাচ্চা কাঁদবে, দুষ্টুমি করবে এ তাে স্বাভাবিক। তবে এটা যেন অভ্যেসে পরিণত না হয়।

Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url