মোয়াক্কেল বা জ্বীন হাজির করার আমল ও নিয়ম পদ্ধতি

যদি কোন আমেল ব্যক্তি জ্বিন-ভূতের তাছীর দূর করার জন্য অথবা মোয়াক্কেলের মাধ্যমে কিছু হাছেল করিতে মনস্থ করিলে, সে এই আমল করিবে কিনা ভাল ভাবে চিন্তা করিয়া লইবে। এই আমল বা চেল্লা একটি বিপদজনক কাজ বা আমল। এই চিল্লা বা আমল করিতে অনেক নিয়ম পদ্ধতির প্রয়োজন হয়। এই জন্য যাহারা পুরা পুরি না বুঝিয়া এই আমল করে তাহারা অনেক সময় ভীষন বিপদের মধ্যে পড়ে, কাহারও মাথা খারাপ হইয়া যায় এমনকি কেহ কেহ জীবনও হারাইয়া ফেলে। সুতরাং এই রুপ ঝুঁকিপূর্ণ আমল না করাই উত্তম। তথাপি কেহ যদি এই আমল করিতে ইচ্ছা করে তবে পুরাপুরি সতর্ক হইয়া কোন উপযুক্ত ওস্তাদের পরামর্শ গ্রহণ করিবে তারপর আমল কিরবে।

মোয়াক্কেল হাযীর করার প্রথম আমল

যে কোন চন্দ্র মাসের প্রথম ভাগের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার রোজা রাখিতে আরম্ভ করিবে এবং প্রতিদিন ফজরের নামাজের পূর্বে অজু গোছল করিয়া পবিত্র হইয়া নামাজ অন্তে একহাজার বার সূরায় এখলাছ পাঠ করিবে। এর পর প্রতিদনি বাকী চার ওয়াক্ত নামাজের পরেও এক হাজার বার করিয়া সূরায় এখলাছ পাঠ করিবে। এই আমল একাধিক্রমে চৌদ্দদিন করার পরে পঞ্চদশ দিনে যে বৃহস্পতিবার হইবে সেই দিন সন্ধার পরে অজু গোছল করিয়া পোনার হাজার বার সুরায় এখলাছ পাঠ করিবে। তারপর ঐ বৈঠকেই নিম্নের দোয়াটি এক হাজার বার পাঠ করিবে। দোয়াটি এই:

يا حنان انت الذي وسعت كل شيئ ورحمة وعلما - اللهم إني اسئلك أن تسخرني جنو هذه الصورة الشريفة - بحـق من قال لا إله إلا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم

উচ্চারণঃ ইয়া হান্নানু আনতাল্লাজী ওয়াছাঅ'তা কুল্লা শাইয়িন ওয়া রাহমাতাওঁ ওয়া ই’লমা। আল্লাহুম্মা ইন্না আছয়ালুকা আন্ তাছখিরানী জ্বিন্নূ হা জিহিছ ছুরাতিশ্ শারীফাতি, বিহাক্কি মান ক্বালা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাছূলুল্লাহি ছাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ও ছাল্লাম।

এই আমল ঠিকমত আদায় করার পর আল্লাহর অশেষ রহমে তখনই তিনজন মোয়াকেকল গায়েব হইতে উপস্থিত হইবে। তাহারা আসিয়া বলিবে, হে আল্লাহর নেকবান্দা! আপনার উদ্দেশ্য সফল হইয়াছে-একজনে বলিবে আমার নাম হইতেছে আব্দুল ওয়াহেদ, যেহেতু আপনি কুলহু ওয়াল্লাহু আহাদ' আয়াত পাঠ করিয়াছেন, তাই আমি উপস্থিত হইয়াছি। এখন আপনি যাহা করিতে বলিবেন আমি তাহাই করিব। দ্বিতীয় মোয়াক্কেল বলিবে- আমার নাম আব্দুচ্ছামাদ যেহেতু আপনি ‘আল্লাহুচ্ছামাদ’ পাঠ করিয়াছেন। অতএব আমি হাজির হইয়াছি এখন আপনি যেই হালাল খাদ্য চাইবেন তাহাই উপস্থিত করিব। তৃতীয় মোয়াকেকল বলিবে আমার নাম আব্দুল আহাদ, যেহেতু আপনি “কুফূওয়ান আহাদ” পাঠ করিয়াছেন তাই আমি উপস্থিত হইয়াছি। আপনাকে আমি সর্ব প্রকার গোপন রহস্য অবগত করাইব এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদির সন্ধান দিব। এরপর তাহারা চলিয়া যাইবে এবং প্রয়োজনের সময় উপস্থিত হইবে। তখণ তাহাদিগকে দরকার মত ব্যবহার করিবে। প্রকাশ থাকে যে, যাহারা এই আমল করিবে তাহারা অবশ্যই সদা সর্বদা অজুর সহিত থাকিতে হইবে। এবং দৈনিক ফজরের নামাজের পূর্বে ও পরে একশতবার করিয়া যে কোন দূরূদ শরীফ পাঠ করিবে। আর প্রত্যহ সমস্ত দিনের মধ্যে একশত আটবার সূরায়ে এখলাছ পাঠ করিতে হইবে। সদা সর্বদা হালাল খানা খাইতে হইবে, সত্য কথা বলিবে, মিথ্যা কথা বন্ধ করিতে হইবে। কখনো হারাম কার্যাদির নিয়ত করিবে না। আর উপযুক্ত কামেল ওস্তাদের সাহায্যে ও পরামর্শ গ্রহণ করিবে, ইহার অন্যথা করিলে আমল কাজে আসিবে না। আল্লাহুম্মা আমীন।

