তন্ত্র শাস্ত্র মতে তান্ত্রিক কার্যে ঔষধ সংগ্রহের আবশ্যক নিয়ম

আমরা অনেক সময় তান্ত্রিক কার্যে গাছপালা, লতা-পাতা, ফুল-ফল, ছাল, শেখড় ইত্যাদি বিভিন্ন বশীকরণ, সম্মোহন সহ ষট্‌কর্মের নানান কাজে এগুলো ব্যবহার করি। কিন্তু এই সকল তরুলতাদি ব্যবহারের কিছু তান্ত্রিক বিধি রয়েছে। এই সকল বিধি-বিধান জানা না থাকলে, তান্ত্রিক কার্যে আপনি সফলতা লাভ করতে পারবেন না। শুধুমাত্র তান্ত্রিকতা নয়, আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও বিধিগুলো প্রয়োগ করলে সুফল পাবেন। এই প্রবন্ধে আমরা সেই বিষয়ে আলোচনা করব। এছাড়াও তন্ত্র শাস্ত্রে ভক্তি, নিষ্ঠা ও বিশ্বাস হল সাধকের মূল হাতিয়ার। তন্ত্র শাস্ত্র মতে ঔষধ তৈরির নিয়মাবলী ও বিধি নিম্নে দেয়া হল।

মূলিকা গ্রহন বিধি:
বিধিমন্ত্র সমাযুক্তমৌষধং সফলং ভবেৎ। বিধিমন্ত্রবিহীনস্ত কাষ্ঠবদ্ভেষজং ভবেৎ॥

ঔষধ যথা নিয়মে প্রস্তুত ও মন্ত্রসমন্বিত হইলেই ফলদায়ক হইয়া থাকে। কিন্তু বিধি মন্ত্র-বিহীন হইলে উহা কাষ্ঠবৎ বিফল হয়, অর্থাৎ তাহাতে কোন ফল লাভের আশা নাই। অর্থাৎ ষট্‌কর্ম্মসাধনার্থ ঔষধ সম্বন্ধে যে সমস্ত মন্ত্র ও যেরূপ নিয়ম লিখিত আছে, তদনুসারে কার্য্য করিলে সিদ্ধিলাভ হয়, নচেৎ সমস্ত বিফল হইয়া থাকে।

ঔষধ সংগ্রহের নিয়ম:
ভূতাদিযুক্তমভ্যর্চ্চ্য গিরিশং প্রাতরুত্থিতৈঃ।
শ্রদ্ধৈরূপাসিতৈর্ব্বাপি সংগ্রাহ্যং সর্ব্বমৌষধম্।

প্রভাতে শয্যা হইতে গাত্রোত্থান পূর্ব্বক ভূতাদির সহিত শিবের অর্চ্চনা করতঃ ঔষধ সংগ্রহ করিতে হয়। শ্রদ্ধাসহকারে উপবাসী থাকিয়া ঔষধ সমূহ সংগ্রহ করা বিধেয়।

ঔষধ সংগ্রহে মন্ত্র:
ইতোবং সর্ব্বমূলানাং বিধিমন্ত্রশ্চ কথ্যতে।
আদৌ বৃক্ষমূলং গত্বা তদন্তে চাভিমন্ত্রয়েং॥
ওঁ বেতালাশ্চ পিশাচাশ্চ রাক্ষসাশ্চ সরীসৃপাঃ ।
অপসর্পন্তু তে সর্ব্বে বৃক্ষাদস্মাচ্ছিবাজ্ঞয়া॥

প্রথমে তরুমূলে বা নির্দিষ্ট ঔষধি গাছের নিকটে এসে হাতজোড় করে ভক্তি সহকারে—

"ওঁ বেতালাশ্চ পিশাচাশ্চ রাক্ষসাশ্চ সরীসৃপাঃ ।
অপসর্পন্তু তে সর্ব্বে বৃক্ষাদস্মাচ্ছিবাজ্ঞয়া॥"

মন্ত্রটুকু পাঠ করিবে অর্থাৎ ‘বেতাল, পিশাচ, রাক্ষস ও সরীসৃপ যে কেহ আছো শিবের আদেশে এই বৃক্ষ হইতে অপসারিত হও" ইহা বলিতে হইবে। তারপর নিচের প্রণাম মন্ত্র পাঠ করবে।

প্রণাম মন্ত্র:
ওঁ নমস্তেঽমৃত সম্ভুতে বলবীর্য্যবিবর্দ্ধিনি। পরমায়ুশ্চ মে দেহি পাপাম্মে ত্রাহি দূরতঃ॥

হে অমৃত সম্ভুতে বলীয়াবিবর্দ্ধিনি! আমাকে বল ও পরমায়ু প্রদান করো এবং আমার পাপরাশি ধ্বংস কর; আমি তোমাকে নমস্কার করিতেছি।

খনন মন্ত্র:
যেন ত্বাং খনতে ব্রহ্মা যেন ত্বাং খনতে ভৃগুঃ।
যেন ইন্দ্রোঽথ বরুণো যেন ত্বামুপচক্রমে ৷
তে নাহং খনয়িষ্যামি মন্ত্রপূতেন পাণিনা।
মা যে পাতে মানিপাতি মাতে ভেজোঽন্যথা ভবেৎ।
অত্রৈব তিষ্ঠ কল্যাণি মন কার্য্যকরী ভব।

প্রণামান্তর উপরে লিখিত "যেন ত্বাং খনতে ব্রহ্মা....." মন্ত্রটি পাঠ পুর্ব্বক বৃক্ষমূল খনন করত:

ওঁ হ্রীঁ ক্ষৌং ফট্ স্বাহা।
অনেন মুলিকাং ছেদয়েং।

এই মন্ত্র জপ করিয়া তরুমূল ছেদন করিবে।
______________________

ইত্যেবং সর্ব্ববিদ্যানাং ষট্‌কর্ম্মাণাং সুসিদ্ধয়ে।
কথিতাঞ্চাত্র যত্নেন মূলিকাগ্রহণং শুভম্ ॥

এরূপে যে প্রকারে ষটকর্ম্মের অন্যান্য বিদ্যাসাধনার্থ মুলিকা গ্রহণ করিলে শুভ হয়, তাহা বিশদরূপে কথিত হইল।

ইতি, ষটকর্ম্মোক্ত মূলিকা গ্রহণ-বিধি সমাপ্ত।

Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url