মোয়াক্কেল হাযীর করার দ্বিতীয় আমল

মোয়াক্কেল হাযির করার নিয়াত করিলে পাক পবিত্র হইয়া রাত্রে এশার নামাজের পরে দৈনিক চল্লিশ দিন পর্যন্ত জায়নামাজে বসিয়া একাধারে তিনহাজার একশত পচিশবার সূরায় এখলাছ পাঠ করিবে। এইভাবে চল্লিশ দিন পাঠ করিবে, মোট এক লক্ষ পঁচিশহাজার বার পাঠ করা হইবে। এই আমল করার সময় কোন প্রকার মাছ, তরকারী বা গোস্ত “ইত্যাদি খাইবে না।

শুধু খালি সাদা ভাত ও আটার রুটি নেমক ব্যতীত খাইবে। এই প্রকার চল্লিশদিন পর্যন্ত একাধারে আমল করিলে শেষ দিন মোয়াকেকল হাজির হইবে। এবং তাহার নিকট যাহা কিছু চাহিবে এবং সে যাহা ওয়াদা করিবে তাহা সকাল বেলা নিদ্রা ভঙ্গের পরে বালিশের নীচে পাওয়া যাইবে। এই আমল সর্বদা জারী রাখিলে মোয়াকেকল সর্ব সময়ের জন্য বাধ্যগত থাকিবে এবং তাহাকে যাহা হুকুম করিবে তাহা শুনিবে। তবে নাজায়েজ কোন কাজের হুকুম করিবে না, তাহাতে হীতে বিপরীত হইতে পারে এবং নিজের ক্ষতির কারণ হইবে।

মোয়াকেকল হাযীর করার তৃতীয় আমল

প্রকাশ থাকে যে, এই আমল আরম্ভ করার আগে যেই স্থানে বসিয়া আমল করিবে সেখানে আগর বাতি ও লোবান, ধুপ, চন্দন ইত্যাদি জ্বালাইয়া খুশবুময় করিবে। আর নিজে উত্তম আতর ব্যবহার করিয়া খালেছ নিয়াতে এই আমল ঠিকমত আদায় করিলে আমল শেষে একজন নারী বেশী মেয়াকেকল আসিয়া হাজির হইবে এবং বলিবে আমাকে ডাকিয়াছ কেন? তখন খুব সাহসের সহিত ধর্য্য ধারণ করিয়া তাহাকে মা সম্বোধন করিবে এবং প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলিবে। তাহাতে সে খুশী হইবে এবং প্রয়োজনের সময় উপস্থিত হইয়া যাহা করিতে বলিবে তাহা পালন করিবে। এই সময় সাহস ও ধৈয্য ধারণ না করিতে পারিলে নিজ জীবনের ক্ষতির বা বিনাশের সম্ভাবনা থাকে। খবরদার মোয়াকেকল দ্বারা কোন সময় অন্যায় ও হারাম কার্য্যাদির আশা করিবেনা ইহাতে ক্ষতি হইবে।

আমলের নিয়ম: এই আমল একাধারে পর পর তিন দিন পর্যন্ত করিতে হইবে। চন্দ্র মাসের শুক্ল পক্ষের প্রথম বুধবার দিবাগত রাত্রে গোছল করিয়া পবিত্র জামা কাপড় পরিধান করিয়া ভাল আতর ব্যবহার করিয়া যেই স্থানে বসিয়া আমল করিবে তাহার চতুরপার্শে মাটির উপর একটি গোলাকার বৃত্ত্ব আকিবে এবং আকিবার সময় নিম্নের দোয়া পাঠ করিবে। দোয়া এই:

قفل كردم لا إله إلا الله - مهر کردم بنام محمد رسول الله -

উচ্চারণঃ কুফ্ল করদাম লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, মহর করদাম বনামে মুহাম্মাদুর রাছুলুল্লাহি।

তারপর এগার বার দুরূন শরীফ পাঠ করিয়া নিম্নের দোয়াটি একশত বার পাঠ করিয়া পুনঃ এগার বার দুরূদ শরীফ পাঠ করিবে। দোয়াটি এই:

يا ذكي الطاهر من كل انة بقدسه

উচ্চারণঃ ইয়া যাকিউজ্জ্বাহিরু মিন কুল্লি আফাতিন বিক্বাদছিহী। —দোয়াটি শত বার পাঠ করার পরে নিম্নের দোয়াটি একবার পাঠ করিবে। দোয়াটি এই:

أميت بهت سوا هانه بدوح سرسند وفي حضر باذن الله بحق لا إله إلا الله محمد رسول الله

উচ্চারণঃ ঊমীতু বিহাত ছেওয়াহানাহু বুদূহুন ছারছান্দ ওয়াফী হাজের বিইজনিল্লাহি, বিহাকেক লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাছুলুল্লাহি। এই প্রকারে দৈনিক এক হাজার বার পাঠ করিবে। তিন দিনে মোট তিন হাজার বার পাঠ করিবে। আল্লাহ তায়ালার রহমতে নেক মনবাসনা পূর্ণ হইবে।

Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url